লন্ডনে ব্লু প্লাক পেল সত্যজিতের বাড়ি, উদ্যোগ প্রবাসী অন্বয়ের

RBN Web Desk: বাঙালি তথা ভারতীয় ট্যুরিস্টদের জন্য লন্ডন শহর একটি নতুন দ্রষ্টব্য স্থান পেতে চলেছে। ১৯৫০ সালে বিজ্ঞাপনী সংস্থা ডিজে কিমারের হয়ে লন্ডন গিয়েছিলেন সত্যজিৎ রায় (Satyajit Ray)। সঙ্গে ছিলেন সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী বিজয়া রায়ও। সেই সময় যে বাড়িটিতে তাঁরা পাঁচ মাস কাটিয়েছিলেন সেই বাড়িতে বসতে চলেছে ব্রিটিশ সরকারের বিশেষ সম্মান ব্লু প্লাক ফলক। 

কী এই ব্লু প্লাক? এ হলো এমন একটি ফলক যা যুক্তরাজ্যের কোনও স্মরণীয় ব্যক্তি, ঘটনা বা স্থানকে স্থায়ীভাবে চিহ্নিত করে। সেই হেরিটেজ সম্মান এবার পেতে চলেছে সত্যজিতের স্মৃতিধন্য নরম্যান ক্লেয়ারের এই বাড়িটি। তবে এই সম্পূর্ণ ব্যাপারটি সংঘটিত করা সম্ভব হয়েছে এক প্রবাসী বাঙালির উদ্যোগেই। ব্রিটেনের সলিহল শহরের বাসিন্দা তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী অন্বয় গঙ্গোপাধ্যায়ের চেষ্টাতেই সে দেশের সরকার এই ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিতে চলেছে। 

১৯৫০ সালে লন্ডন শহরে এসে বন্ধু নরম্যানের ব্যবস্থাপনায় তাঁর মায়ের বাড়িতে ওঠেন সস্ত্রীক সত্যজিৎ। হ্যাম্পস্টেডে অবস্থিত এই বাড়ির দোতলায় দুটি ঘর নিয়ে থাকতেন তাঁরা। এই বাড়ির কথা বিজয়া রায় তাঁর বইতে লিখেছেন। এছাড়া প্রফেসর শঙ্কুর ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্পে হ্যাম্পস্টেডে জেরেমি সন্ডার্সের যে বাড়ির বর্ণনা সত্যজিৎ লিখেছেন, এটিই সেই বাড়ি। বর্তমান মালকিন মেরিলিন ফ্রিকার সত্যজিৎ সম্পর্কে আগে কিছু জানতেন না। জেনে খুবই উৎসাহিত হন এ ব্যাপারে কথা বলতে।

আরও পড়ুন: সব চরিত্র ক্রিমিনাল

২০২১ সালে সত্যজিতের জন্মশতবর্ষে, যুক্তরাজ্যের একটি বাঙালি সংস্থার হয়ে ‘এক শতকের গপ্পো’ নামে একটি ডকু সিরিজ় তৈরির কাজ করতে গিয়ে বাড়িটি সম্পর্কে জানতে পারেন অন্বয়। হ্যাম্পস্টেড জানা থাকলেও রাস্তার নাম জানা ছিল না। এই প্রসঙ্গে কলকাতা থেকে সাহায্য করেন সত্যজিতের পুত্র সন্দীপ রায় ও পুত্রবধূ ললিতা রায়। ললিতাদেবীর দেয়া বেশ কিছু লন্ডনের চিঠি থেকে ঠিকানা জানা যায়, ৫০ নম্বর উইলোবি রোড। এ ব্যাপারে বিভিন্ন সময়ে অন্বয়কে সাহায্য করেছেন সর্বজিৎ মিত্র, সর্বাণী দেবী, সুমন ঘোষ, সাগ্নিক চট্টোপাধ্যায়, শ্যামল চৌধুরী ও দেবাশিস মুখোপাধ্যায়।

Satyajit Ray

সত্যজিৎ রায়

লন্ডনের এই হ্যাম্পস্টেড এলাকায় বহু বাড়িতে রয়েছে ব্লু প্লাক। এ অঞ্চলে নানা সময়ে থেকেছেন জন কিটস, সিগমন্ড ফ্রয়েড, আগাথা ক্রিস্টি, ডি এইচ লরেন্স, রিচার্ড বার্টনের মতো ব্যক্তিত্বরা। এমনকী এই বাড়ির কাছেই একটি বাড়িতে ১৯১২ সালে থেকেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সেই বাড়িটিতেও ব্লু প্লাক রয়েছে। ওই এলাকায় কিটসের বাড়ি বর্তমানে মিউজজ়িম করা হয়েছে। অবশ্য মিউজিয়়ম হবে কিনা সেটা নির্ভর করে সেই বাড়ির মালিকের ওপর, জানালেন অন্বয়।

আরও পড়ুন: সম্পর্কের টানাপোড়েনে দেবাশিস, প্রিয়াঙ্কা, বিবৃতি, সোহম

গত বছর এপ্রিল মাসে এই বাড়িটিতে ফলক লাগাবার ব্যাপারে সরকারের কাছে দরখাস্ত করেন অন্বয়। উত্তর আসে এ বছর অক্টোবর মাসে। আরও কিছু তথ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে সরকার এই বাড়িটিতে ব্লু প্লাক ফলক বসাবার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে জানিয়েছে।

অন্বয় রেডিওবাংলানেট-কে জানালেন, “সরকারি কাজ বলে একটু সময় লাগছে। তবে কাজটা হবেই কারণ আমি যে সব চিঠিপত্র জমা দিয়েছি তাতে ওই ঠিকানা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। একজন সত্যজিৎ অনুরাগী হিসেবে আমি যে এটুকু করতে পেরেছি সেটাই আমার কাছে আনন্দের। তবে মিউজ়িয়ম হোক বা না হোক, যেটা হতে চলেছে তাতে যেমন বাঙালি শার্লক হোমসের বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে একটা পেন্নাম করে নেয় ঠিক ফেলুদার মতো, সেরকম একটা ব্যবস্থা নিশ্চয়ই করা যাবে যেখানে এই বাড়ির সামনে দাঁড়িয়েও সকলে গর্ববোধ করবে।”




Like
Like Love Haha Wow Sad Angry
11

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *