‘উৎসব এর পরে’ ঋতুপর্ণ ট্রিবিউটে কৌশিক, ঋতব্রত
RBN Web Desk: সত্যজিৎ রায়ের ছবি ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’-এর প্রথম দৃশকে ট্রিবিউট দিয়ে শুরু হয়েছিল পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষের ছবি ‘উৎসব’। এবার সেই ‘উৎসব’কে ট্রিবিউট দিতে চলেছে পরিচালক অভিনন্দন দত্তের ওয়েব সিরিজ় ‘উৎসব এর পরে’। ঋতুপর্ণর ‘উৎসব’ ছবিটি থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই অভিনন্দন এই সিরিজ়ের গল্প লেখেন। ‘উৎসব এর পরে’র অন্যতম কেন্দ্রীয় চরিত্রে থাকছেন কৌশিক সেন ও ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়। এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে রয়েছেন অবন্তী দত্ত, সেঁজুতি মুখোপাধ্যায়, সত্যম ভট্টাচার্য ও ঐশ্বর্য সেন।
মল্লিকবাড়ির পুজোকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে ‘উৎসব এর পরে’। প্রবাসী উৎপলেন্দ্র বেশ কয়েক বছর পর স্ত্রী পাপিয়া (অবন্তী) ও মেয়ে সোহিনীকে (ঐশ্বর্য) নিয়ে বাড়ির পুজোয় যোগ দিতে এসেছ। বনেদি বাড়ির পুজোর খুঁটিনাটিকে সোহিনী ক্যামেরাবন্দী করে রাখতে চায়। কলকাতায় তার তুতো ভাই ঋক (ঋতব্রত) ও ঋভুর (সত্যম) সঙ্গে তার বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। তবে শুধু পুজোর আনন্দ নয়, মল্লিকবাড়ির আনাচে কানাচে ঘোরাফেরা করে এ বাড়ির ইতিহাস। বাইরের দুনিয়ায় রাজনৈতিক পালাবদলের সঙ্গে-সঙ্গে বদলেছে এ বাড়ির সদস্যদের চিন্তাভাবনাও। বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠদের মুখে স্বদেশী আন্দোলনের গল্প শুনতে বসে অন্য সদস্যদের মধ্যে নিজস্ব রাজনৈতিক মতাদর্শের সংঘাত গড়ে ওঠে। এই আদর্শের লড়াইয়ের মাঝে কী নষ্ট হবে পুজোর আনন্দ? ঋকের পরিচালক হওয়ার স্বপ্ন কী কোনওদিন সত্যি হবে? মল্লিকবাড়ির অন্দরের সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দেবে আট পর্বের ‘উৎসবের পরে’।
আরও পড়ুন: সব কান্নার শব্দ হয় না, বেজে উঠল পটদীপ
‘উৎসব’-এর মতো করে নিজের ছবির গল্প ভাবার পেছনে কারণ কী? উত্তরে অভিনন্দন রেডিওবাংলানেট-কে জানালেন, “২০০০ সালে যখন ‘উৎসব’ মুক্তি পায় তখন আমি কলেজে পড়ি। ছবিটা আমাকে ভীষণভাবে উদ্বুদ্ধ করেছিল। আমি নিজে হাটখোলার দত্ত পরিবারের ছেলে। আমাদের মূল বাড়িতে ছোট থেকেই পুজো দেখে আসছি। বনেদি বাড়ির পুজোকে ঘিরে সদস্যদের যে মানসিক টানাপোড়েন এই ছবির বিষয় ছিল, সেটার সঙ্গে আমি রিলেট করতে পেরেছিলাম। ছবিটা দেখে এসে কিছুদিনের মধ্যে আমি নিজের মতো করে আর এক পুজোবাড়ির গল্প লিখে ফেলি।”
তবে ঋতুপর্ণর ছবির সঙ্গে এই সিরিজ়ের চরিত্রের কোনও মিল নেই বলে জানালেন পরিচালক। “কিছু ঘটনায় মিল থাকবে, সেটা যারা ‘উৎসব’ দেখেছেন তাঁরা বুঝতে পারবেন। আমার সিরিজ়ের কাহিনীটা ২০১১ সালের। বাড়ির তিন প্রজন্মের রাজনৈতিক চিন্তাধারা এই ছবির মূল বিষয়। কোন বিশেষ রাজনৈতিক দল নয়, তবে আদর্শের কথা থাকবে। পাশাপাশি অন্যান্য ঘটনাক্রম সিরিজ়টিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।”
করোনা পরিস্থিতির করাণে কোথাও গিয়ে শুট করা এখন সম্ভব নয়। তাই এই সময়ে দাঁড়িয়ে একটা বাড়ির ভেতরের গল্প বলেই এমন একটা কাহিনী বেছে নিয়েছেন অভিনন্দন।
অপর্ণা সেনের ‘ঘরে বাইরে আজ’-এর পর আবারও রাজনৈতিকভাবে সচেতন এক চরিত্রে অভিনয় করতে চলেছেন ঋতব্রত। “ঋক খুব পরিণতমনস্ক কিন্তু অন্তর্মুখী একটা চরিত্র,” জানালেন ঋতব্রত। “বনেদি বাড়িতে বড় হলেও তার স্বাধীন রাজনৈতিক আদর্শ রয়েছে। ঋকের মনে হয় নিজেদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি নিয়ে আগের প্রজন্মের এই যে গর্ব, তার বেশিরভাগটাই ঠুনকো। বাড়ির বড়দের সঙ্গে এই নিয়ে তার মনোমালিন্য হয়। বাইরে থেকে সম্পর্কগুলোকে দেখতে খুব সুন্দর লাগলেও আসলে ভেতরে-ভেতরে অজস্র বিরোধ রয়েছে। অভিনন্দনদার সঙ্গে আগেও কাজ করেছি। তবে ওর পরিচালনায় এই প্রথমবার কাজ করব, সেটা নিয়ে আমি বেশ উত্তেজিত। এই সিরিজ়ে আমার লুকটাও একেবারে নতুন, এরকম বড় চুল আগে কোন ছবিতে আমার ছিল না।”
আরও পড়ুন: ফাগুন লেগেছে বনে বনে
রাজনৈতিক সচেতনতা সব চরিত্রের মধ্যেই থাকে বলে মনে করেন কৌশিক। “তবে এখানে যেভাবে চরিত্রগুলো তৈরি করা হয়েছে, সেখানে বিশেষভাবে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার কথাও উঠে আসছে। সেসব দিক থেকে উৎপলেন্দ্রকে আমার বেশ ইন্টারেস্টিং লেগেছে। অভিনন্দনের বেশ কিছু কাজ দেখেছি। ‘ঘরে বাইরে আজ’-এ ও অ্যাসিস্ট করেছিল। ওর পরিচালনায় কাজ করার আগ্রহ ছিল। তাছাড়া থিয়েটার জগতের অনেকে রয়েছেন এই সিরিজ়ে। ঋতব্রত তো আছেই,” বললেন কৌশিক।
‘উৎসব এর পরে’র অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন বিমল চক্রবর্তী, ঈশানী সেনগুপ্ত, শ্রেয়া ভট্টাচার্য, সত্ৰাজিৎ সরকার, দেবযানী দত্ত, তপতী মুনশি, জীবন সাহা, পারমিতা মুখোপাধ্যায়, অর্পন গড়াই ও মিতালি দাস। সঙ্গীতের দায়িত্বে রয়েছেন ময়ূখ-মৈনাক। চিত্রগ্রহণে থাকছেন মৃন্ময় নন্দী, সম্পাদনায় স্বর্ণাভ চক্রবর্তী।
পুজোর সময় আড্ডাটাইমসে মুক্তি পাবে ‘উৎসব এর পরে’।