আমরা কেউই আর সেই আগেকার গোলাপি জগতে বাস করি না: সৌরভ
RBN Web Desk: সৌগত সিনহা লেখক। ইংরেজিতে লিখলেও তার চরিত্ররা সবাই ভারতীয়। কলকাতায় থাকাকালীন লেখালেখি করলেও পাঠক মহলে বিশেষ কল্কে পাননি সৌগত। বর্তমানে কর্মসূত্রে স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে আমেরিকায় থাকেন তিনি। প্রথম উপন্যাস ব্যর্থ হলেও দ্বিতীয়টি থেকে হঠাৎ করেই জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেন সৌগত। রাতারাতি প্রচুর মানুষ তার লেখার ভক্ত হয়ে ওঠেন। তৃতীয় উপন্যাস বেরোবার আগেই এক প্রোডাকশন হাউজ় তার সে লেখা কিনে নেয় তিনগুন বেশি দাম দিয়ে। সৌগতর লেখার বিষয় মৃত্যু। থ্রিলার গল্প লিখতেই তিনি অভ্যস্ত। এই অবস্থায় সংবর্ধনা নিতে ও নতুন গল্পের খোঁজে দেশে ফেরেন সৌগত। ফেরার পর এক মহিলার সঙ্গে তার একাধিকবার দেখা হয়ে যায়। সৌগতকে তার অতীতের অন্ধকারে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চায় সে। এই মহিলা কি আদৌ তার অতীতের কোনও অংশ না কি সবটাই একটা চক্রান্ত তা বুঝতে পারেন না সৌগত। ক্রমশ অন্ধকারে ডুবে যেতে থাকেন তিনি।
‘ধানবাদ ব্লুজ়’, ‘কার্টুন’ এবং ‘জাপানি টয়’-এর পর তাঁর পরবর্তী ওয়েব সিরিজ় ‘শব্দজব্দ’-তে এক ভিন্ন স্বাদের সাইকোলজিকাল থ্রিলার নিয়ে আসছেন পরিচালক সৌরভ চক্রবর্তী। এই প্রথম কোনও বাংলা সিরিজ়ে দেখা যাবে হিন্দী ছবির বিশিষ্ট অভিনেতা রজত কাপুরকে। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে থাকছেন পায়েল সরকার, সুব্রত দত্ত, মুমতাজ সরকার, কঙ্কণা চক্রবর্তী ও সালোনি পাণ্ডে। সাতটি পর্বে দেখা যাবে ‘শব্দজব্দ’র প্রথম সিজ়ন।
আরও পড়ুন: যে মৃত্যু আজও রহস্য
আগের সিরিজ়গুলি প্রত্যেকটি আলাদা গোত্রের হলেও সৌরভের পরিচালনায় থ্রিলার এই প্রথম। থ্রিলারের চাহিদার কথা ভেবেই কি এবার এরকম গল্প? “আসলে আমি নিজে থ্রিলার দেখতে খুব ভালোবাসি,” রেডিওবাংলানেট-কে বললেন সৌরভ। “সাইকোলজিকাল থ্রিলার বানাতেও ভালো লাগে। তাছাড়া এই সময়ে দাঁড়িয়ে আমরা কোনওকিছুকেই খুব একটা বিশ্বাসের চোখে দেখি না। নিজের দৃষ্টিভঙ্গীর সঙ্গে না মিললে আমরা তাকে নাকচ করে দিই। সেই কারণেই এরকম একটা গল্প নিয়ে কাজ করা। এই দিকগুলো নানাভাবে উঠে আসবে সিরিজ়ে।”
তাই বলে ওয়েব সিরিজ়ের থ্রিলার মানেই কি ডার্ক হতে হবে? “ডার্ক এই কারণে যে আমরা কেউই কিন্তু আর সেই আগেকার গোলাপি জগতে বাস করি না। বর্তমান পৃথিবী আমাদের এমন একটা কঠিন বাস্তবের সামনে এনে দাঁড় করিয়েছে যেখানে আগে খবরের কাগজের প্রথম পাতায় যেসব খবরকে ঢেকে দেওয়া হতো, সেগুলোই এখন প্রধান পাঠ্য হয়ে উঠেছে। এমন কি কোনও ভয়ঙ্কর খুনের ছবিও প্রথম পাতায় ছাপা হচ্ছে। সেই ‘মিলে সুর মেরা তুমহারা’র দিনগুলো আর নেই। কাগজ খুললেই খুন আর ধর্ষণ দেখতেও অভ্যস্ত হয়ে গেছি আমরা। বাস্তবটাই যেখানে ডার্ক হয়ে গেছে সেখানে থ্রিলার দেখতে গেলে তো সেটা উঠে আসবেই,” ব্যাখ্যা সৌরভের।
আরও পড়ুন: রক্তবরণ মুগ্ধকরণ
টিজ়ার দেখে ‘শব্দজব্দ’ ভৌতিক কিংবা অলৌকিক কোনও গল্প মনে হলেও, সিরিজ়টা না দেখলে সেটা বোঝা যাবে না বলে দাবী সৌরভের। “সৌগতর অতীতের যে কথা বিভিন্নভাবে উঠে আসে, তা আদৌ ছিল, না কি সাজানো, না কি কোনও ভৌতিক ব্যাপার, সেটাই গল্পের বিষয় এটুকুই বলতে পারি,” বললেন তিনি।
‘শব্দজব্দ’র টিজ়ার সম্প্রতি টুইট করেছেন অমিতাভ বচ্চন। এটা তাঁর জীবনে কতটা প্রভাব ফেলেছে? “ওটা সাংঘাতিক উৎসাহ দিয়েছে,” হেসে বললেন সৌরভ। “আমরা এতটাই নগন্য যে আমার কাজ নিয়ে ওঁর মতো অভিনেতার একটা টুইট একটা অভাবনীয় ব্যাপার। আমার প্রথমে বিশ্বাসই হচ্ছিল না। তবে এও ঠিক যে এতবড় একজন মানুষের প্রশংসার সঙ্গে সাধারণ দর্শকের ভালোলাগাটাও আমার কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ। ওঁর বলার পরে বহু মানুষ টিজ়ারটা দেখেছেন, যার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। তবে আসল তৃপ্তিটা তখনই হবে যদি সিরিজ়টা দেখার পরে মানুষের ভালো লাগে।”