টেলিভিশনে প্রবল অনীহা ছিল বাবার, মৃণাল সেনের স্মৃতিচারণে পুত্র কুণাল
RBN Web Desk: টেলিভিশনে কাজ করার ব্যাপারে প্রবল অনীহা ছিল মৃণাল সেনের। সম্প্রতি কলকাতায় সিনে সেন্ট্রাল ও ওয়েস্ট বেঙ্গল ফিল্ম জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত মৃণাল সেনের জন্মশতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে এক সভায় এমনটাই জানালেন তাঁর পুত্র কুণাল সেন। চলচ্চিত্রে চারবার সেরা পরিচালকের জাতীয় পুরস্কারপ্রাপক মনে করতেন, প্রেক্ষাগৃহ অন্ধকার করে যে জাদু তৈরি করা যায়, টেলিভিশনে তা সম্ভব নয়। তবু শেযমেষ তিনি যখন টেলিভিশনে এলেন, তা ছিল ছকভাঙা একটি কাজ। অল্প কয়েকটি চরিত্র নিয়ে, ছোট পরিধির গল্পের কোলাজ করে, বাড়ির ভেতরে শুট করে, মূলত ক্লোজ়আপ নির্ভর সিরিজ় ‘কভি দূর কভি পাস’ নির্মাণ করেন মৃণাল।
কুণাল জানালেন, “বাবার ছবি করার মূল দর্শন ছিল কম বাজেটে কাজ করা। তিনি মনে করতেন, পরিচালক যত কম খরচে কাজ করবেন, তত তার ছবি করার ব্যাপারে স্বাধীনতা থাকবে। তিনি যতটা সম্ভব কম সময়ের মধ্যে শুটিং শেষ করার চেষ্টা করতেন।”
শুধু শুটিংই নয়, ছবি তৈরির অন্যান্য বিভাগেও খরচ কমানোর পক্ষপাতী ছিলেন মৃণাল। “‘ভুবন সোম’-এর মিউজ়িক রেকর্ডিং হয়েছিল একজনের বাড়িতে বসে,” জানালেন কুণাল। “এর আগে বা পরে এমন ছোট টেপে মিউজ়িক রেকর্ডিং হয়নি বললেই চলে।”
আরও পড়ুন: সেই মোটামুটিই থেকে গেল
একবার একটি ছবির মিউজ়িক রেকর্ডিংয়ের জন্য ম্যাক্সমুলার ভবনের হলটা নিয়েছিলেন মৃণাল। মঞ্চের ওপর যন্ত্রীরা বসে আছেন। রেকর্ডিস্ট একটি টেবিল নিয়ে দর্শকাসনে বসেছেন। সেই রেকর্ডিস্ট ছিলেন বিখ্যাত সিনেম্যাটোগ্রাফার সুব্রত মিত্র। “সুব্রতকাকা তখন ক্যামেরা ভাড়া দিতেন,” জানালেন কুণাল। “পরে ক্যামেরার সঙ্গে অডিও ইক্যুইপমেন্টও ভাড়া দিতে শুরু করেন। তাঁর এ বিষয়ে আগ্রহ দেখে বাবা তাঁকে মিউজ়িক রেকর্ডিং করার প্রস্তাব দেন এবং উনি রাজিও হয়ে যান। সুব্রতকাকা ছিলেন অত্যন্ত খুঁতখুঁতে লোক। সকল যন্ত্রীরা বসে আছেন, সুব্রতকাকা হেডফোন লাগিয়ে বললেন, আওয়াজ আসছে। সমস্ত বাতানুকুল যন্ত্র—এমনকী সব পাখাও—বন্ধ করে দেওয়া হলো। তবুও সুব্রতকাকা সেই এক অভিযোগ করলেন। তারপর ডিরেকশন মাইক্রোফোন ঘুরিয়ে একটি নির্দিষ্ট দিকে ইঙ্গিত করতে বাইরে বেরিয়ে দেখা গেল, মোড়ের মাথায় খড়কাটার কল থেকে আওয়াজ আসছে। হলের ভেতরে সেই আওয়াজ প্রায় শোনা যায় না। যাই হোক, কলচালকদের অর্থমূল্য দিয়ে সেদিনের মতো খড়কাটা বন্ধ রাখতে বলা হয়।”
সভায় ‘মৃণাল সেন’ স্মারক পুস্তক হাতে (বাঁদিক থেকে) অঞ্জন দত্ত, রঞ্জিত মল্লিক, শেখর দাস, শ্যামল সেন, কুণাল সেন, অশোক বিশ্বনাথন
এরপর রেকর্ডিং শুরু হলো। খুঁতখুঁতে হওয়ার ফলে সুব্রত মিত্রের মাইক্রোফোন সেট করতে সময় লাগছিল। “রেকর্ডিংয়ে হাজির পেশাদার যন্ত্রশিল্পীরা সুব্রত মিত্রকে চিনতেন না। হয়তো নামও শোনেননি কখনও। কাজেই তাঁরা অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে নিজেদের মধ্যে এই নব্য রেকর্ডিস্টকে গালিগালাজ করতে শুরু করেন। সেই কথাবার্তা রেকর্ড হচ্ছিল মাইক্রোফোনে। সুব্রতকাকা সটান বাবাকে ডেকে হেডফোন কানে লাগিয়ে তার সরাসরি সম্প্রচার শোনান,” বললেন কুণাল।
ছবি তৈরির খরচ কমাতে নানারকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতেন এবং ঝুঁকিও নিতেন মৃণাল সেন। বর্তমান সময়ের প্রযুক্তি তাঁর হাতে থাকলে উনি আরও বেশি ঝুঁকি নিতেন বলে মনে করেন কুণাল।
ছবি: প্রবুদ্ধ নিয়োগী