স্পর্শকাতর বিষয় হলেও ছাপ ফেলতে ব্যর্থ

ছবি: নির্ভয়া

পরিচালনা: অংশুমান প্রত্যুষ

অভিনয়ে: গৌরব চক্রবর্তী, হিয়া দে, প্রিয়াঙ্কা সরকার, শ্রীলেখা মিত্র, শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়, সব্যস্যাচী চক্রবর্তী

দৈর্ঘ্য: ২ ঘন্টা ১৯ মিনিট

RBN রেটিং: ২.৫/৫

একেবারে সাম্প্রতিক, ২০২০ সালের ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড অনুযায়ী ভারতে প্রতিদিন গড়ে ৭৭ জন মহিলা ধর্ষিতা হন। পশ্চিমবঙ্গে পরিসংখ্যানটা দশকের ঘরে না পৌঁছলেও, কামদুনি বা পার্ক স্ট্রিটের মতো ঘটনা ভুলতে পারেনি মানুষ। নাম থেকেই ছবির বিষয়বস্তু স্পষ্ট।




গ্রামে দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ পালা দিয়ে শুরু হয় ‘নির্ভয়া’। রাত্রিবেলা পরিবারের সঙ্গে যাত্রাপালা দেখতে গিয়ে ১৩ বছরের পিয়ালি গুহর জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। স্থানীয় প্রভাবশালী নেতার মদতপুষ্ট গুন্ডাদের লালসার শিকার হয় সে। সেই নাবালিকার লড়াইয়ের গল্পই এই ছবির মূল উপজীব্য। ২০১২ সালে দিল্লির নৃশংস গণধর্ষণের ঘটনার পর ‘নির্ভয়া’ নামটি এক্ষেত্রে বেশ প্রতীকী হয়ে উঠেছে। যদিও ছবিতে দিল্লী ধর্ষণকাণ্ডের কোনও উল্লেখ নেই বরং দেখা গিয়েছে উত্তরপ্রদেশের উন্নাওকাণ্ডের ছায়া।

আরও পড়ুন: শেষ দৃশ্যে ভাঙা হোল্ডার, সত্যজিতের জয়জয়কার

ধর্ষণের পর শারীরিক ও মানসিকভাবে বিধ্বস্ত পিয়ালী ছ’মাস কোমায় থাকে। একটা সময় মেয়েটি জানতে পারে সে অন্তসত্ত্বা। তার শরীরে একটু একটু করে বেড়ে উঠছে সেদিনের সেই ঘটনার ফসল। পরিবারে অন্য কারও সমর্থন না পেলেও, পিয়ালির বাবা হাল ছাড়তে নারাজ। ওদিকে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধি (শ্রীলেখা) পিয়ালির হয়ে মাঠে নামে। ব্যক্তিগত জীবনে চরম হতাশাগ্রস্থ ঋত্বিক (গৌরব) পেশায় আইনজীবী। এক নাবালিকা মেয়ের অবাঞ্ছিত গর্ভস্থ সন্তানকে জোর করে পৃথিবীতে না আনার পক্ষে সওয়াল করে সে। তবু আইন অনুযায়ী ২৪ সপ্তাহ পেরিয়ে যাওয়ায় ওই বালিকাকে গর্ভপাত করানোর অনুমতি দেয় না আদালত। পিয়ালী জানতে পারে একমাত্র গর্ভস্থ ওই শিশুটি ছাড়া তার গোটা পরিবারের কেউই আর বেঁচে নেই। কোনও এক অজানা দুর্ঘটনায় পরিবারের প্রত্যেকেই মারা গিয়েছে। আপত্তি সত্ত্বেও পিয়ালির শরীরে একটু-একটু করে বেড়ে ওঠে শিশুটি।

প্রতিদিন আইনের সঙ্গে লড়াই করতে-করতে নিজের অজান্তেই পিয়ালী নিজের সন্তানের মা হয়ে ওঠে।

আরও পড়ুন: নেপথ্যে গাইলেন জলি, স্টেজে দাঁড়িয়ে ঠোঁট মেলালেন রাহুল দেব বর্মণ

এরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে ছবি করতে হলে পরিচালকের যে পরিণতবোধ লাগে, অংশুমানের তা নেই। দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের সমান্তরালে যখন দেখানো হচ্ছে পিয়ালির ধর্ষণ, তখন পর্দায় মাঝেমধ্যেই দেখা যায় ড্রামস এবং ইলেকট্রিক গিটারের আর্তনাদ। গ্রামের যাত্রাপালায় এ ধরনের বাদ্যযন্ত্র অযাচিত। প্রতীক কুণ্ডুর আবহসঙ্গীত গোটা ছবিতেই বেশ বেমানান।

‘নির্ভয়া’র হাত ধরে  ছবির জগতে পা রাখলেন ‘পটলকুমার গানওয়ালা’ খ্যাত হিয়া দে। ছবির নামমভূমিকায় তাঁর অভিনয় উল্লেখের দাবি রাখলেও ধারাবাহিকে চোস্ত ‘পটল’কে বড়পর্দার পিয়ালির মতো কোনও চরিত্র হয়ে উঠতে গেলে আরও ঘষামাজা করতে হবে। ছবির দ্বিতীয়ার্ধে একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে আদালতের বিচারপর্ব। বিচারক (সব্যস্যাচী), পিয়ালির আইনজীবী ঋত্বিক, বিরোধীপক্ষের আইনজীবী ঋতব্রত (শান্তিলাল),এই তিনজনের মুখে একই ধরনের সংলাপ ঘুরেফিরে আসে। এত দীর্ঘ ও পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচারপর্বে আইনের কোন ধারায় কী লেখা আছে তা শুনতে-শুনতে বেশ একঘেয়ে লাগে।



পেশাদার আইনজীবীরা কখনওই আবেগপ্রবণ হন না। তবে একেবারে উল্টো পথে হেঁটে আবেগ ও মানবিকতাকে প্রাধান্য দেওয়া আইনজীবীর চরিত্রে গৌরব যথাযথ। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধির চরিত্রে স্নেহশীল ও সহমর্মী শ্রীলেখাকে ভালো লাগে। ছবিতে ঋত্বিকের স্ত্রী আরাত্রিকার ভূমিকায় প্রিয়াঙ্কার মুখে সংলাপ নেই বললেই চলে। প্রৌঢ় বিচারকের ভূমিকায় মানানসই সব্যসাচী। চিত্রনাট্য ও সংলাপের দুর্বলতার কারণে সব্যসাচী ও শান্তিলালের মতো বলিষ্ঠ অভিনেতাদের প্রায় কিছুই করার ছিল না। তবু তাঁরা নিজেদের অভিনয় গুণে ছবিটিকে উৎরে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এছাড়া গ্রামে বেড়ে ওঠা পিয়ালির উচ্চারণে শহুরে টান, ছ’মাস কোমায় থাকার পর জ্ঞান ফিরতেই তার উত্তেজিত হয়ে ওঠা, এরকম বেশ কিছু দৃশ্য পরিচালকের মুন্সিয়ানার  প্রতি অনেক প্রশ্ন চিহ্ন তুলে দিয়ে যায়। হাসপাতালে ওটির দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরও প্রসবযন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকা পিয়ালির গলার আওয়াজ কীভাবে শোনা গেল তা বোধগম্য হলো না।

তাই বিষয়বস্তু গুরুত্বপূর্ণ হলেও, চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় খামতির জন্য মনে ছাপ ফেলতে অক্ষম ‘নির্ভয়া’।



Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Ankeeta

Sleep, travel, eat, repeat! Anchor, presenter, news reader, editor by profession. Long drives and exploring life are my favorite options. Stuck between food and fitness. Intoxicated by music. Painting, singing, photography and Rabindranath are my soulmates

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *