শ্যামবাজারের সেট বানিয়ে শুটিং, চিটফান্ড কেলেঙ্কারি নিয়ে মুক্তি পাচ্ছে রিঙ্গোর ছবি
RBN Web Desk: শ্যামবাজার পাঁচমাথার মোড়ের মুখে যানজট নতুন কোনও ঘটনা নয়। শুধু শ্যামবাজার কেন, পার্ক সার্কাস, হাজরা, তারাতলা, এক্সাইড, কলকাতার সব বড় মোড়গুলোতেই দিনের যে কোনও সময় ট্র্যাফিক জ্যাম শহরবাসীর গা সওয়া। তাই বলে চার ঘন্টাব্যাপী যানজট? তাও একবার হয়েছিল। একটি দুর্ঘটনার কারণে চারঘন্টা যানবাহন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল শ্যামবাজারের মতো ব্যস্ত জায়গায়। তবে শুধু সেটাই ঘটনা নয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে ছিল আরও অজস্র সব হারানো, নিঃস্ব, হেরে যাওয়া মানুষের জীবনের গল্প। সেই সমস্ত গল্প নিয়েই আসছে অর্ণব রিঙ্গো বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি ‘এক যে আছে শহর’।
ছবিতে বিভিন্ন ভূমিকায় অভিনয়ে রয়েছেন দেবশঙ্কর হালদার, রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায়, চৈতি ঘোষাল, অপরাজিতা ঘোষ, জুন মাল্য, সুস্মিতা দে, রূপসা গুহ, সায়নী দত্ত ও রানা মিত্র।
ছবির কাহিনী ২০১৩ সালে ঘটে যাওয়া এক চিটফান্ড কেলেঙ্কারির ফলস্বরূপ সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা নিয়ে। এক সন্ধ্যায় শ্যামবাজার পাঁচমাথার মোড়ে ঘন্টা চারেকের জন্য থমকে যায় ট্র্যাফিক ব্যবস্থা। শ্যামবাজার থেকে কোনও রাস্তা যেমন ডানপল বা খড়দহের দিকে যায় তেমনই কোনও রাস্তা হয়তো যায় পার্ক স্ট্রিটের দিকে, কোনওটা আবার হাতিবাগান হয়ে সল্টলেকের দিকে।
আরও পড়ুন: শেষের সেদিন, উপস্থিত ছিলেন শুধু মহেশ ও ড্যানি
এই পাঁচ রাস্তার মোড়ে যানজটে দাঁড়িয়ে থাকা পাঁচমিশেলী মানুষের জীবনের কাহিনীই থাকছে ‘এক যে আছে শহর’-এ। এই পাঁচজন মানুষই ওই চিটফান্ড কেলেঙ্কারির সঙ্গে কোনও না কোনওভাবে সম্পর্কযুক্ত।প্রত্যেকেই নানা সমস্যায় জর্জরিত। এই কয়েক ঘন্টার যানজটে পাঁচজন মানুষ নানাভাবে নিজেদের অজান্তেই একে অপরকে সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে শিখিয়ে দেয়, সাহায্য করে নতুন করে বাঁচতে। এরকম কোনও বিষয় নিয়ে বাংলায় সম্ভবত এটিই প্রথম ছবি।
ছবিটা তৈরি হয়েছিল ছ’বছর আগে। কিন্তু সেই সময় কোনও বিশেষ কারণে ছবিটি মুক্তি পায়নি। এতদিন পর ডিজিটাল (ওটিটি) মাধ্যমে মুক্তি পেতে চলেছে কলকাতার বুকে অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারির জেরে সাধারণ মানুষের হয়রানির গল্প নিয়ে তৈরি হওয়া এই ছবি।
“এই ট্র্যাফিক জ্যামের ঘটনাটা সত্যি,” রেডিওবাংলানেট-কে জানালেন রিঙ্গো। “একটা দুর্ঘটনার জেরে প্রায় চার ঘন্টা সব গাড়ি আটকে গিয়েছিল। সেই দৃশ্যের শুটিং আমরা পৈলানে করি। কৃত্রিমভাবে শ্যামবাজারের সেট ওখানে বানানো হয়েছিল। সঙ্গে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল প্রায় শ’চারেক গাড়ি, বাস, ট্রাম, স্কুটার, বাইক, এইসব। এই সমস্তকিছু নিয়ে বিশালভাবে শুট করেছিলাম আমরা। ট্রেলারে একটা শ্যামবাজারের রাস্তার দৃশ্য আছে, ওটা কিন্তু আসল শ্যামবাজার নয়। আমাদের তৈরি করা।”
সে সময় ‘এক যে আছে শহর’ নামে কোনও এক এফএম চ্যানেলে একটি অনুষ্ঠান হতো। সেই নাম থেকেই ছবির নাম রাখা হয়েছে বলে জানালেন রিঙ্গো। “গল্পটা আসলে সাতদিনের। ওই রাতের আগের সাতদিনে ওই পাঁচজনের জীবনে কী-কী বিপদ ঘটে গেছে তাই নিয়েই ছবি। এই বিপদের পিছনে কোনও না কোনওভাবে ওই আর্থিক কেলেঙ্কারি জড়িত। আমার তো মনে হয় এই আর্থিক কেলেঙ্কারিও একটা প্যান্ডেমিক ছিল। অতিমারীর সময়ে যেমন কেউ কাউকে সাহায্য করাে না, নিজের বিপদের মোকাবিলা নিজেকেই করতে হয়, সে সময়েও তেমনই হয়েছিল। এই বিষয়টা নিয়ে আর কেউ ছবি করছেন বলে আমার জানা নেই,” বললেন রিঙ্গো।
আরও পড়ুন: গার্হস্থ্য হিংসার শিকার, তবুও ঔজ্জ্বল্যে অম্লান
তৈরির ছ’বছর পর ছবির মুক্তি ও সাফল্য প্রসঙ্গে আশাবাদী রিঙ্গো। “কাজটা এত ভালো হয়েছিল যে আমি জানতাম আজ নয় কাল ছবিটা মুক্তি পাবেই। আমরা খুব গুছিয়ে শুটিংটা করেছিলাম। সিনেমার শুট এরকমই হওয়া উচিত,” বললেন তিনি।
এই ছবিটি তাঁর আজ অবধি করা সেরা কাজ বলে মনে করেন রিঙ্গো।
ছবির কাহিনী, চিত্রনাট্য, সম্পাদনা ও চিত্রগ্রহণ করেছেন রিঙ্গো। গানের কথা কবীর চট্টোপাধ্যায়ের ও সুর শিবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
নতুন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ফ্লিক্সবাগ-এ অক্টোবরে মুক্তি পাবে ‘এক যে আছে শহর’।
ছবি: রাজীব মুখোপাধ্যায়