সারাবছর পরার মতো শীতপোশাকের সম্ভার নিয়ে এলেন শুভা মিত্র
কলকাতা: নভেম্বর প্রায় শেষ হতে চললো। হাওয়ায় শীতের উপস্থিতি বেশ টের পাওয়া যাচ্ছে। আর বড়জোর দিন পনেরোর মধ্যেই কলকাতার আদুরে শীত মরসুম এসে হাজির হবে তার বাৎসরিক আনন্দের ঝাঁপি নিয়ে, বেরিয়ে পড়বে ট্রাঙ্ক, স্যুটকেস, খাটের বক্স থেকে সারাবছর ঘুমিয়ে থাকা ন্যাপথলিনের গন্ধ মাখা সোয়েটার, জ্যাকেট, লং কোট, শাল আর স্টোলের সম্ভার। শীত শেষে আবার সেসব কেচে তুলে ফেলার পর্ব। তারপর মাস তিনেকের মধ্যে আর মনেও থাকে না কোন গরম জামাটা কেনা হয়েছিল।
কিন্তু যদি এমন হতো যে শীতের পোশাকগুলো সারাবছরই ব্যবহার করা যেত? প্রিয় পোশাকগুলো বছরে মাত্র একটা মাস ব্যবহার করে তুলে রাখতে মোটেও ভালো লাগে না। আর তাই ‘শুভা ডিজ়াইন স্টুডিও’র কর্ণধার শুভা মিত্র তাঁর ‘বোহো উইন্টার’ সম্ভারে এনেছেন এমন কিছু পোশাক যা শীতের জন্য তৈরি হলেও অন্য মরসুমেও ব্যবহার করা যাবে।
গতকাল দক্ষিণ কলকাতার ইন্দ্রানী পার্কের বিপনীতে ছিল শুভার নতুন ভাবনার শীতপোশাকের প্রকাশ অনুষ্ঠান। সেই উপলক্ষে উপস্থিত ছিলেন অভিনেত্রী সোহিনী সরকার ও সায়নী ঘোষ। দুজনেই এই ডিজ়াইনার বুটিকের নিয়মিত ক্রেতা।
আরও পড়ুন: পাকদণ্ডীর পথে পথে দেওরিয়াতাল
শুভার তৈরি নতুন ধরণের পোশাক নিয়ে সোহিনী জানালেন, “আমি বেশ শীতকাতুরে। তাই কলকাতায় অল্প ঠান্ডা হলেও তার মধ্যেই জমিয়ে শীতের পোশাক পরি। এছাড়া কোথাও বেরোতে হলে আমি খুব একটা সময় নিয়ে সাজগোজ করতে পারি না। যা হোক কিছু একটা গলিয়ে নিয়ে একটু টাচ আপ করেই বেরিয়ে পড়ি। তাই শুভাদির বানানো কটনের জামাকাপড় আমার খুব পছন্দের। চটজলদি গলিয়ে নেওয়া যায় এগুলো। আর মেটিরিয়াল হিসেবেও কটন আমার সবচেয়ে প্রিয়।”
বুটিকের স্বল্প পরিসরে সমস্ত কালেকশন রাখা সম্ভব না হলেও প্রয়োজনে বিক্রেতার পছন্দমতো ডিজ়াইনের পোশাকও এখানে বানিয়ে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: ফাগুন লেগেছে বনে বনে
শীতপোশাক প্রসঙ্গে সায়নী বললেন, “উষ্ণায়নের ফলে সারা পৃথিবীতেই এখন শীত কমে যাচ্ছে। তাই খুব একটা ভারী শীতপোশাক এখন আর চলে না। বরং খাদি বা লিনেন দিয়ে তৈরি এখানকার পোশাকগুলো পরে বেশ আরাম পাওয়া যায়।” তিনি নিজে ফিউশন পোশাকের ভক্ত বলে জানালেন সায়নী। “শীতের সময় আমি আরাম আর ফ্যাশন দুটোই পাশাপাশি রেখে চলায় বিশ্বাসী। ফ্যাশন করতে গিয়ে একটা পাতলা শাড়ি পরে ঠান্ডায় কাঁপা আমার পছন্দ নয়। তাই এমন কিছুই পরব যেটায় ফ্যাশনের পাশাপাশি প্রয়োজনও মিটবে। সেটাই আমি শুভাদির কাছে পাই”, বললেন তিনি।
“এই কালেকশনটার নাম ‘বোহো উইন্টার’ রেখেছি কেন না এগুলো একটু অন্য ধরনের পোশাক,” বললেন শুভা। “প্রাচ্য বা পাশ্চাত্য, কোনও একরকম ধাঁচের পোশাক না বানিয়ে ফিউশন স্টাইলের ওপর জোর দিয়েছি। আর শীত মানেই একটু চাপা রঙের ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আমার মনে হয়েছে শীতের পোশাকে রঙের উজ্জ্বল উপস্থিতি শীতের আমেজটাকে আরও মনোরম করতে পারে। রঙ আমাদের মনে আনন্দ নিয়ে আসতে সাহায্য করে, আমার শীতের পোশাকগুলোয় সেটা পাওয়া যাবে।”
আরও পড়ুন: বিশ্বনাথের বারাণসী, বারাণসীর বিসমিল্লাহ
এছাড়া নানারকম প্রিন্ট তৈরি করে থাকেন শুভা, যেমন টিনটিন, অটোরিক্সা বা প্রজাপতি। এরকম কিছু প্রিন্ট আছে যেগুলো দিয়ে ব্লেজ়ার বা লং ড্রেস বানানো হচ্ছে তেমন কেউ চাইলে শাড়িতেও পড়তে পারেন। মেটিরিয়াল হিসেবে অর্গানিক কটন বা খাদির ওপর কাজ করতে পছন্দ করেন তিনি যাতে শুধু শীতের সময় নয়, সারা বছর এগুলো ব্যবহার করা যায়। “এছাড়া ত্বকের স্বাস্থ্যের দিকে লক্ষ্য রেখেও এই ধরণের মেটিরিয়ালে কাজ করা আমার বেশি পছন্দের,” জানালেন তিনি।
শুভার বুটিকে শীতপোশাকের দাম শুরু হচ্ছে ₹১,৫০০ থেকে। বিপনির তরফে পুনম মল্লিক জানালেন, “ইদানিং নানারকম পোশাক পরতে চান সব বয়সের মানুষই। কিছুদিন আগেই এক বয়স্ক মহিলা নিজের জন্য শাড়ি কিনতে এসে একটা ফিউশন জ্যাকেট কিনে নিয়ে গেলেন। সেটা তিনি শাড়ির সঙ্গে পরবেন বলেও জানালেন। তাই এখানে নানারকম পোশাকে নিজেকে মেলে ধরার প্রচুর সুযোগ রয়েছে।”