মেঘ ছেঁড়া আলোর পথে এক বন্ধুত্বের সফর

ছবি: সোনার পাহাড়

নির্দেশনা: পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়

অভিনয়ে: তনুজা, শ্রীজাত, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, যীশু সেনগুপ্ত, অরুণিমা ঘোষ, লামা হালদার, পরমব্রত

দৈর্ঘ্য: ২ ঘন্টা ২০ মিনিট

RBN রেটিং: ৩.৫/৫

বহুদূরে আছে এক সোনার পাহাড়, যেখানে পৌঁছলে থাকবে না কোনও দুঃখ। কিন্তু রাগ, জেদ, অভিমান অন্তরায়। অতিক্রমের পথও সুগম নয়। সম্পর্কের টানাপোড়েন দূরে সড়িয়ে দেয় কাছের মানুষকে। তবু চেষ্টা করা যায়। অকস্মাৎ কাউকে পাশে পাওয়াও যায়। শুরু হয় চলা। গন্তব্য সোনার পাহাড়। না, কোনও গুপ্তধন নেই সেখানে। আছে মেঘ ছেঁড়া আলোয় নিজেকে ভিজিয়ে নেওয়ার এক লোভনীয় টার্গেট।




একমাত্র ছেলে সৌম্য (যীশু) ও পুত্রবধু মৌমিতার (অরুণিমা) সাথে বনিবনা না হওয়ায়, সত্তরোর্দ্ধ উপমা (তনুজা) থাকেন একা। সময় কাটে বই পড়ে। সৌম্যর ছোটবেলার বন্ধু রাজদীপ একদিন উপমার সঙ্গে দেখা করতে আসে, সঙ্গে বিটলু (শ্রীজাত)। কিশোর বিটলুর সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় প্রৌঢ়ার। কোথাও বোধহয় খুঁজে পান কিশোর সৌম্যকে। শুরু হয় অসমবয়সী বন্ধুত্বের দুর্দান্ত এক পথচলা।

পরিচালক পরমব্রতর চতুর্থ ছবি সোনার পাহাড়। কারখানার মত ছবি বানান না তিনি। গত তিন বছরে এটাই প্রথম। এবার তিনি আরও পরিনত। সংবাদমাধ্যমে এক সাক্ষাকারে কিছুদিন আগে পরমব্রত বলেছিলেন, এই ছবির অনেকাংশই তার জীবন থেকে নেওয়া। জীবন যখন ছবির পর্দায় উঠে আসে, সিনেমা গল্প হয়ে যায়। হয়েওছে তাই।

মায়ের সাথে ছেলের বনিবনা হচ্ছে না বলেই পুত্র-পুত্রবধু ভিলেন, এই গরপড়তা ধারণা পাল্টে গেছে বহুদিন। দুপক্ষেরই যুক্তি আছে তাদের অনড় অবস্থানে। চেষ্টাও করেন তারা বরফ গলানোর। কিন্তু বন্ধুত্বের হাতটা বাড়ানো সবসময় সম্ভব হয়ে ওঠে না।

আমার মুক্তি আলোয় আলোয়

প্রায় ৩৫ বছর পর তনুজা ফিরলেন বাংলা ছবিতে। এবং কিভাবে? ছবি দেখতে দেখতে উপমা আর তনুজাকে আলাদা করা যায় না। ব্যক্তিগত জীবনেও তনুজা একাই থাকেন লোনাভলার বাংলোয়। তাই বোধহয় চরিত্রের সাথে একেবারে মিশে গেছেন তিনি।

ছোট কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে সৌমিত্র। সোনার পাহাড়ে পৌঁছনোর পেছনে যার অবদান সবথেকে বেশি। সাড়ে তিন দশক আগে তনুজার শেষ বাংলা ছবি চেনা অচেনার নায়কও তিনি। দুজনের অভিনয় রসায়ন এখনও অটুট। এরকম এক জুটি পেলে পরিচালকের কাজ অর্ধেক হয়ে যায় আর তার প্রমাণ এই ছবি।

যীশুকে নিয়ে আলাদা করে বলার কিছু নেই। বলিউড এবং বড় বাজেট বাংলা ছবির ঢক্কানিনাদের মাঝখানে তার ব্যতিক্রমী অভিনয়ের দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে সোনার পাহাড়। অরুণিমার অভিনয়ও খুবই বিশ্বাসযোগ্য। বেশ ইন্টারেস্টিং একটি চরিত্রে লামা। ছবিতে গতি এনেছেন তিনি। আজকাল ওলা-উবেরের যুগে কলকাতার ঐতিহ্য হলুদ ট্যাক্সি প্রায় উঠে যাওয়ার পথে। এই অবস্থায় সেই চালকদের কিরকম ভাতে মারার  মতন দশা, সেই প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে এই চরিত্রের মধ্য দিয়ে।

তবে তাক্‌ লাগিয়ে দেওয়া অভিনয় শ্রীজাতর। ক্যামেরার সামনে সাবলীল চলাফেরা। এত ডাকসাইটে সব অভিনেতার মাঝখানে নিজের প্রতিভা জানান দিয়ে গেল এই খুদে শিল্পী। কিছু দৃশ্যে তার চোখমুখের সারল্য অপুর সংসার ছবির কাজলকে (অলোক চক্রবর্তী) মনে করিয়ে দেয়, যে হয়ত হঠাৎই জিজ্ঞেস করে বসবে, “বাবার বুঝি টিকি থাকে?” সাম্প্রতিক সময়ে বাংলা ছবি বেশ কয়েকজন প্রতিভাবান কিশোর অভিনেতা পেয়েছে। সেই তালিকায় নবতম সংযোজন শ্রীজাত।

সত্যজিৎ ও রেলভূত

ভালো লাগে নীল দত্তর সঙ্গীত পরিচালনা। ‘কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা’র মিনিমালিস্ট সঙ্গীত আয়োজন অনবদ্য। ফাটিয়ে গেয়েছেন ইমন চক্রবর্তী।

ভালোলাগার ছবি সোনার পাহাড়। বাড়িতে বিটলুর বয়সী কেউ থাকলে অবশ্যই তাকে সঙ্গে নিয়ে যান। যে কারণে বাংলা ছবিকে একসময় বই বলা হতো—শুরু থেকে শেষ মারপ্যাঁচবিহীন সুন্দর একটা গল্প—সোনার পাহাড় অনেকটাই সেই ঘরানার ছবি। প্রত্যেকটি চরিত্রই রয়েছে আমাদের পাশে, আমাদেরই মাঝে। চিনে নিতে পারবেন নিজেকে।

Amazon Obhijaan

Like
Like Love Haha Wow Sad Angry
2

Anu

Elocution gives me a high. I follow it with almost a sinful passion. Mystery fiction is my opium. Play some retro music and dare not say ‘lend me your ears.’ Taking each day as it comes. Open to new experiences. Honest people are my friends for life. An adda freak.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *