প্রত্যেক সংসারের চেনা গল্প
ছবি: কথামৃত
পরিচালনা: জিৎ চক্রবর্তী
দৈর্ঘ্য: ২ ঘণ্টা ২ মিনিট
অভিনয়ে: কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, অপরাজিতা আঢ্য, বিশ্বনাথ বসু, অদিতি চট্টোপাধ্যায়
RBN রেটিং: ৩/৫
কথামৃত! কথাটা অদ্ভুত! মাঝখান থেকে ভেঙে দিলে তার মানে দাঁড়ায় কথা মৃত। আবার জোড়া অবস্থায় তা হয়ে যায় কথা অমৃত সমান। বন্দুক থেকে বেরনো গুলি আর মুখ থেকে ছিটকে যাওয়া কথা, দুটোই নাকি সমান। অর্থাৎ দুটোই সমানভাবে কারও ওপর আঘাত হানতে প্রস্তুত। আবার কথা দিয়ে কাউকে আপন করাও ঢের সহজ কাজ। প্রশ্ন হলো, এই খারাপ কথা বলে কাউকে অপমান করার থেকে নিজেকে সংযত রাখবেন কীভাবে! জিৎ এর একটি সহজ সরল সমাধান করে দিয়েছেন।
কথায় আছে বোবার শত্রু নেই। কারণ সে খারাপ বা ভালো কোনওকিছুই কাউকে বলে না। অন্যেরা যা বলে, সে শুধু তা শুনে অভিব্যাক্তি প্রকাশ করে। তাই বলে কি তার রাগ হয় না! হয়। রাগ হলে সে নিজেকে সংযত করে রাখে। এমনই এক মানুষ হলেন সনাতন (কৌশিক)। একসময়ের রূঢ়বক্তা, কটুভাষী, সদা অপ্রসন্ন সনাতনের জীবন পাল্টে দেয় এক দুর্ঘটনা। সে বাকশক্তি হারিয়ে ফেলে। স্ত্রী সুলেখার (অপরাজিতা) সঙ্গে কোনওদিন ভালো করে কথা বলেনি সনাতন। সেই স্ত্রী এখন তার পাশে এসে দাঁড়ায়। সে অনুভব করে তার স্বামীর ভিতরে থাকা আসল মানুষটির অনুভূতি। একসময় স্বামীর ব্যবহারের কারণে নিজের মানসিক স্থিতি ধরে রাখতে পারে না সুলেখা। এরপরেই ঘটে সেই চরম দুর্ঘটনা। কাজে যাওয়ার সময় রাস্তায় পড়ে আঘাত পায় সনাতন। সে হারিয়ে ফেলে তার কটু কথা বলার সমস্ত ক্ষমতা। কথা বলতে না পারার কষ্টে দিনে-দিনে ক্লান্ত হয়ে সনাতন কথামৃতকে বেছে নেয়। তবে এ কথামৃত তার একান্ত নিজস্ব। সনাতন লক্ষ্য করে তার ব্যবহারের পরিবর্তন। এককালে যার সঙ্গে পাড়ার লোক কথা বলতে চাইত না, এখন নিজ ব্যবহারের গুণে সেই মানুষটিই পাড়ার ক্লাবের সভাপতি হয়ে ওঠে। কিন্তু তবু মানুষ ভাবে এক, আর হয় আরেক। ব্যক্তিগত ঈর্ষার কারণে পাড়ার এক মাতব্বর বাবুনের (বিশ্বনাথ) কাছে ফাঁস হয়ে যায় সনাতনের কিছু গোপন কথা।
আরও পড়ুন: ফের মুক্তি পেল ‘ওম শান্তি ওম’
এমন অনেক কথা থাকে যা হয়তো না বললেই ভালো। জিৎ সেই কথাই বলেছেন এই ছবিতে। দু’ পক্ষই যদি সমানভাবে অশান্তি সৃষ্টির কারণ হয়ে যায়, সেখানে একপক্ষের শান্ত থাকা উচিৎ। বর্তমানে প্রায় সবাই বক্তা। ভালো শ্রোতার ভীষণ অভাব চারিদিকে। কোনওকিছু না জেনে আলটপকা মন্তব্য করে ফেলেন অনেকেই। বুঝতে পারেন না, অপরদিকে থাকা মানুষটির অন্তরে তৈরি হওয়া ক্ষতর গভীরতা কতখানি। ‘খারাপ কথা বলব না’, এ আপ্তবাক্য মানতে পারেন ক’জন?
খুব সহজ ভাষায় সাধারণ মানুষের বোধগম্য একটি ছবি বানিয়েছেন জিৎ। এই ছবি নিজগুণে ভালো লাগতে বাধ্য। অভিনয় নিয়ে কাউকেই আলাদা করে বলার জায়গা নেই। প্রত্যেকেই নিজেদের জায়গায় যথাযথ। তবে ছবিতে কোন সময় কোন ঘটনা ঘটছে তা বুঝতে একটু সমস্যা হয়েছে। পাঁচ বছর পূর্বের ঘটনা দেখানোর সময় হঠাৎ করেই বর্তমান সময় ফিরে এলে একটু সমস্যা হবেই।
অমিত-ঈশান জুটির সঙ্গীত পরিচালনায় গানগুলি ছবির গল্পের সঙ্গে মানানসই।