কাজ না করে থাকা সৌমিত্রকাকুর পক্ষে মেনে নেওয়া কঠিন হতো: সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায়

RBN Web Desk: “ফিরে এলেও তো কাজ ছাড়া থাকতে পারতো না। সেটা ওঁর মতো কর্মঠ মানুষের পক্ষে মেনে নেওয়া কঠিন হতো,” সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় প্রসঙ্গে বললেন সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায়। সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ‘সোনার কেল্লা’ (১৯৭৪) ও ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’ (১৯৭৯) ছবিতে গোয়েন্দা ফেলুদার ভূমিকায় অভিনয় করেন সৌমিত্র। সেই দুটি ছবিতে ফেলুদার খুড়তুতো ভাই ও সহকারীর ভূমিকায় ছিলেন সিদ্ধার্থ।    

সদ্য প্রয়াত সৌমিত্র সম্পর্কে সিদ্ধার্থ রেডিওবাংলানেট-কে জানালেন, “বিরাট বড় ক্ষতি হলো সে তো বলাই বাহুল্য, তবে যেভাবে নানান সমস্যায় ভুগছিল, তাতে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেও কাজ তো আর করতে পারতো না। বরং বাড়িটাই একটা ছোটখাটো হাসপাতাল হয়ে উঠত। কাজ না করে থাকলে হয়তো অন্য মানসিক সমস্যা দেখা দিতো। কাজ ছাড়া থাকার মানুষই ছিল না সৌমিত্রকাকু। তাই সেদিক দিয়ে দেখলে হয়তো ভালোই হয়েছে বলা যায়।”

ফেলুদা সিরিজ়ের প্রথম ছবি ‘সোনার কেল্লা’ করতে গিয়ে দুজনের যে পরিচয় হয়েছিল, তা পরে ব্যক্তিগত সম্পর্কের পর্যায়ে চলে গিয়েছিল বলে জানালেন সিদ্ধার্থ। “আমাদের সম্পর্কটা কখনওই দুই সহঅভিনেতার সম্পর্ক ছিল না। বরং অনেক বেশি আন্তরিক ছিল। ছবিতে আমি ওঁর ভাই হলেও আসলে কাকু বলে ডাকতাম, দেখতে যদিও আমার দাদার মতোই লাগতো। আমার থেকে পঁচিশ বছরের বড় হলেও কোনওদিক দিয়েই কাকার মতো দেখতে ছিল না। তাও কাকু ডাকতে শুরু করেছিলাম কারণ সন্দীপও (রায়) ওকে কাকা ডাকতো। তাছাড়া যখন একসঙ্গে কাজ করতে শুরু করি, তখন ওর ছেলের বয়সও আমার মতই ছিল। আর কাকুটা বেশ মিষ্টি একটা ডাকও।” 

আরও পড়ুন: পাকদণ্ডীর পথে পথে দেওরিয়াতাল

ফেব্রুয়ারিতে একটি ছবিতে সই করেছিলেন সৌমিত্র। লকডাউন পড়ে যাওয়ায় সেই ছবির শুটিং আর হয়ে ওঠেনি। সেই প্রসঙ্গে সিদ্ধার্থ বললেন, “পরিচালক আমাকে ফোন করেছিলেন। ওই ছবিতে আমারও একটা চরিত্র করার কথা। তিনি খুব বিপদে পড়েছেন, বললেন কী করি বলুন তো। বললাম, আপনি কি ওঁর বিকল্প খুঁজছেন? খুঁজবেন না। কারণ ওঁর বিকল্প হয় না। বরং চরিত্রটাকে একটু অন্যভাবে সাজিয়ে নিন, যাতে অন্য কোনও অভিনেতা সেখানে মানিয়ে যান। এরকম অনেকেই হয়তো বিপদে পড়বেন, যাদের ছবির কাজ শেষ হয়নি। কিন্তু বিকল্প খুঁজতে গেলে তাঁরা হতাশ হবেন। ওরকম অভিনেতা একজনই হন।”




দীর্ঘ তিন দশকেরও বেশি সময় পর, ২০১১ সালে পিনাকী চৌধুরীর ‘আরোহণ’ ছবিতে একসঙ্গে অভিনয় করেন সৌমিত্র ও সিদ্ধার্থ। সেখানে তাঁরা পিতা-পুত্রের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। এরপর ২০১৭ সালে নন্দিতা রায় ও শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ‘পোস্ত’ ছবিতে দুজনে একসঙ্গে অভিনয় করেন।

“‘আরোহণ’-এর শুট হয়েছিল বেনারসে। তবে ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’-এর শুটিং অন্য ঘাটে হয়েছিল, আর এটা ছিল মনিকর্ণিকা। তবু স্মৃতিচারণ তো হতোই। গলি আর ঘাট নিয়ে প্রচুর কথা হতো। হোটেলে বসেই ওঁর সঙ্গে প্রচুর আড্ডা দিয়েছি। পরে ‘পোস্ত’ ছবিতে আমি ছিলাম বিচারকের ভূমিকায়। ফেলুদা কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আছে আর আমি বিচারকের আসনে, এও এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা ছিল বটে! ওর সঙ্গে কাজ করা মানেই মনে রাখার মতো সব আড্ডা হতো,” স্মৃতি হাতড়ে বললেন সিদ্ধার্থ।

Amazon Obhijaan



Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Swati

Editor of a popular Bengali web-magazine. Writer, travel freak, nature addict, music lover, foody, crazy about hill stations and a dancer by passion. Burns the midnight oil to pen her prose. Also a poetry enthusiast.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *