অনেকেই বলেছিল ভুল করছি: প্রসেনজিৎ
কলকাতা: তাঁর কেরিয়ারগ্রাফে দশ বছর অন্তর এক নতুন মোড় এসেছে বলে মনে করেন অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। সম্প্রতি শহরে এক অনুষ্ঠানে প্রসেনজিৎ জানালেন “ঠিক দশ বছর আগে যখন ‘অটোগ্রাফ’ করেছিলাম তখন অনেকেই বলেছিল আমি ভুল করছি। আমি ভেবেছিলাম দেখাই যাক না কী হয়। সেটা যে আমার ভুল ছিল না তা এখন সকলেই মানবেন। আমার কেরিয়ারে কয়েক বছর অন্তর আমি সচেতনভাবে পরিবর্তন এনেছি, নানারকমের চরিত্রে অভিনয় করেছি। এই পরিবর্তনগুলো করে আমি বুঝেছি যে দর্শক আমাকে অন্য ধরণের চরিত্রে গ্রহণ করেছেন, পছন্দ করেছেন।”
এই ভিন্নধারার ছবির মধ্যে তাঁর নিজের পছন্দের তালিকায় ‘মনের মানুষ’, ‘অটোগ্রাফ’, ‘বাইশে শ্রাবণ’, ‘দোসর’, ‘জাতিস্মর’, ‘উৎসব’, ‘শঙ্খচিল’, ‘ময়ূরাক্ষী’, ‘রবিবার’, ‘জ্যেষ্ঠপুত্র’ বরাবর থাকবে বলে জানালেন প্রসেনজিৎ। যে কোনও পরিচালকের ছবিতেই তিনি নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেন বলে জানালেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা।
আরও পড়ুন: পাকদণ্ডীর পথে পথে দেওরিয়াতাল
এই প্রসঙ্গে তাঁর কথায় উঠে এল গৌতম ঘোষের ‘মনের মানুষ’ ছবির কথা। “কখনও কোনও পছন্দের চরিত্র পেলে সাত-আট মাস হয়তো সেটার ভেতরেই ঢুকে যাই,” বললেন প্রসেনজিৎ। “তখন আর অন্য কোনও কিছুর কথা মনে থাকে না। যেমন লালনের জন্য প্রচুর খেটেছিলাম। সেই সময় অনেকেই গৌতমদাকে বলেছিলেন সুপারস্টারকে দিয়ে লালন করানোটা ঠিক হচ্ছে না, মানাবে না। উনি কিন্তু সেই ঝুঁকিটা নিয়েছিলেন। আমিও আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলাম চরিত্রটায় প্রাণসঞ্চার করার জন্য। লালন বাংলাদেশের মানুষের কাছে একটা আইকনিক চরিত্র। যেমন আমাদের কাছে রামকৃষ্ণ পরমহংস। ওখানকার মানুষ আমাকে ওই চরিত্রে পছন্দ করেছিলেন। এখানেও দর্শকদের ভালো লেগেছিল। তার মানে আমার পরিশ্রম সার্থক হয়েছিল। আবার ‘গুমনামি’তেও প্রচুর খেটেছি। চরিত্রটা ভীষণই কঠিন ছিল। কতটা পেরেছি সেটা দর্শক বলবেন। তবে আমার চেষ্টাটা সৎ ছিল।”
আবার লালন ফকির, সুভাষচন্দ্র কিংবা অ্যান্টনি কবিয়ালের মতো ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ চরিত্রের পাশাপাশি তাঁকে ‘মহালয়া’য় একটি গ্ল্যামারহীন ছোট চরিত্রেও দেখা গেছে। “এই ছোট ছোট কাজগুলো আমি করতেই থাকবো। এই ছোট অথচ চ্যালেঞ্জিং চরিত্রগুলো আমাকে কাজ করার উৎসাহ যোগায়,” বললেন প্রসেনজিৎ।
আরও পড়ুন: নির্বাক, ব্যতিক্রমী ভাবনার নাটক ‘কনডেমড সেল’
নতুন বছরে কী পরিকল্পনা করেছেন তিনি? অভিনেতার মতে, “যেভাবে এত বছর ধরে কাজ করে এসেছি তাতে করে আজ নিশ্চয়ই এমন একটা জায়গায় পৌঁছেছি যেখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অভিনেতাদের নাম উঠে এলে বাংলা থেকে আমার নামটাই যাবে। অর্থাৎ পরিচিতিটা সেই জায়গায় হওয়া উচিত। কিন্তু তা হয় না। কারণ আমরা বাঙালিরা সব ব্যাপারেই বড় প্রচারবিমুখ। দক্ষিণে তো নতুন নায়ক নায়িকারাও কে কী ছবি করছেন সব খবর সংবাদমাধ্যমে পাওয়া যায়। একমাত্র এখানেই এসব নিয়ে বিশেষ হইচই হয় না।”
নতুন বছরে বা এই দশকে এমন একটা জায়গায় তিনি নিজেকে দেখতে চাইছেন যেখানে বাংলা ছবির মুখ হিসেবে মানুষ তাঁকে মনে রাখবেন। “আর চাই নতুন চ্যালেঞ্জ আসুক, যেখানে নিজেই নিজেকে ছাপিয়ে যেতে পারি, অন্তত সেই চেষ্টাটুকু করে যাব,” বললেন প্রসেনজিৎ।
ছবি: গার্গী মজুমদার