অনেক আগে বলেছিলাম বাংলায় ‘আনন্দমঠ’ করা দরকার, কেউ শোনেনি: শুভেন্দু

RBN Web Desk: ইতিহাস নির্ভর চিত্রনাট্যের জন্য সাম্প্রতিককালের বাংলা ছবির অন্যতম ভরসার জায়গা তিনি। দেব, রুক্মিণী মৈত্র ও অম্বরীশ ভট্টাচার্য অভিনীত ‘ব্যোমকেশ ও দুর্গরহস্য’ ছবির চিত্রনাট্যও তিনিই লিখেছেন। কিন্তু ইতিহাস ঘেঁটে গল্প তুলে আনা আর শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখার ওপর চিত্রনাট্য তৈরি করা, এই দুটো কাজকে শুভেন্দু দাশমুন্সী কি একই গোত্রে ফেলবেন? 

“না, এক নয়। আমি মূলত ইতিহাস নির্ভর ছবির জন্য কাজ করে থাকি,” বললেন শুভেন্দু। “আমার নিজেরও সেটা ভালো লাগে। তবে শরদিন্দুর লেখার ক্ষেত্রে আগে সেই প্রেক্ষাপটকে জানা, সেই গল্পে ডুবে যাওয়া, এগুলো না করলে কাজ করা সম্ভব নয়। সেগুলো আমার বহু আগেই করা।”

ব্যোমকেশের যে কোনও গল্প থেকে লাইন তুলে জিজ্ঞেস করলেও তিনি অনায়াসে বলে দিতে পারেন কোন গল্পের কথা বলা হচ্ছে, এমনটাই দাবি তাঁর। 

আরও পড়ুন: রহমতের বেশে মিঠুন, প্রকাশ্যে লুক

সাধারণত শরদিন্দুর যেসব কাহিনি নিয়ে ছবিতে কাজ হয়েছে সেগুলো সবই প্রায় সময়ের থেকে এগিয়ে এসেছে। “সেদিক থেকে দেখলে এই ছবিতে একদম উপন্যাসে যে সময়টা বলা হয়েছে আমরা সেটাই দেখাতে চলেছি। ১৮৫৭-এর সিপাহি বিদ্রোহ, তারও একশো বছর আগে বর্গীদের আক্রমণ, সবমিলিয়ে যে প্রেক্ষাপট গল্পে আছে সেটাই এখানে তুলে ধরা হয়েছে,” জানালেন পেশায় অধ্যাপক শুভেন্দু।

ইতিহাসের সঙ্গে মূল কুশীলবদের যুক্ত করার যে খুঁটিনাটি উপাদান, সেগুলো সবটা গল্পে বলা নেই। “সব বলার প্রয়োজনও পড়ে না। তবে ছবি করতে গেলে সেই ডিটেলগুলোর দরকার পড়ে। সেগুলোই বার করে এনেছি বলা যায়,” জানালেন তিনি। 

আরও পড়ুন: “আর ভালো লাগছে না”

তবে মূল গল্পে ব্যোমকেশ এবং অজিত সাঁওতাল পরগণায় রহস্যের কিনারা করতে উপস্থিত হলেও সত্যবতী যেতে পারেনি। তখন সে সন্তানসম্ভবা ছিল। অথচ ছবির ট্রেলারে তাকে দুর্গের ভেতর ঘুরে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে। শুভেন্দুর ব্যাখ্যা, “গল্পটা যে যুগে লেখা হয়েছিল তখন এই ধারণা খুব স্বাভাবিক মনে হলেও, ছবিটা তো এখনকার দর্শক দেখবে। ২০২৩-এ দাঁড়িয়ে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে ছেড়ে, বা দাদার কাছে রেখে ব্যোমকেশের চলে যাওয়ার ব্যাপারটা দেখতে খুব নিষ্ঠুর লাগবে। আজকের আমরা এমন ভাবতে পারি না।” 

অর্থাৎ যেহেতু এ গল্পে ব্যোমকেশই নায়ক, তাই সে এমনটা করতে পারে না। কিন্তু ব্যোমকেশের মত সিরিয়াস গোয়েন্দা চরিত্র যদি সারাক্ষণ স্ত্রীকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে তাহলে রহস্যের কিনারা করবে কে? “ব্যোমকেশ কিন্তু খুব কঠিন ব্যক্তিত্বের মানুষ নয়। অর্থাৎ যাকে খুব সিরিয়াস বলা যায়, তেমন নয়। যে লোকটা প্রতিদিন কাগজ পড়তে-পড়তে অজিতের সঙ্গে খুনসুটি করে, কথায়-কথায় সত্যবতীকে রাগিয়ে দেয়, সে কেমন হতে পারে সেটা ওই টেক্সটগুলো থেকেই বোঝা যায়,” বললেন শুভেন্দু। অর্থাৎ যাকে বলে বিটুইন দ্য লাইন্স, ঠিক সেই দুটো লাইনের মাঝখান থেকে ব্যোমকেশের ব্যক্তিত্বকে বুঝে নিতে হয়েছে তাঁকে।



তবে বাংলায় আরও বেশি করে ইতিহাস নিয়ে কাজ হওয়া জরুরি বলে মনে করেন শুভেন্দু। আক্ষেপও রয়েছে তাঁর। বললেন, “অন্য ভাষাতেও কাজ করছি আমি। অনেক আগে বলেছিলাম ‘আনন্দমঠ’ নিয়ে কাজ করা দরকার। কেউ শোনেনি। তারপর সেটা বাংলার বাইরে চলে গেল তো! দক্ষিণের মতো এখানেও ইতিহাসের কাজগুলো জরুরি ডকুমেন্টেশন হয়ে থাকতে পারে যদি সেভাবে প্রেজ়েন্ট করা হয়। যেমন গুপ্ত সাম্রাজ্যের ইতিহাস নিয়ে কাজ হওয়া উচিত। লক্ষণ সেন, বল্লাল সেনদের নিয়ে কাজ হওয়া দরকার।”

বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে বাজেট বড় সমস্যা মেনে নিলেন শুভেন্দু। দক্ষিণের মতো বড় করে না হলেও বাংলার ইতিহাস নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করে যেতে হবে বাংলা ছবির স্বার্থেই। “অশোককে নিয়ে কাজ হয়েছে হিন্দি ছবিতে। সেখানে অশোকের চরিত্রের কিছুই ধরা পড়েনি। আমি সুযোগ পেলে অশোককে পাটলিপুত্রের রাজা হিসেবে দেখাব,” পরিকল্পনা তাঁর। কান্যকুব্জ বা কনৌজের ইতিহাস নিয়ে, হর্ষবর্ধনকে নিয়ে এবং বিভিন্ন যুগে তৈরি হওয়া বাংলার ইতিহাসকে অবলম্বন করে বাংলায় ছবি তৈরি করা দরকার বলে মনে করেন শুভেন্দু। 

ছবি: প্রতিবেদক




Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Swati

Editor of a popular Bengali web-magazine. Writer, travel freak, nature addict, music lover, foody, crazy about hill stations and a dancer by passion. Burns the midnight oil to pen her prose. Also a poetry enthusiast.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *