‘ঝুঁকিটা আমিই নিয়েছি, আর কেউ নয়’
এ মাসেই সত্যজিৎ রায় সৃষ্ট বাংলা সাহিত্যের অন্যতম বর্ণময় ও জনপ্রিয় চরিত্র লালমোহন গাঙ্গুলি ওরফে জটায়ুর ভূমিকায় আত্মপ্রকাশ করতে চলেছেন তিনি। তার আগে আত্মবিশ্বাসের সুর শোনা গেল পরিচালক-অভিনেতা অভিজিৎ গুহর গলায়। সন্দীপ রায় পরিচালিত ‘হত্যাপুরী’ ছবিতে প্রথমবার এই চরিত্রে দেখা যাবে তাঁকে। ট্রেলার মুক্তির দিন বড়পর্দার নতুন জটায়ু কথা বললেন রেডিওবাংলানেট-এর সঙ্গে।
সমালোচনা হবে এটা জানা কথা। তবু তা নিয়ে আপনি মাথা ঘামাচ্ছেন না, তাই তো?
যাঁরা নতুন জটায়ু হিসেবে আমাকে মেনে নিতে পারবেন না, সেটা তাঁদের সমস্যা, আমার নয়। ঘরের কোণে বসে ফেসবুকে এটা হয়নি ওটা হয়নি লিখতে সময় লাগে না। আমি তো দিনের পর দিন চরিত্রটা নিয়ে ভেবেছি, সেই ভূমিকায় অভিনয় করেছি। ঝুঁকিটা আমিই নিয়েছি, আর কেউ নয়। কাজেই কারও দু’লাইনের সমালোচনায় আমার কিছু আসে যায় না।
জটায়ু হয়ে উঠতে কী-কী করা প্রয়োজন?
সবার আগে জটায়ুকে ভালোবাসা ও ভালোলাগা প্রয়োজন। সত্যজিৎ রায়কে বোঝা প্রয়োজন, যেটার চর্চা অনেক আগে থেকেই আমার ছিল। আমার ধারণা সব বাঙালিই কমবেশি তেমন। যেসব অভিনেতাকে আমরা জটায়ু করতে দেখেছি, তাঁরা প্রায় সকলেই আইকনিক। বড়পর্দা এবং টেলিভিশন মিলিয়েই বলছি। আমার সৌভাগ্য আমি এই সব অভিনেতার সঙ্গে কাজ করেছি, খুব কাছ থেকে দেখেছি। বিশেষ করে রবি ঘোষের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক খুবই ভালো ছিল। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা দিয়েছি। সেখানে তাঁকে জটায়ু হিসেবে আলাদা করে তো দেখা নয়, অভিনেতা হিসেবেই দেখেছি। অবচেতনে সেই শিক্ষাগুলো থেকে গেছে। সেটা শুধু এই ছবির জন্য নয়, জীবনের বহু ক্ষেত্রে কাজে লেগেছে।
জটায়ু চরিত্রে নির্বাচিত হওয়ার পর আর কোনও ফেলুদার ছবি দেখলেন?
না। শুধু ‘হত্যাপুরী’ উপন্যাসটা পড়েছি চিত্রনাট্য পড়ার আগে।
আরও পড়ুন: চোখের জল অভিনয় হতে পারে না, দাবি রচনার
জটায়ুর ম্যানারিজ়ম কীভাবে তৈরি করলেন?
ওটাকে ম্যানারিজ়ম বলে কিনা আমি জানি না। আমি যা করেছি সেটা আমার মতো করেই কিছু একটা। সেটা কাউকে দেখে নকল নয়। আমি যেভাবে চরিত্রটাকে বুঝেছি, সেভাবেই করেছি।
আপনি প্রথমে পরিচালক, পরে অভিনেতা। আপনার দীর্ঘদিনের পর্যবেক্ষণে জটায়ু চরিত্রটিকে কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
জটায়ু একজন সরল মানুষ। তিনি সাধারণ, ছাপোষা একজন বাঙালি যিনি নিজের মতো করে অনেক কিছু জানেন আবার ফেলুদার মতো খুব স্মার্ট সবজান্তাও নন। জটায়ুর চরিত্রের মধ্যে দিয়ে সত্যজিৎ রায় পাঠককে অনেক কিছু শিখিয়ে গেছেন। সেই কারণেই জটায়ুর প্রয়োজন ছিল। তোপসে আর জটায়ুকে বোঝাবার মধ্যে দিয়েই পাঠককে সারাজীবনের শিক্ষা দিয়ে গেছেন সত্যজিৎ। আমি সেইভাবেই এক সরল, সাধারণ বাঙালি লেখকের চরিত্রকে রূপ দিতে চেয়েছি।
ছবি: গার্গী মজুমদার