‘আপত্তি উঠবে বলে কি নতুন কাজ হবে না?’
শেষ ফেলুদা ছবির পর কেটে গিয়েছে ছ’ বছর। তবু ‘ডবল ফেলুদা’র পর উপযুক্ত অভিনেতার অভাবে আর ফেলুদাকে নিয়ে ছবি করেননি পরিচালক সন্দীপ রায়। সত্যজিৎ রায়ের সৃষ্ট গোয়েন্দা চরিত্র ফেলুর ভূমিকায় এর আগে সেলুলয়েডে দেখা গিয়েছে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সব্যসাচী চক্রবর্তী ও আবির চট্টোপাধ্যায়কে। অবশেষে চতুর্থ ফেলুরূপে বড়পর্দায় আসতে চলেছেন ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত। সম্প্রতি মুক্তি পেল ‘হত্যাপুরী’ ছবির ট্রেলার। রেডিওবাংলানেট-এর সঙ্গে কথা বললেন সন্দীপ।
ইতিমধ্যেই ওয়েব সিরিজ়ে ফেলুদার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন টোটা রায়চৌধুরী। কিছুদিনের মধ্যে একই চরিত্রে অন্য একটি ওয়েব সিরিজ়ে দেখা যাবে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়কেও। বারবার ব্যবহারে ফেলুদার ইমেজ কি কিছুটা হালকা হয়ে যাচ্ছে?
আমার তা মনে হয় না। এরক্যুল পোয়ারো একাধিকবার হয়েছে। এখনও হচ্ছে। শার্লক হোমসের চরিত্রেও বহু অভিনেতাকে দেখা গিয়েছে। সেখানে কি এই চরিত্রগুলো হালকা হয়ে গেছে বলে মনে হয়? যে কোনও কাজের ক্ষেত্রেই, ছবি বা সিরিজ় যদি তেমন সলিড হয়, তাহলে সেটা দর্শকের নিশ্চয়ই মনে ধরবে। ‘হত্যাপুরী’ বরাবর আমার ভীষণ পছন্দের গল্প। চরিত্রগুলো খুব ইন্টারেস্টিং। তাছাড়া ফেলু-তোপসে-জটায়ুর মধ্যে রসায়নও খুব ভালো। তাই সব মিলিয়ে আমার তো মনে হয় দর্শকের ভালো লাগবে।
নতুন ফেলুকে দর্শক কীভাবে নেবে বলে মনে করেন?
নতুন ফেলুদা নিয়ে বরাবরই দর্শকের মধ্যে উন্মাদনা ছিল। বেনুকে (সব্যসাচী) নিয়েও লোকে প্রথমে সমালোচনা করেছে। এ ক্ষেত্রেও হবে জানি। নতুন যাই করতে যাব, দর্শক আপত্তি করবেই। তাই বলে কি নতুন কাজ হবে না? চেষ্টা তো করতেই হবে। ইন্দ্রনীলকে দেখে আমার মনে হয়েছে ও পারবে। একেবারে নতুন প্রজন্মের ফেলুকে দেখা যাবে এই ছবিতে।
ফেলুদার হাতে মোবাইল ফোনও দেখা গেল
ছবিটা এই সময়ের নিরিখে, তাই ফেলুকে এবার মোবাইল ফোনও দিয়েছি। সেটা না হলে ছোটরা ফেলুকে আপন করতে পারবে না। তবে সেই মোবাইলও জোর করে দেওয়া নয়, গল্পে আসবে খুব স্বতঃস্ফূর্তভাবে। এ ছবিতে প্রায় সবই নতুন বলা যায়।
আরও পড়ুন: শেষের সেদিন, উপস্থিত ছিলেন শুধু মহেশ ও ড্যানি
ইন্দ্রনীলের ফেলুদা হয়ে উঠতে কতটা সময় লাগল?
ফেলুর চরিত্রে অভিনয় করতে চেয়ে বেনু একসময় নিজে থেকে আমার কাছে এসেছিল । আমি ওর ওপর চরিত্রটা চাপিয়ে দিইনি। তেমনই ইন্দ্রনীলও নিজে এসেছিল। ওকেও জোর করে আমি ফেলু বানাইনি। অনেকদিন আগে, তখনও ‘ডবল ফেলুদা’ হয়নি, ইন্দ্রনীল বলেছিল নতুন ফেলুদা হলে ও সেই চরিত্রে অভিনয় করতে চায়। তারপর তো আমি বেনুকে নিয়েই ‘ডবল ফেলুদা’ করলাম। তারপর একবার দেখা হতে ইন্দ্রনীল জানিয়ে রেখেছিল ও আর কিরীটি চরিত্রে কাজ করছে না। তখন আমি সত্যিই চিন্তাভাবনা করি। আর প্রস্তুতির ব্যাপারে বলব, ও যেহেতু প্রবাসী বাঙালি তাই ওর বাংলার ওপর আলাদাভাবে জোর দেওয়া হয়েছে। সেটা যেমন আমরা চেষ্টা করেছি ওকে আমাদের মতো করে বাংলা বলাতে, ও নিজেও পরিশ্রম করেছে। আর ওই যে রসায়নের কথা বললাম, সেটা তৈরি হওয়া খুব দরকার ছিল। সেটা হতেও সময় লেগেছে।
আপনি নিজে সোশ্যাল মিডিয়ায় না থাকলেও সেখানে ফেলুদার চরিত্রাভিনেতাকে নিয়ে যে উন্মাদনা চলে সেটার চাপ কি বাইরে থেকে আপনার ওপরেও কিছুটা পড়ে?
আমি শুনতে পাই। চাপ থাকে না, তবে এক্ষেত্রে একটা জিনিস বুঝতে হবে যে ফলাফল হয় নেগেটিভ না হলে পজ়িটিভ, কিছু একটা হবে। সব পজ়িটিভ হয়ে গেলে তো মজা নেই। একটা ফ্রিকশন দরকার। দেখাই যাক না, যদি এদের তিনজনকে দর্শকের ভালো লেগে যায় তাহলে খুব শিগগিরই আবার ফেলুদা আসবে। এদের তিনজনের যা বয়স তাতে করে বেশ কয়েকটা ফেলুদা করা যাবে বলে মনে হয় আমার।
‘হত্যাপুরী’র পর কোন ছবি আসবে?
ফেলু আর শঙ্কুর দুটো গল্প নিয়ে ছবি করার পরিকল্পনা অনেকদিন ধরেই রয়েছে। সেটা এবার করব। এছাড়া ‘হত্যাপুরী’র পরেই ‘চার’-এর মতো একটা সংকলন করতে চাই। সেখানে বাবার (সত্যজিৎ) লেখা ছাড়াও অন্য লেখকদের কাহিনী থাকবে।
ছবি: গার্গী মজুমদার