অডিটোরিয়ামে বসে অনুষ্ঠান দেখার অভিজ্ঞতা দেবে ‘শান্তি’ অনলাইন কনসার্ট
RBN Web Desk: করোনা আবহে গত কয়েকমাসে প্রায় গোটা বিশ্বে স্বাভাবিক জনজীবন ব্যাহত হয়েছে। জরুরী পরিষেবার সঙ্গে সঙ্গে অফিস শপিং মল খুললেও বন্ধ রয়েছে সব রকমের বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের প্রদর্শন। সিনেমা হল ও অডিটোরিয়ামের সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ হয়ে গেছে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের অনুষ্ঠানও। অনলাইনে ছোটখাটো অনুষ্ঠান চললেও পর্যাপ্ত সময়ের বিশুদ্ধ শাস্ত্রীয় সঙ্গীত পরিবেশনের কোনও মাধ্যম সেভাবে না থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিলেন এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ছোটবড় সমস্ত শিল্পীরাই। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে সেতার বাদক কুশল দাস তাঁর আরতি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে সম্প্রতি ‘শান্তি’ অনলাইন ক্লাসিকাল কনসার্ট সিরিজের সূচনা করেছেন। সম্প্রতি এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ কথা ঘোষণা করলেন তিনি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়, তেজেন্দ্র নারায়ণ মজুমদার, শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, তন্ময় বোস, কৌশিকি চক্রবর্তী, জ্যোতি শংকর রায় ও দেব শংকর রায় (ভায়োলিন ব্রাদার্স), দেবাঞ্জন ভট্টাচার্য ও কল্যাণজিৎ দাস।
‘শান্তি’ কনসার্ট সিরিজের প্রথম পর্ব জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন সঙ্গীতশিল্পী ওমকার দাদারকর ও বিশিষ্ট তবলিয়া পন্ডিত অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়। আগামী পর্ব অনুষ্ঠিত হবে ২৯ আগস্ট। প্রথমাংশে থাকবেন সরোদ শিল্পী দেবাঞ্জন ও তবলিয়া সন্দীপ ঘোষ। পরবর্তী অংশে থাকবেন সঙ্গীতশিল্পী উস্তাদ রাশিদ খান, বিশিষ্ট তবলিয়া পন্ডিত শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, হারমোনিয়ামে শ্রী হিরন্ময় মিত্র ও সারেঙ্গিতে সরোবর হুসেন।
বর্তমান পরিস্থিতিতে অনলাইনে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত পরিবেশনের অভিনব এই উদ্যোগকে স্বাগত জানালেন উপস্থিত সমস্ত শিল্পীরা। প্রথম পর্বের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তৃপ্ত অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় জানালেন, “এতদিন ধরে সকলেই অনলাইন ক্লাস নিচ্ছিলাম আমরা, সেটা কিছুতেই সামনে বসে শেখানোর মতো হয় না। তবে ‘শান্তি’ এমন একটা অডিটোরিয়াম ফিল তৈরি করেছে যে আমাদের মনে হচ্ছে হলে বসেই অনুষ্ঠান করছি। সাধারণ অনলাইন অনুষ্ঠানের থেকে এই অভিজ্ঞতা একেবারে আলাদা।”
বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তন্ময় জানালেন, “গান বাজনা যেহেতু জরুরি পরিষেবা নয় তাই সেটাকে সেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি এই অবস্থায়। কিন্তু মানুষের বেঁচে থাকার জন্য এখন বিনোদনটাই বেশি জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকেই টিউশন করিয়ে অর্থ উপার্জন করেন। এই অবস্থায় মাসের পর মাস জমানো টাকার ভরসায় দিন কাটানো কিছু শিল্পীর পক্ষে হয়তো সম্ভব, অধিকাংশের পক্ষেই তা অসম্ভব।” এ প্রসঙ্গে শুভঙ্কর জানালেন, “বহু মানুষ আছেন যারা এই মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে জড়িয়ে আছেন, তাদের উপার্জন এই মুহূর্তে একেবারেই বন্ধ। তাই এমন একটা প্ল্যাটফর্মের দরকার ছিল যেখানে মানুষ টিকিট কেটে অনুষ্ঠান দেখবেন, এবং শিল্পীরাও তাঁদের উপযুক্ত সম্মান পাবেন। প্রথম পর্বে আমরা যেরকম সাড়া পেয়েছি তাতে করে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাবার পরেও এই উদ্যোগকে চালু রাখা যেতেই পারে, কারণ একটা অডিটোরিয়ামে যত মানুষ কনসার্ট শুনতে পারেন এক্ষেত্রে তার চেয়ে অনেক বেশি মানুষের কাছে আমরা পৌঁছতে পারবো।”
বর্তমান অবস্থায় অনেকেই অনলাইনে অনুষ্ঠান শুনছেন, কিন্তু শিল্পের যথাযোগ্য মূল্য দিতে অনেকেরই আপত্তি রয়েছে এ বিষয়ে উপস্থিত প্রায় সমস্ত শিল্পীরাই একমত। তাই মানুষকে টিকিট কেটে ভাল জিনিস দেখার ও শোনার অভ্যেস করতে হবে বলে মনে করেন শিল্পীরা। এই প্রসঙ্গে তেজেন্দ্র নারায়ণ যুক্তি, “যদি ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলো টাকা দিয়ে সাবস্ক্রাইব করা যায় তাহলে ভাল গান শুনতে কেন মানুষ টাকা খরচ করবেন না? একটা শিল্প মাধ্যম কখনো বিনামূল্যে চলতে পারে না।”
আরও পড়ুন: যন্তর মন্তর কক্ষের নেপথ্যে
সব শেষে এই অভিনব উদ্যোগ প্রসঙ্গে কুশল জানালেন, “আমরা ধরে নিয়েছিলাম আগামী এক বছর কোন অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠান করা যাবে না। সেখান থেকেই কল্যাণজিৎ এই প্রস্তাব দেয় যে একটা অনলাইন মাধ্যমে যদি টিকিট দিয়ে মানুষ অনুষ্ঠান শোনেন তাহলেই একমাত্র শাস্ত্রীয় সঙ্গীতকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব।”
অনলাইনে ‘শান্তি’ কনসার্ট দেখার জন্য তিনরকম টিকিটের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এগুলির দ্বারা একদিন, এক সপ্তাহ ও একমাস সময়কাল ধরে ওই লিঙ্কে ওই অনুষ্ঠানটি দেখা যাবে বলে জানালেন কল্যাণজিৎ।
১২ পর্বের এই কনসার্ট সিরিজ দেখা যাবে ভিউসি পোর্টাল ও আরতি ফাউন্ডেশনের নিজস্ব অনলাইন মাধ্যমে।