Shastri Film Review: রাখে মিঠুন মারে কে, কান্ডারি একমাত্র তিনিই

ছবি: শাস্ত্রী

পরিচালনা: পথিকৃৎ বসু

অভিনয়ে: মিঠুন চক্রবর্তী, দেবশ্রী রায়, সোহম চক্রবর্তী, রজতাভ দত্ত, সৌরসেনী মৈত্র, কৌশিক সেন, অনির্বাণ চক্রবর্তী, আয়ুশ দাস

দৈর্ঘ্য: ২ ঘণ্টা ১২ মিনিট

RBN রেটিং ★★★★★★☆☆☆☆

‘এই ছবিটি সকলের মধ্যে ছড়িয়ে দিন, অমুক ভগবান আপনাকে আশীর্বাদ করবেন’; ‘এই ছবিটি শেয়ার না করলে আপনি তমুক ভগবানের রোষে পড়বেন’। এমন কতশত সাবধান বাণী প্রতিদিন সমাজমাধ্যমে ভর করে আমাদের সকলের ফোনের স্ক্রিনে ভেসে ওঠে। শিক্ষিত মানুষ মাত্রেই জানে বিজ্ঞানের জয়যাত্রার যুগে ভাগ্য কিংবা ভবিষ্যত গণনা এক সাজানো প্রহসন মাত্র। তবু সেই মানুষই তাবিজ, কবচ, আংটি পরে দুর্ভাগ্যকে দূরে সরিয়ে রাখতে চায়। 



পরিমল সান্যাল (মিঠুন) এক ভাগ্যহত নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষ। স্ত্রী সরলা (দেবশ্রী) ও ছেলে টোটনকে (আয়ুশ) নিয়ে নিজের পৈত্রিক বাড়িতে বাস করেন তিনি। আর্থিক অবস্থা শোচনীয় হলেও লটারির টিকিট কেনা এবং যেখানে-সেখানে জ্যোতিষী পেলেই হাত দেখানো তার অভ্যাস। এদিকে চটকলের চাকরি হারানোর পর সিকিউরিটি গার্ডের চাকরিটাও যায়-যায়। ওদিকে এলাকার কুখ্যাত ব্যবসায়ী রমেনের (রজতাভ) নজর পড়েছে বাড়িটার ওপর। অসহায়ভাবে ঈশ্বরের মূর্তির সামনে চোখের জল ফেলতে ফেলতেই একদিন হঠাৎ ভাগ্য ফিরে যায় পরিমলের। তিনি হয়ে ওঠেন নামকরা ভবিষ্যতবক্তা পরিমল শাস্ত্রী। তারপরের গল্প সিনেমাহলে। 

শাস্ত্রী অর্থাৎ গডম্যান। এই গডম্যানের চরিত্রে এর আগে হিন্দি ‘ও মাই গড’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন মিঠুন। এ ছবিতেও সেই গল্পের ছায়া রয়েছে। বড় চুল, গেরুয়া চাপা আলখাল্লা, উত্তরীয়, গলায় ও হাতে রুদ্রাক্ষ এবং পকেটে চশমা। একইরকম না হলেও ভণ্ড লীলাধর স্বামী আর এই ছবির শাস্ত্রীর মধ্যে খুব একটা অমিল নেই। তবে এখানে লড়াইটা বিজ্ঞানের সঙ্গে।

আরও পড়ুন: ফিরছেন ভাদুড়িমশাই, এবারও চিরঞ্জিত

বিষয় হিসেবে জ্যোতিষ বনাম বিজ্ঞান আকর্ষণীয় হলেও চিত্রনাট্যের দুর্বলতায় গল্প ঠিক ততটা জোরালো হয়ে ওঠে না। ছবিতে নব্বইয়ের দশকের ছাপ স্পষ্ট, যার আবেদন এই সময়ের দর্শকের কাছে কতটা হবে বলা মুশকিল। অ্যাস্ট্রোফিজ়িসিস্ট সৈকতের (সোহম) সঙ্গে শাস্ত্রীর আদর্শগত বিরোধ থাকলেও সৈকতের চরিত্র খুব একটা জোরালো নয়। সৌরসেনীর চরিত্রটি না থাকলেও কিছু এসে যেত না। সরলা হিসেবে দেবশ্রীও খুব বেশি সুযোগ পেলেন না। এই ছবির এক এবং অন্যতম বিষয় একজনই, তিনি মিঠুন। নিজের ক্যারিশমা এবং অভিজ্ঞতা দিয়েই ছবির দুর্বলতা ঢাকার চেষ্টা করেছেন তিনি। সঙ্গে যথাসাধ্য সঙ্গত করেছেন রজতাভ, কৌশিক, অনির্বাণ এবং শাশ্বত। এক অন্য ধরনের চরিত্রে রয়েছেন শাশ্বত, যার মাহাত্ম্য বোঝা যাবে ছবি দেখলে। 

আরও পড়ুন: খলচরিত্রে রণবীর, ঘোষণা জন্মদিনে

ছবির বেশ কিছু জায়গা মনে প্রশ্ন রেখে যায়। যেমন সৈকতের সঙ্গে শাস্ত্রীর প্রথম দেখা হওয়া। দুর্ঘটনার সময় যদি দুজনের দেখা হয়েই থাকে তাহলে সেটা তখনই দেখানো হলো না কেন? গাড়িটা কি তবে সৈকতেরই ছিল? নাহলে সে হাসপাতালে এসে সাহায্য করে গেল কেন? সরলার সঙ্গে সব মিটিয়ে ফেলতে বলে দীপু, তারপরেই পর্দায় দেখা যায় পুজো প্যান্ডেলের গান যেখানে শাস্ত্রী ও সরলার সঙ্গে অংশ নেয় সৈকত এবং তার বান্ধবীও। গল্পের সঙ্গে এই গানের কোনও যোগই নেই। আবার চ্যানেলের অনুষ্ঠান ভেঙে দিতে রমেন লোক পাঠালে তাদের সঙ্গে বাণিজ্যিক হিরোর আদলে সৈকতের মারামারি তার শিক্ষিত বুদ্ধিমান চরিত্রের সঙ্গে খাপ খায় না। রাজনৈতিকভাবে জনপ্রিয় ট্যাগলাইন ‘খেলা হবে’ বা ‘জয় শ্রীরাম’ সৈকত এবং শাস্ত্রীজির মুখে বসানোর কারণে হলে হাততালি পড়তে পারে। তবে চিট ফান্ড কেলেঙ্কারি এবং সেখানে বিখ্যাত মুখের ব্যবহার সংক্রান্ত দৃশ্য ভেবেচিন্তেই রাখা হয়েছে বোঝা যায়।

এ ছবিতে মিঠুনই সব। অন্য কোনও চরিত্রকেই শাস্ত্রী চরিত্রের সঙ্গে সমান্তরালভাবে তৈরি করা হয়নি। ফলে ছবির শেষ কিছুটা আরোপিত লাগে। এমনকি শাস্ত্রীর বেড়ে ওঠাও একটু বেশি তাড়াতাড়ি ঘটে যায় ছবিতে। তবে সেই শাস্ত্রী ইমেজের ম্যাজিককে ব্যবহার করা হয়েছে গোটা ছবি জুড়ে।



মিঠুন তাঁর মতোই সাবলীল এবং অপ্রতিরোধ্য। দেবশ্রীর সঙ্গে তাঁর রসায়ন আর একটু দেখানো যেতে পারত। কিছু দৃশ্যে দেবশ্রী এখনও আগের মতোই, তবে তাঁর জন্য চিত্রনাট্যে বিশেষ কিছু ছিল না। সোহম তাঁর চরিত্রে যতটা করা যায় করেছেন। 

ছবির চিত্রগ্রহণ তেমন ঝকঝকে নয়, তবে সম্পাদনা যথাযথ। গানগুলি মনে রাখার মতো নয়। বস্তুত মিঠুন ছাড়া এ ছবিতে মনে রাখার মতো আর কিছুই নেই। তবে বিশ্বাস ও বিজ্ঞানের লড়াই এবং তার ফলাফল দেখতে পুজোর আবহে একবার হলে গিয়ে দেখা আসা যেতে পারে ‘শাস্ত্রী’। 




Like
Like Love Haha Wow Sad Angry
1

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *