মাদকাসক্ত মানুষদের নিয়ে নাইজেলের ‘বেওয়ারিশ’

কলকাতা: মাদকাসক্ত মানুষদের নিয়ে নতুন নাটক মঞ্চস্থ করতে চলেছেন অভিনেতা নাইজেল আকারা ও তাঁর ‘কোলাহল’ নাট্যদল। ‘বেওয়ারিশ’ নামের এই নাটকটি লিখেছেন মলয় বন্দ্যোপাধ্যায়। অল্যান রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার ও ‘কোলাহল’-এর যৌথ উদ্যোগে এই নাটক পরিচালনা করছেন অভিজিৎ অনুকামীন। নাটকের বিভিন্ন চরিত্রের শিল্পীরা একসময় মাদকাসক্ত ছিলেন।

এই প্রসঙ্গে রেডিওবাংলানেট-কে নাইজেল জানালেন, “পেশাদার অভিনেতাদের নিয়ে তো অনেকেই কাজ করেন। আমি নিজে মঞ্চ থেকে অনেক কিছু পেয়েছি। আমার শুরুটাই তো মঞ্চ দিয়ে। যার সবকিছু হারিয়ে গেছে, যাকে সমাজ সহজে মেনে নিতে চায় না, কেউ সন্মান দেয় না, সে যখন মঞ্চে দাঁড়িয়ে অভিনয় করে প্রশংসা পায়, সেটা তার কাছে একটা বিরাট পাওয়া। আমি নিজে এই অবস্থার মধ্যে দিয়ে গিয়েছি বলেই জানি।”

এর আগে রূপান্তরকামীদের নিয়ে কাজ করেছেন নাইজেল। যৌনকর্মীদের নিয়েও মঞ্চস্থ করেছেন ‘ঝরাফুলের রূপকথা’। সেই নাটকটি করার সময় অল্যান রিহ্যাবিলিটেশন থেকে একজন এসেছিলেন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে। তিনি নাইজেলকে জানান যে মাদকাসক্ত মানুষদের অবস্থা খুবই করুণ। নেশার জন্য বাড়িতে চুরি, পুলিশের মার খাওয়া তাঁদের নিত্যদিনের ব্যাপার। পাড়াতেও তাঁরা মিশতে পারেন না।

স্মরণে কিশোর, ২৭ বছর পর শহরে আসছেন লীনা

“তবে কোনও রিহ্যাবেই কেউ নিজের ইচ্ছেতে আসেন না,” জানালেন নাইজেল। “কাউকে হয়ত বাড়ির লোকে দিয়ে যায়, কেউ বা পুলিশের সঙ্গে আসে। সঙ্গে থাকে মারাত্মক মুড সুইং আর নেশা ছাড়ার উইথড্রয়াল সিম্পটম। শারীরিক ও মানসিক দুরকম সমস্যাই চলে এই সময়। এরকম অবস্থায় এদের দিয়ে অভিনয় কীভাবে করানো যাবে সেটা আমার কাছে একটা চ্যালেঞ্জ ছিল।”

‘বেওয়ারিশ’ নিয়ে কাজ শুরু করার আগে দু’দিনের একটা থিয়েটার ওয়ার্কশপ করেছিলেন নাইজেল। নানারকম মানসিক থেরাপির দ্বারা এই সব মাদকাসক্ত মানুষদের বোঝানোটাই ছিল প্রথম কাজ। প্রথমে ৫৫ জনকে নিয়ে শুরু করেন। সেখান থেকে কয়েকজনকে পেলেন যারা এই কাজটা করতে ইচ্ছুক। তবে সাত-আট মাস ওয়ার্কশপ চলার পরে অনেকেই কাজ না করার সিদ্ধান্ত নেন। আবার অসুস্থ হওয়া সত্বেও কাজ করেছেন অনেকে। “শেষে এই যে ১২-১৩ জনকে আমরা পেয়েছি এরা সকলে হয়ত এখন রিহ্যাবে থাকেন না। কেউ কেউ সুস্থ হয়ে বাড়ি চলে গেছেন। আবার কেউ হয়ত নাটক করছেন না, প্রোডাকশনের অন্য কোনও কাজ করছেন। এদের মধ্যে থেকেই আমরা একজনকে হিসাবরক্ষকের দায়িত্বও দিয়েছি,” জানালেন নাইজেল।

টেলিভিশনে জনপ্রিয়তা পাওয়া এক ধরণের অভিশাপ: মানালি

‘বেওয়ারিশ’ আদতে একটি রাজনৈতিক প্রহসন। একজন চোর, সে একদিন একটা মর্গে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। ইতিমধ্যে অ্যাক্সিডেন্টে মৃত ছ’টা বেওয়ারিশ লাশ সেই মর্গে এসে পৌঁছয়। এই মৃতদেহগুলো তখনও শনাক্ত হয়নি, তাই তাদের মর্গে রাখা হয়েছে। এরা নিজেদের মধ্যে কথা বলতে থাকে। এক সময় সেই চোর ঘুম ভেঙে এদের দেখে ভয়ে পালাতে যায়। সেই মৃতদেহগুলি  তখন চোরকে বলে বাইরে গিয়ে ফিরে এসে তাদের শনাক্ত করতে, না হলে তাদের অন্ত্যেষ্টি হবে না। এই মৃতদেহগুলোর দাবী যে তারা তখনও ভূত হয়নি। কারোর ঘাড় মটকাবার লাইসেন্স তখনও তারা পায়নি। এইভাবে চলতে থাকে ‘বেওয়ারিশ’, উঠে আসে নানারকম রাজনৈতিক প্রসঙ্গ।

এই নাটকের ভাবনা ও চিত্রনাট্যের কাজে যুক্ত ছিলেন নাইজেল। উপস্থিত ছিলেন ওয়ার্কশপগুলোতেও।



“যখন যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজ করেছিলাম তারা বলেছিল ‘এসব করে কি লাভ, এর চেয়ে ঘরের দরজায় হুড়কো লাগালে আমরা বেশি টাকা পাব।’ তখন আমি তাদের বলি, ‘যে কাজটা তোমরা করছ সেটা করে হয়ত টাকা পাবে কিন্তু সেটা তোমাকে কিছু ফিরিয়ে দেবে না। এটা করলে তোমরা মানুষের সন্মান পাবে। সেটা সারাজীবন তোমার সঙ্গে থেকে যাবে।’ সেই শোগুলো হয়ে গেছে অনেকদিন আগে, এখনও কিন্তু ওরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। এইখানেই মনে হয় আমরা কিছু মানুষকে অন্তত ফেরাতে পারছি,” বললেন নাইজেল।  

আগামীকাল শরৎ সদনে মঞ্চস্থ হবে ‘বেওয়ারিশ’।

Amazon Obhijaan



Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *