হারতে হারতেও জিতিয়ে দেয় সোয়েটার

ছবি: সোয়েটার

পরিচালনা: শিলাদিত্য মৌলিক

অভিনয়ে: ইশা সাহা, শ্রীলেখা মিত্র, খরাজ মুখোপাধ্যায়, সৌরভ দাস, জুন মালিয়া, অনুরাধা মুখোপাধ্যায়, ফারহান ইমরোজ, সিদ্ধার্থ রায়

দৈর্ঘ্য: ১ ঘন্টা ৫৮ মিনিট

RBN রেটিং: ৩/৫

একটা সাধারণ মেয়ে যার কোনও ‘গুণ’ নেই, তার জন্য বিয়ে ছাড়া আর কিই বা ভাবতে পারে তার বাবা মা। বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়েও এমনটা ভাবার লোক আমাদের চারপাশে কিন্তু কম নেই। খুব সাধারণ মধ্যবিত্ত ঘরের একটা মেয়ের বড় হয়ে ওঠা শুধু বিয়ের বাজারে তার যোগ্যতা বিচারের কারণেই হয়ে থাকে যেন। আর তার ওপরে সে যদি নাচ, গান, ছবি আঁকা বা নিদেনপক্ষে রান্নাটাও ঠিকঠাক না করতে পারে, তাহলে তাকে অকর্মণ্য তকমা দিয়ে দেন তার নিজের লোকেরাই।  




শিলাদিত্যর ছবির মূল ভাবনা এই তারেই বাঁধা রয়েছে। ছবির নাম ‘সোয়েটার’ শুনেই মনে হয়েছিল চৈত্রমাসের ভরা গরমে এ কেমন নামের ছবি কে জানে। কিন্তু কেন এই গল্পের নাম সোয়েটার, তার কারণ জানতে গেলে পুরো ছবিটা দেখতেই হবে। নানারঙের চরিত্রের সমাহারে গোটা ছবিটা ধরে এক অন্যরকম সোয়েটার বোনার চেষ্টাই করলেন পরিচালক।

উত্তরবঙ্গের কোনও এক ছোট শহরে স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে মহাদেববাবুর (খরাজ) মধ্যবিত্ত সংসার। স্বভাব থেকে শুরু করে আচার আচরণ সবদিক থেকেই তার দুই মেয়ে দুই মেরুতে অবস্থান করে। বড় মেয়ে টুকু (ইশা) শান্ত ও ধীর স্থির, সব ব্যাপারে অতি সাধারণ সে। কারোর মনে আঘাত লাগতে পারে এমন কোনও কথা সে কখনও বলে না। ছোট বোন শ্রী (অনুরাধা) ঠিক উল্টো। সে অজস্র গুণের অধিকারী, সেই সঙ্গে বেশ মুখরাও।

ঝান্ডি অভিযান

টুকুর জীবনে একমাত্র দুঃসাহস পাবলো (সৌরভ)। কিন্তু প্রতি সপ্তাহে কবিরাজি কাটলেট আর চা খাইয়ে পাবলো তাকে যে জীবনের স্বপ্ন দেখায়, সেখানে কোনওভাবেই নির্ভরতা খুঁজে পায় না টুকু। সুদূর কলকাতা থেকে বিয়ের সম্বন্ধ দেখতে এসে রাত তিনটের সময় চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট ছেলের মা (জুন) টুকুকে এক অদ্ভুত প্রস্তাব দেন। যদিও অমন গুণী ছেলের ব্যক্তিত্বময়ী মা কেন যে অতি সাধারণ এক পরিবারে ছেলের বিয়ে দিতে চাইলেন, সেটা ছবিতে বলা সত্বেও ঠিক যুক্তিযুক্ত মনে হল না। সেই অদ্ভুত প্রস্তাবের জেরে টুকু দার্জিলিংয়ে পিসীর (শ্রীলেখা) বাড়ি গিয়ে পৌঁছয়, জীবনে প্রথমবার কিছু একটা করার তাগিদে। ছবির গল্পে অভিনবত্ব আছে যথেষ্ট, তবু তাতে গতি এনেছে যেসব ঘটনা তার কারণগুলো আরও একটু জোরালো হলে ভালো লাগত। তবে ছবির শেষটা বেশ চমকে দেওয়ার মত।

পিসীর বাড়িতে উলবোনার ক্লাসে কিছু অভিনব টাস্ক বা মজার খেলা দেখা যায় যেগুলো ছবিটাকে কোথাও একঘেয়ে হতে দেয় না। আগাগোড়াই ‘এবার কি হবে’ গোছের একটা আগ্রহ থেকে যায়। দার্জিলিং যাওয়ার সময় রাস্তার দৃশ্যগ্রহণ সুন্দর। ছবিতে আগাগোড়াই টুকু ও শ্রী’র মেকআপবর্জিত মুখ ভালো লাগে। শাম্বর (ফারহান) বেহালা বাজানোর দৃশ্যটি আলাদাভাবে মনে রাখার মত। উলবোনার ক্লাসে একটি মেয়ের প্রশ্ন মনে দাগ কেটে যায়, ‘বেহালাকে শুধু দুঃখের সুরেই ব্যবহার করা হয় কেন?’ ছবিতে কিন্তু বেহালার সুর কোথাও কোনও বিষণ্ণতার ছোঁয়া লাগতে দেয়নি। বরং রেশ রেখে যায় শেষ পর্যন্ত।

যে জন থাকে মাঝখানে

অভিনয়ের কথায় আসা যাক। বেশ কিছু শক্তিশালী অভিনেতা থাকা সত্বেও ‘সোয়েটার’ একান্তই ইশার ছবি হয়ে থাকবে। ‘প্রজাপতি বিস্কুট’ ও ‘গুপ্তধনের সন্ধানে’ ছবিতে নিজের সুঅভিনয়ের সাক্ষর রেখেছেন ইশা। এখানে তিনি তাঁর নিজস্ব স্টাইলে অনবদ্য। পিসীর বাড়িতে প্রথমবার টুকু যখন মুখ ফুটে বলে—চিরকাল সকলের অপমান সহ্য করে সে ক্লান্ত, এবার সে কিছু একটা করতে চায়—সেখানে তার চোখের ভাষায় হেরে যাওয়া একটা মানুষের আর্তি দর্শকের মনকে ছুঁয়ে যাবে।

বোনের চরিত্রে অনুরাধাকে ভালো লেগেছে। খরাজের অভিনয় নিয়ে নতুন করে কিছু বলার থাকে না কখনওই। তাঁর কমিক টাইমিং দর্শককে বার বার হাসতে বাধ্য করে। ছোট ভূমিকায় সৌরভ বরাবরের মতই প্রত্যাশা মিটিয়েছেন। তবে ইদানিং তাঁর করা চরিত্রগুলো একটু একরকম হয়ে যাচ্ছে যেন। সম্ভ্রান্ত পরিবারের গৃহকর্ত্রীরূপে জুন যথেষ্ট বিশ্বাসযোগ্য। ভালো লেগেছে ফারহানকেও।




তবে আলাদাভাবে প্রশংসা প্রাপ্য শ্রীলেখার। ‘রেনবো জেলি’র পর আরেকবার একটি মনে রাখার মত চরিত্রে দেখা গেল তাঁকে। টুকুর পিসী ও উলবোনার ক্লাসের ম্যাডামের ভূমিকায় তাঁর আত্মবিশ্বাসী রূপ ছবিতে আলাদা গতি এনে দেয়। শ্রীলেখার মত অভিনেত্রীকে বাংলা ছবির আরও আগেই কাজে লাগানো উচিত ছিল। তাঁর স্বামীর ভূমিকায় সিদ্ধার্থর বিশেষ কিছু করার ছিল না। তিনি চরিত্রের প্রয়োজন পূরণ করেছেন।

রণজয় ভট্টাচার্যের সুরে লগ্নজিতা চক্রবর্তীর গলায় ‘প্রেমে পড়া বারণ’ গানটি আগেই জনপ্রিয় হয়েছে। ভালো লেগেছে রূপঙ্করের গলার গানটিও।

Amazon Obhijaan



Like
Like Love Haha Wow Sad Angry
11

Swati

Editor of a popular Bengali web-magazine. Writer, travel freak, nature addict, music lover, foody, crazy about hill stations and a dancer by passion. Burns the midnight oil to pen her prose. Also a poetry enthusiast.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *