ট্রেলার দেখে যাই মনে হোক, থ্রিলার নয় ‘সেভেন’: অঞ্জন
পাঁচ বন্ধু মিলে বেড়াতে যায় পাহাড়ে। অদ্ভুত পরিস্থিতির মাঝে তাদের হাতে আসে টাকাভর্তি একটা ব্যাগ। এরপর কী হবে? বন্ধুত্ব অটুট থাকবে কি? নাকি ওই টাকাকে ঘিরে বন্ধুদের মধ্যে তৈরি হবে টানাপোড়েন? এরকমই এক টানটান গল্প নিয়ে অঞ্জন দত্তের ‘সেভেন’ মুক্তি পেল আজ। ট্রেলার দেখে যাই মনে হোক, ‘সেভেন’কে থ্রিলার বা রহস্য গোত্রের ওয়েব সিরিজ় বলতে তিনি নারাজ। তাহলে কী নিয়ে এই সিরিজ়? বললেন অঞ্জন, শুনল রেডিওবাংলানেট
ইদানিং অঞ্জন দত্তের ছবি বা সিরিজ় মানেই কি পাহাড়, বেড়াতে যাওয়া এবং ক্রাইম? একটু একরকম হয়ে যাচ্ছে না?
দেখো, গল্পটা পাহাড়ে হলেও এটা কিন্তু একেবারেই অন্য রকমের একটা সিরিজ়। এটা ক্রাইম থ্রিলার নয়। বরং একেবারেই আলাদা ধরণের একটা গল্প। যেমন ‘চলো লেটস গো’, ‘ম্যাডলি বাঙালি’ এগুলো বন্ধুত্বের গল্প ছিল। আবার এর মধ্যে নানারকম গল্প এসে মিশেওছিল। সেরকম এটাও একটা বন্ধুত্বের গল্প। তবে সেখানে কিছু রহস্য এসে মেশে। এক কথায় একটা গল্পকে থ্রিলার বা প্রেমের বলে এখন আর মার্ক করে দেওয়া যায় না কারণ আর্ট ফর্ম আর আগের জায়গায় নেই। এখন একটা প্রেমের গল্পে যেমন খুন থাকতে পারে, তেমনই একটা সামাজিক গল্পে ভূত থাকতে পারে।
‘সেভেন’ কী নিয়ে সেটা তো একটু বলাই যায়
এটা একটা বন্ধুত্বের গল্প। আবার অন্যভাবে বলা যায়, আগে মিডলাইফ ক্রাইসিস ৪৫-এর পরে আসত। এখন সেটা ৩০-এর পরে আসছে। কারণ যে যেটা করতে চাইছে, সেটা সে পারছে না। খুব কম মানুষ তাঁর নিজের পছন্দের কাজ করতে পারেন। প্রত্যেকে নিজের কাজ নিয়ে, পেশা নিয়ে বা অন্য কিছু নিয়ে চূড়ান্ত হতাশ, বিরক্ত। এবার একজনকে যদি তার পছন্দের জীবন বা কাজটাকে বেছে নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়, তাহলে কি সেটা সে নেবে না? যদি তার জন্য অনেককিছু ছাড়তেও হয় তাহলেও হয়তো নেবে। বা হয়তো ভাববে নেবে কি না। এটা একটা খেলা। আমার মনে হয়েছে এই দোটানার গল্পটা ওয়েব সিরিজ়ের মাধ্যমে বলা যায়। কারণ চরিত্রগুলোর জন্য যতক্ষণ না দর্শক টান অনুভব করবেন, ততক্ষণ পরের পর্বগুলোর জন্য কেউ অপেক্ষা করবেন না। আমি ছক ভাঙায় বিশ্বাসী। তাই থ্রিলার থেকে ভেঙে আমি নিজস্ব গোয়েন্দা এনেছি। তারপর আমার মনে হলো একটা অনিশ্চয়তার গল্প বলা যেতে পারে।
আরও পড়ুন: ৩৪ বছর পর একসঙ্গে ‘রামায়ণ’ জুটি
সিরিজ়ে কতগুলো পর্ব থাকছে?
সাতটা পর্ব থাকছে। এটা একটা মিনি সিরিজ়। আমাদের জীবনের গতিকে নির্ধারণ করে কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ, মাৎসর্য। এই ছ’টা রিপুকে নিয়েই ছ’টা পর্ব। আর তারপরে কী হলো, সেটা নিয়ে সপ্তম পর্ব। যে কোনও শিল্পমাধ্যমে একটা পরিণতি থাকবেই। কাম, ক্রোধ, লোভ ইত্যাদি নিয়েই আমরা প্রত্যেকে তৈরি। তবু এখানেই যদি আটকে যাই তাহলে আর গল্পটা বলা হলো কই? এর থেকে উত্তরণটাও তো দেখাতে হবে। এই উত্তরণটাই হলো সপ্তম, সাত বা সেভেন।
গল্পটা তো পাঁচ বন্ধুর। এরা কি ঘনিষ্ঠ বন্ধু?
রাহুল (বন্দোপাধ্যায়), গৌরব (চক্রবর্তী), অঙ্কিতা (চক্রবর্তী), সুপ্রভাত (দাস) ও ঋদ্ধিমা (ঘোষ), এই পাঁচজন ছোটবেলার বন্ধু। এরা স্বচ্ছলও। একটা ঘটনা এদের সকলকে নড়বড়ে করে দিয়ে যায়। এখানে টাকাটা কিন্তু সব নয়। কারণ শুধু লোভ নয়, বরং আরও কিছু আছে যা নিয়ে এখানে প্রশ্ন উঠছে। এতগুলো টাকা কেউ যদি মনেও করে থানায় জমা দেব, সেক্ষেত্রে পুলিশি ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা প্রবল। তাহলে কী করা উচিত? আমরা খুব সহজে বাইরে থেকে কাউকে খারাপ, ভালো বা দুর্নীতিগ্রস্ত বলে দিতে পারি। কিন্তু সময় আর পরিস্থিতি কাকে কখন কোনটা করতে বাধ্য করে, যে সেটার মুখোমুখি হচ্ছে, সে ছাড়া কেউ জানে না।
আরও পড়ুন: রিভুর ছবিতে অমিতাভ
আপনার ছবি বা সিরিজ়ের ক্ষেত্রে প্রতিবারেই কিছু চেনা মুখ দেখা যায় যাঁদের আপনি বিভিন্ন চরিত্রে নিয়ে আসেন। এটা কেন করেন?
সত্যজিৎ রায় সারাজীবন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে রিপিট করেছেন। মৃণাল সেন আমাকে রিপিট করেছেন। সারা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পরিচালকরা অভিনেতাদের বারবার রিপিট করেছেন। কারণ আন্ডারস্ট্যান্ডিং। সেটা ফটোগ্রাফার হোক, অভিনেতা হোক, আর্ট ডিরেক্টর হোক, সবাই হতে পারে। কারণ আমি তাঁদের সঙ্গে কাজ করতে ভালোবাসি। কোনও ভালো অভিনেতা শুধুমাত্র একধরণের চরিত্রেই অভিনয় করতে পারে, এটা আমি বিশ্বাস করি না। যদি নাটকের দল হতে পারে তাহলে সিনেমায় কেন হবে না? আর এমন তো নয় যে আমি নতুনদের সঙ্গে কাজ করিনি। আমি রুদ্রনীল (ঘোষ), পরমব্রত (চট্টোপাধ্যায়), আবির (চট্টোপাধ্যায়), রণদীপ (বসু), ঋত্বিক (চক্রবর্তী), পার্নো (মিত্র) এদের সকলের সঙ্গে একদম শুরু থেকে কাজ করেছি। যারা রিপিট করে না বা নতুনদের সঙ্গে কাজ করে না, এই প্রশ্নটা বরং তাদের করা উচিৎ। এই সিরিজ়ে সুজন (মুখোপাধ্যায়) ছাড়াও অনেকে আছে যে আমার সঙ্গে একাধিকবার কাজ করেছে।
‘রিভলভার রহস্য’-এর সময় আপনি বলেছিলেন সুব্রত শর্মা ছাড়া আর কোনও থ্রিলার আপনি এখন থেকে আর করবেন না…
(প্রশ্ন শেষের আগেই) আমি আবারও বলছি ‘সেভেন’ কোনও থ্রিলার নয়। তবে সেটা বোঝার জন্য সিরিজ়টা শেষ পর্যন্ত দেখতে হবে। এমন নয় যে একদিনেই দেখে ফেলতে হবে। তিন-চারদিনেও দেখা যেতে পারে। তবে চরিত্রগুলো দর্শকদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি করবে, ফলে শেষ অবধি দেখতেই হবে।