উপহার যখন দুশ্চিন্তার

ছবি: পার্সেল

পরিচালক: ইন্দ্রাশিস আচার্য

অভিনয়ে: ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়, শ্রীলা মজুমদার, দামিনী বসু, অম্বরীশ ভট্টাচার্য

দৈর্ঘ্য: ২ ঘন্টা ৫ মিনিট

RBN রেটিং: ৩/৫

রঙিন কাগজে মোড়া উপহার পেতে কে না ভালোবাসে। কিন্তু সেই উপহারের প্রেরক যদি অজানা কেউ হয়, তখন? চমকের থেকেও চমকে দেওয়ার মত ব্যাপার হয় যখন বারংবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে থাকে। উপহার যখন আনন্দের পরিবর্তে দুশ্চিন্তার কারণ হয়, তখন সেখানে তো একটা রহস্য থেকেই যায়। ইন্দ্রাশিসের নতুন ছবি ‘পার্সেল’ সেই রহস্যের বাতাবরণ তৈরীর প্রচেষ্টা মাত্র।




ছবির গল্প দানা বাঁধে নন্দিনীর (ঋতুপর্ণা) জন্মদিনের সন্ধ্যায়। হালকা ছন্দের গান, কবিতা, আড্ডার তাল ভাঙে কলিংবেলের শব্দে। কেউ একজন উপহার পাঠিয়েছে নন্দিনীকে। জন্মদিনে এরকম উপহার আশাপ্রদ যদিও প্রেরকের নাম অজানা। মোড়ক খুলে দেখা যায় উপহারটি একটা ফাঁকা অ্যালবাম। শুধু জন্মদিন না, পার্সেল এল তার পরের দিনও। এবারে প্যাকেট খুলে পাওয়া যায় নন্দিনীর কলেজ জীবনের একটি ছবি কেউ সুন্দর ফ্রেমে বাঁধিয়ে পাঠিয়েছে তাকে।

অজানা, অচেনা প্রেরকের উদ্দেশ্যে মজার ছলে ঈর্ষা পোষণ করে নন্দিনীর স্বামী শৌভিক (শাশ্বত)। পেশায় স্বামী স্ত্রী দুজনে ডাক্তার হলেও বর্তমানে কিছুদিনের জন্য তার পেশা থেকে বিরতি নিয়েছে নন্দিনী। স্বামী ও মেয়ে সাজুকে নিয়ে তার সাজানো গোছানো ছোট্ট সংসার। কিন্তু এই রোজনামচার জীবনে ছন্দপতন ঘটতে থাকে  বারবার আসা সেই পার্সেলের কারণে। আবারও উপহার হিসেবে আসে নন্দিনীরই ছবি। প্রেরক সেই অজ্ঞাত। কে করছে এমন কাজ?

আরও পড়ুন: ফাগুন লেগেছে বনে বনে

অনেক সময় এক একটা ঘটনা এমনভাবে ঘটে যে তার সঙ্গে অযাচিতভাবে আরও অনেক কিছু জড়িয়ে যায়। প্রত্যেক মানুষের জীবনেই একটা অতীত থাকে কিন্তু তার রেশ যদি বর্তমানকে তছনছ করে তখনই যেন মনের মধ্যে অপরাধবোধ বেশি করে অনুভূত হয়। অতীতের সঙ্গে এই পার্সেল রহস্য মেলাতে গিয়েই যেন আরও অসহায়, আরও বিপন্ন বোধ করে ন্দিনী। পাশাপাশি উঠে আসে বর্তমান সময়ে ডাক্তারি পেশায় জড়িত মানুষদের নিপীড়নের কথাও।

ছবির গল্প ভীষণ সরলরৈখিক। বারবার পার্সেল আগমনের একঘেয়েমিতে হারিয়ে যায় আসল রহস্য। ছবির দৈর্ঘ্যও অহেতুক লম্বা। তবে অভিনয়ে প্রত্যেকেই যথাযথ। ‘পার্সেল’ ভালো লাগার অন্যতম কারণ এই ছবির চরিত্ররা। প্রত্যেকই ভীষণ চেনা মানুষ। চাকরি ছেড়ে দিনের পর দিন ঘরে বসে থাকা নন্দিনীর চরিত্রটির বিষাদ ঋতুপর্ণার মুখে লেগে থাকে গোটা ছবি জুড়ে। তার হাসি, কান্না, আনন্দ সবকিছুই ভীষণ জীবন্ত। অনুভূত হয় বড়লোক দিদির জন্য মরণাপন্ন স্ত্রীকে নিয়ে অপেক্ষারত ভাইয়ের কষ্ট। পরকীয়ায় লিপ্ত কোথাও ভীতু, কোথাও বিরক্ত শৌভিকের চরিত্রে শাশ্বত তার স্বভাবমতই সাবলীল। অসাধারণ অভিনয়ের পাশাপাশি শ্রীলা মজুমদারের কণ্ঠে ‘আমার রাত পোহালো’ এবং ঋতুপর্ণার গলায় ‘বৃন্দাবনবিলাসিনী রাই আমাদের’ শুনতে ভালো লাগে।

তবে অভিনয়ে সবাইকে ছাপিয়ে গেলেন দামিনী। স্বল্প পরিসরে তাঁর অরুন্ধতী চরিত্রটি মনে রেখে দেওয়ার মতো। উপার্জনে অক্ষম, পঙ্গু স্বামীর দায়িত্ব থেকে শুরু করে ছোটবেলার বন্ধুর আনা মিথ্যে অভিযোগ সবটাই অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ফুটিয়ে তুললেন তিনি। জয় সরকারের আবহসঙ্গীতে বেহালার সুরধ্বনি নন্দিনীর বিষণ্ণতাকে জোরালো করে। 

ছবি শুরু হওয়ার পর যে রহস্য তৈরির প্রচেষ্টা করেছিলেন পরিচালক, তা শেষ পর্যন্ত ধরে রাখা গেল না। বিষয়বস্তু অভিনব হলেও গল্পের বুননে ফাঁক থাকার ফলে দৃশ্যগুলো দাগ কাটে না। এক একটি চরিত্রকে বুঝে ওঠার আগেই চলে আসে নতুন কোনও চরিত্র। অনেকগুলো প্রশ্ন উত্তরবিহীন থেকে যায় ছবির শেষে। হয়ত পরিচালক তেমনই চেয়েছিলেন। তবু এরকম অভিনব একটি বিষয় নিয়ে ছবি তৈরির সাহস দেখানোর জন্য ইন্দ্রাশিসকে সাধুবাদ।

Amazon Obhijaan



Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Gargi

Travel freak, nature addict, music lover, and a dancer by passion. Crazy about wildlife when not hunting stories. Elocution and acting are my second calling. Hungry or not, always an over-zealous foodie

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *