টাইম লুপে আটকে পড়া মানুষের গল্প ‘কালচক্র’
কলকাতা: টাইম লুপ অর্থাৎ সময়ের অন্তর্জাল। কথাটা শুনতে যতটা জটিল তার চেয়েও বেশি জটিল এই টাইম লুপে আটকে পড়া মানুষগুলো। তাদের মানসিক অবস্থার আকস্মিক পরিবর্তন, স্থান কাল পাত্র অনুযায়ী চিন্তন ও মননের যে এক অসীম যুদ্ধ, তার হদিস টাইম লুপে জড়িত থাকা মানুষটি সহ তার আশেপাশের সবার সঙ্গে এক অদ্ভুত সমীকরণে বাঁধা থাকে।
বর্তমানে বিদেশি ভাষায় টাইম লুপ নিয়ে বহু ছবি তৈরি হলেও বাংলায় সেভাবে কাজ হয়নি। তাই এই বিষয়ের ওপর স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি ‘কালচক্র’ বানিয়ে সাহসিকতার পরিচয় দিলেন পরিচালক অনুপ সমাদ্দার। ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন হৃতজিৎ চট্টোপাধ্যায় ও জয়শ্রী খাঁড়া। অন্য দুটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে রয়েছেন শ্রেয়া চট্টোপাধ্যায় ও ববি মন্ডল। সম্প্রতি এই ছবির একটি বিশেষ প্রদর্শনের আয়োজন করা হল শহরের এক প্রেক্ষাগৃহে। উপস্থিত ছিলেন এই ছবির সঙ্গে যুক্ত কলাকুশলীরা ও বিশিষ্ট অভিনেত্রী আনামিকা সাহা।
‘কালচক্র’ একটি বিপরীতমুখী পূর্বাভাসের গল্প। কিন্তু কি এই বিপরীতমুখী পূর্বাভাস?
এটি একটি পূর্বনির্ধারিত কূটাভাস বা সময়ের এমন এক পরিভ্রমণের বিপরীতমুখী অবস্থান যেখানে ভ্রমণকারী বর্তমানে থেকেও তার অতীতে উপস্থিত। অর্থাৎ সে নিজে তার অতীতের কৃতকর্ম দেখেও সেটা বদলাতে পারছে না। এই পূর্বাভাসের একটি ঘটনা অন্য ঘটনাগুলির মধ্যে অন্যতম, যা প্রথম উল্লিখিত ঘটনাগুলির কারণগুলির মধ্যে একটি। সরল ভাবে বলতে গেলে, ঘটনার মধ্যে ঘটনা যার স্বাভাবিক বুদ্ধিতে কোনও ব্যাখ্যা করা যায় না। অথচ সেই ঘটনায় জড়িত মানুষটি চাইলেও তা এড়িয়ে যেতে পারে না। বারবার এই ঘটনা ঠিক চক্রের মত তার জীবনের প্রতিটি পদে জড়িয়ে থাকে।
নোবেলের তৃতীয় স্থান পাওয়া নিয়ে ক্ষোভ বাংলাদেশে
এমনই এক অভিশপ্ত চক্রের শিকার নীল (হৃতজিৎ) ও জয়া (জয়শ্রী)। ছবিতে নীলের ছয়টি স্বত্তার মাঝে জড়িয়ে যায় জয়া ও তার পরিবার। হতে থাকে একের পর এক খুন। কিন্তু কে কখন কিভাবে খুন করছে তার কোনও ব্যাখ্যা নেই। নীল মানসিক বিকারগ্রস্ত, না কি প্রত্যেকটা খুনই তার সুস্থ মস্তিষ্কের কোনও পরিকল্পনা তা বুঝতে পারে না জয়া। নীলের আকস্মিক এই পরিবর্তন মানতে পারে না সে।
এদিকে নীলের যমজ ভাই নীলেশ অ্যান্টিসোশ্যাল ডিসঅর্ডারে ভুগছে। তার উপস্থিতিতে খুন হয়ে যায় জয়ার মা (ববি)। পুরো গল্পটা যার চোখ দিয়ে দেখানো হল, সে এই টাইম লুপে ফেঁসে থাকা নীল। প্রত্যেকবার এক একটি টাইম লুপের শেষে নীল মারা যায় আবার পরেরটিতে বেঁচে ওঠে। অর্থাৎ নীলের মৃত্যু নেই, সে অবিনশ্বর।
‘কালচক্র’র কাহিনীকারও জয়শ্রী। জানালেন, “এই ছবিটার কথা প্রথম মাথায় আসে বিদেশি ছবি ‘দ্য ট্রায়ঙ্গল’ দেখে। ভারতে টাইম লুপ নিয়ে খুব বেশি ছবি হয়নি, বা হলেও সেটা আমাদের সামনে আসেনি। তাই এই ধরণের একটি ভাবনা নিয়ে ছবি করলাম।”
তবে ছবির গল্প যে অনেকেরই বুঝতে অসুবিধা হয়েছে, সেটা মেনে নিচ্ছেন তিনি। “এটা একেবারেই একটি পরীক্ষামূলক উদ্যোগ ছিল। সবাই ছবিটা বুঝবে, সেটা আমরা আশা করিনি। শীঘ্রই ‘কালচক্র’র সিক্যুয়েল আনার চেষ্টা করছি আমরা। আশা করি সেগুলো দেখলে সবাই গল্পটা বুঝতে পারবেন,” জানালেন জয়শ্রী।