আবর্জনার স্তূপ থেকে পারকাশন, ট্যাংরার সঞ্জয়ের সংগ্রাম এবার বড়পর্দায়

কলকাতা: গোটা শহরের যাবতীয় অপ্রয়োজনীয়, অবাঞ্ছিত জিনিস রোজ এসে জমা হয় ট্যাংরা অঞ্চলে। সেই আবর্জনার স্তূপ ঘেঁটে প্লাস্টিকের জলের বোতল, রঙের ফাঁকা ড্রাম, ক্যানেস্তারার টিন, ভাঙা-বাঁকাচোরা স্টিলের রড, এরকম নানা জিনিষ দিয়ে তৈরি করে ফেলেছেন বিভিন্ন ধরণের পারকাশন বাদ্যযন্ত্র। শুধু বাদ্যযন্ত্র তৈরি করেই থেমে থাকেননি, ওই এলাকার ছোট বাচ্চাদের নিয়ে তৈরি করে ফেলেছেন আস্ত একটা ব্যান্ড। এই যজ্ঞের কাণ্ডারীর নাম সঞ্জয় মন্ডল। ৩ এপ্রিল এমনই এক জমজমাট পারফরম্যান্সের সাক্ষী রইল সংবাদমাধ্যম। তবে উপলক্ষ ছিল পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় এবং মধুমিতা সরকার অভিনীত, সুপ্রিয় সেনের ‘ট্যাংরা ব্লুজ়’।

সঞ্জয়ের জীবনকে সামনে রেখে এই ছবির গল্প তৈরি হয়েছে। “তবে ‘ট্যাংরা ব্লুজ়’ শুধুমাত্র সঞ্জয়ের জীবনী নয়,” বললেন সুপ্রিয়। “ওর ঘটনাবহুল জীবন আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে।”

আরও পড়ুন: স্নিগ্ধজিতের নতুন গানে পরিবেশ রক্ষার আহ্বান

সুপ্রিয়র তৈরি তথ্যচিত্র চারবার জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে। ট্যাংরা নিয়েও তথ্যচিত্রই বানাচ্ছিলেন তিনি। সেই কাজ ছেড়ে মাঝপথে হঠাৎ ফিকশন ছবিতে আসার কারণ হিসাবে রেডিওবাংলানেট-কে তিনি জানালেন, “আমার কাজ হচ্ছে গল্পটা তুলে ধরা। আমার কাছে ছবির এই দুটো মাধ্যমে খুব বেশি পার্থক্য নেই। অবশ্যই কিছু কারিগরী পার্থক্য আছে, যেমন তথ্যচিত্রে আমি একেবারে রিয়েল লাইফ নিয়ে কাজ করি কিন্তু ফিকশনে অভিনেতার প্রয়োজন হয়।”

ট্যাংরা অঞ্চল এবং সেখানকার মানুষদের জীবনযাত্রা, তাঁদের রোজনামচা নিয়ে ৭-৮ বছর ধরে কাজ করছেন সুপ্রিয়। “সে কাজ হচ্ছে তো হচ্ছেই। আসলে আমি একটা কাজ করতে প্রচুর সময় নিই। সেই কাজ করতে গিয়ে আমার মনে হয়েছিল শুধু একটা তথ্যচিত্র দিয়ে ওদের, বিশেষত সঞ্জয়ের জীবনের গল্পটা তুলে ধরা যাবে না। তখন থেকেই আমার কাছে পুরো বিষয়টা খুব পরিষ্কার ছিল। তবে পরম, অরিত্র সেন এবং ওদের প্রযোজনা সংস্থা ছাড়া এত বড়মাপের কাজ করা সম্ভব ছিল না,” জানালেন সুপ্রিয়।

আরও পড়ুন: বিপরীত মেরুর রুদ্রিকের সঙ্গে মালাবদল, কোন লড়াইয়ের প্রস্তুতি তিথির?

ছবিতে সঞ্জয়ের চরিত্র সঞ্জীবের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন পরমব্রত।

“ইস্টার্ন মেট্রোপলিটান বাইপাস ধারে, রাস্তার দুপাশে সার বেঁধে যেমন গগনচুম্বী বহুতল আছে, তেমনই তার আশেপাশে আবর্জনাময় স্তূপও আছে। সেই ময়লা বা জঞ্জালকেই নিজেদের পরিচয় তৈরি করে, সেখান থেকে জীবিকা নির্বাহ করেন এমন মানুষও আছে। আছে সঞ্জয়ের মতো মানুষও। দীর্ঘ ১৫-১৬ বছর ধরে সঞ্জয় ট্যাংরা অঞ্চলের ছোট-ছোট ছেলেমেয়েদের ওই সমস্ত ফেলে দেওয়া জিনিস থেকে তৈরি করা পারকাশন যন্ত্র দিয়ে গানবাজনা শিখিয়ে, আলোর পথে নিয়ে আসার চেষ্টা করছেন। এই রূপকথার গল্পটা বড় পর্দায় বলা দরকার ছিল,” বললেন পরমব্রত।

আরও পড়ুন: জটায়ুর সাহস

ছবিতে পরমের বিপরীতে জোয়ীর ভূমিকায় রয়েছেন মধুমিতা সরকার। “জোয়ী ওই অঞ্চলের মেয়ে নয়, তবে গানবাজনার সঙ্গে যুক্ত। ঘটনাচক্রে সে ওই জায়গায় এসে পড়ে,” বললেন মধুমিতা।

তাঁর জীবনে কাজ, মিউজ়িক আর বেড়ানো খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে জানালেন মধুমিতা। “আমি সব ধরণের মিউজ়িক শুনি। তা সে দেশি হোক বা বিদেশি। যেমন শুটিং করতে গিয়ে ওই ব্যান্ডের সকলের সঙ্গে ব়্যাপও করেছি। আবার সঞ্জয়দার সঙ্গে ওর বাইকে বসে সরু-সরু গলি দিয়ে এমন সব জায়গায় গিয়েছি যেখানে সাধারণ মানুষের যাওয়া সম্ভব নয়। এগুলো দারুণ অভিজ্ঞতা,” বললেন মধুমিতা।




অন্ধকার, আবর্জনা, অপরাধ, মাফিয়ারাজ, জেল, এক জীবনে এই এতরকম অভিজ্ঞতার পর আজ শুধুমাত্র বাদ্যযন্ত্রগুলোই সঞ্জয়ের হাতিয়ার। “আমি চিরকাল চেয়েছি আমার এই ছোট-ছোট ছেলেমেয়েরা যেন আর পাঁচজনের মতো সুস্থ, স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে পারে। কোনওদিন যেন পুলিশের খাতায় ওদের নাম না ওঠে। তবে আমার জীবনের সত্যি ঘটনাগুলো নিয়ে কেউ ছবি করবে, একথা স্বপ্নেও কোনওদিন ভাবিনি,” বললেন সঞ্জয়।

পয়লা বৈশাখ প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাচ্ছে ‘ট্যাংরা ব্লুজ়’।



Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *