মীরজাফরের হত্যাকারী থেকে মৃণাল সেন, আগে নিজের যোগ্যতা যাচাই করতে চান চঞ্চল

অল্প কিছুদিন হলো এপার বাংলার দর্শক বাংলাদেশের অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরীর নামের সঙ্গে পরিচিত হয়েছে। প্রায় একই সঙ্গে ‘কারাগার’ সিরিজ়ের মুক্তি ও ‘হাওয়া’ ছবির গানের মধ্যে দিয়ে এক নতুন তারকাকে আবিষ্কার করেছে পশ্চিমবঙ্গের আম বাঙালি। অভিনয়ের বাইরে সাতে পাঁচে না থাকা, সচেতনভাবে যে কোনও বিষয়েই কম কথা বলা, ফুটবলপ্রেমী মানুষটি একটু যেন মনক্ষুণ্ণ হয়েছেন বিশ্বকাপ ফুটবলের জন্য ‘কারাগার ২’-এর মুক্তি পিছিয়ে যাওয়ায়। সত্যিই কি তাই? রেডিওবাংলানেট-এর সঙ্গে কথা বললেন চঞ্চল।

এক সপ্তাহ পিছিয়ে গেল ‘কারাগার ২’-এর মুক্তি, তাও আবার বিশ্বকাপের কারণে। ব্যক্তিগতভাবে কি একটু খারাপ লাগছে কোথাও? 

যদিও আমি নিজে ফুটবলপ্রেমী, তাই একদিকে যেমন মনে হচ্ছে প্রযোজনা সংস্থা ও পরিচালক ঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছেন, আবার এটাও সত্যি যে দর্শক ‘কারাগার-২’-এর জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন। আমি নিজেও রয়েছি। দর্শকের সঙ্গে আমি নিজেও তো দেখব। কাজেই সেখান থেকে মনে হচ্ছে দেরিটা না হলেই বোধহয় ভালো হতো। 



ট্রেলার দেখে মনে হলো আপনি দ্বৈত চরিত্রে রয়েছেন। নাকি মীরজাফরের খুনীর আড়ালে এই মানুষটার অন্য কোনও পরিচয় রয়েছে? 

‘কারাগার’-এর প্রথম সিজ়ন দেখে দর্শক যেভাবে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন তাতে আমরা অভিভূত। তবে ট্রেলারে যা দেখানো হয়েছে তা দ্বিতীয় পর্বের গল্পের খুব সামান্যই। দুটো সম্পূর্ণ ভিন্ন রূপে আমাকে দেখা যাবে এই সিজ়নে। এর বেশি কিছু এখনই বলব না। তবে গল্পে এমন কিছু চমক রয়েছে যা দর্শককে ভাবতে বাধ্য করবে।  

কিছুদিন আগে ‘হাওয়া’ নিয়ে প্রবল উন্মাদনা, আবার এখন ‘কারাগার ২’ নিয়ে এত আগ্রহ। এপারের দর্শকের মধ্যে এই উত্তেজনা দেখতে কেমন লাগছে? 

আমি অভিনয় করছি ২৫-২৬ বছর হতে চলল। আমাদের, মানে অভিনেতাদের, প্রতিদিন একটাই  উদ্দেশ্য থাকে। কাজটা যাতে ভালো হয়। আমি আমার মতো করে কাজ করে যাই, তার মধ্যে কোনও কাজ যদি দর্শকের আলাদাভাবে ভালো লেগে যায়, সকলে প্রশংসা করেন, তখন সেখান থেকে উৎসাহ পাই, এটুকুই আমার প্রাপ্তি। এতদিন ধরে অভিনয় করছি, আমার আগেও বাংলাদেশে বহু অভিনেতা ভালো কাজ করেছেন। তবে প্রযুক্তির অভাবে সেগুলো এখানে এসে পৌঁছয়নি। আমাদের কাজগুলো এখন ইউটিউব বা ওটিটি প্ল্যাটফর্মের কল্যাণে এখানে আসছে, সকলে দেখছেন, আমাদের ভালোবাসা দিচ্ছেন, এটা অবশ্যই ভালো লাগছে। 

আরও পড়ুন: শেষ দৃশ্যে ভাঙা হোল্ডার, সত্যজিতের জয়জয়কার

এপারের মতো ওপার বাংলাতেও কি ‘কারাগার ২’ নিয়ে আগ্রহ ছিল? বাংলাদেশের দর্শক, যারা আপনার কাজ নিয়মিত দেখেন, তাদের কী মত ‘কারাগার’ সম্পর্কে? 

পশ্চিমবঙ্গের দর্শক যেমন ‘কারাগার ২’-এর মুক্তি নিয়ে উন্মুখ হয়ে ছিল, তেমন ওখানেও খুব উন্মাদনা ছিল সিরিজ়টা নিয়ে। অনেকেই জানতে চেয়েছে দ্বিতীয় সিজ়ন কবে আসবে। তবে এটাও ঠিক যে দ্বিতীয় সিজ়ন এই বছরে আনার কথা ছিল না। সামনের বছর আসবে এমনটাই কথা ছিল। তবু দুই বাংলার দর্শকের, মানে আপনাদের চাহিদাতেই ‘কারাগার ২’ এত তাড়াতাড়ি মুক্তি পাচ্ছে। 

‘হাওয়া’ চঞ্চল চৌধুরীর পালে কতটা হাওয়া দিল?

আমার কিন্তু কোনও পাল নেই। আমার কাজ শুধু অভিনয় করে যাওয়া। যেভাবে নতুন-নতুন চরিত্র আসবে আমি করে যাব। তারপর দর্শকের ভালো লাগলে সেটা বাড়তি পাওনা। এত মানুষ যে ভালোবাসছেন সেটা পরের কাজটা করতে আমাকে উৎসাহ যোগায়, এটাই। এছাড়া আমার আর কোন পালও নেই। আর পাল রেখে কী লাভ বলুন। কতদিন থাকে না থাকে তার কোনও ঠিক আছে নাকি (হাসি)। তাই যতক্ষণ কাজ করছি ততক্ষণই আছি। 

আরও পড়ুন: শেষের সেদিন, উপস্থিত ছিলেন শুধু মহেশ ও ড্যানি

‘হাওয়া’ ছবিতে আপনার গাওয়া গান প্রবল জনপ্রিয় হয়েছে। এত ভালো গানের গলা আপনার, গান নিয়ে একটা আলাদা কেরিয়ার করার কথা ভাবছেন কি এবার? 

না, একেবারেই নয়। গানটা গেয়েছিলাম অভিনয়ের প্রয়োজনে। তার বেশি গান নিয়ে আমার কোনও ভাবনা নেই। আমি পেশাদার গায়ক নই, হওয়ার কোনও যোগ্যতাও নেই। অনেক পরিশ্রম করে, সাধনা করে একজন সেই জায়গায় পৌঁছতে পারে। সেখানে একটা মাত্র গান গেয়ে নিজেকে গায়ক হিসেবে দাবি করব, সে হয় না। আজকাল তো সকলেই সবকিছু জানে। তবে আসল কথা হলো, এক মানুষ সবকিছু হতে পারে না। অভিনয় করার জন্য একটু সুর তাল লয়ের দরকার হয়। আমি শুধু সেটুকুই যোগ করেছি। তার বেশি কিছু করার যোগ্যতাই নেই আমার। 



শোনা যাচ্ছে সৃজিত মুখোপাধ্যায় তাঁর ‘পদাতিক’ ছবিতে আপনাকে মৃণাল সেনের চরিত্র করার প্রস্তাব দিয়েছেন। প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছেন কি? 

সৃজিত প্রস্তাব দিয়েছে। তবে অত বড় একটা মানুষের চরিত্রে কাজ করার আগে নিজের যোগ্যতা যাচাই করে দেখতে হবে। আদৌ পারব কিনা জানি না। আমাকে ভেবে দেখতে হবে। আলোচনা চলছে কাজটা নিয়ে। তবে শুধু করতে হবে বলে এরকম একটা চরিত্র তো করা যায় না। যদি মনে হয় নিজেকে চরিত্রটার জন্য প্রস্তুত করতে পেরেছি তাহলেই করব, না হলে নয়।

পরবর্তীতে কী ধরণের চরিত্রে দর্শক আপনাকে দেখতে পাবে? ‘কারাগার’-এর পর কী?

এর পর কারাগার থেকে মুক্তি (হেসে)। এই মুহূর্তে আর কিছুই নয়। আর চরিত্র যেমনই আসুক আমি আসলে যে কোনওভাবেই হোক বাংলায় কাজ করতে চাই। সেটা ওটিটিতে হলে দুই বাংলার মানুষ দেখতে পাবেন। আমার ভাবতে ভালো লাগে সারা পৃথিবীতে বাংলা ভাষা কতটা উঠল বা বাঙালি কতটা উন্নতি করল, সেটা নিয়েই আমরা গর্ব করব। দুই বাংলা যদি আরও বেশি মিলেমিশে কাজ করতে পারত তাহলে বাংলার আসন আজ আরও অনেক উঁচুতে থাকত। এতদিন না হলেও এখন যে করা যাচ্ছে, সেটা অবশ্যই আশার কথা। 

ছবি: গার্গী মজুমদার




Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Swati

Editor of a popular Bengali web-magazine. Writer, travel freak, nature addict, music lover, foody, crazy about hill stations and a dancer by passion. Burns the midnight oil to pen her prose. Also a poetry enthusiast.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *