বিশ্বাস ও বিজ্ঞানের টানাপোড়েন নিয়ে পুজোয় মিঠুন-দেবশ্রীর ‘শাস্ত্রী’
কলকাতা: জ্যোতিষবিদ্যা বনাম জ্যোতির্বিজ্ঞান। প্রাচীনকালে এক ও অভিন্ন বলে মানা হলেও একটা সময়ের পর নিজ নিয়মেই সম্পূর্ণ আলাদা পথ ধরে এই দুটি বিষয়। যেখানে জ্যোতির্বিজ্ঞান আলোচনা করে মহাকাশে অবস্থিত গ্রহ নক্ষত্র সংক্রান্ত তথ্যাবলীর ওপর, সেখানে জ্যোতিষচর্চা ঘুরে বেড়ায় একই বিষয়ের কিছু তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে যা সাধারণ মানুষের কাছে অনেকটাই ধোঁয়াটে। সবচেয়ে কাছাকাছি থাকতে পারত যে দুটি বিষয়. তারাই কালক্রমে এক অপরের বিরোধী হয়ে দাঁড়ায়। যুযুধান এই দুই পক্ষকে নিয়েই পথিকৃৎ বসুর (Pathikrit Basu) পরিচালনায় তৈরি হয়েছে ‘শাস্ত্রী’ (Shastri)। বহু বছর পর জুটি হিসেবে ছবিতে দেখা যাবে মিঠুন চক্রবর্তী (Mithun Chakraborty) ও দেবশ্রী রায়কে (Debashree Roy)। ছবির নামভূমিকায় রয়েছেন মিঠুন। এছাড়াও রয়েছেন সোহম চক্রবর্তী (Soham Chakraborty), সৌরসেনী মৈত্র (Sauraseni Maitra), রজতাভ দত্ত (Rajatava Dutta), শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় (Saswata Chatterjee), অনির্বাণ চক্রবর্তী (Anirban Chakrabarty), কৌশিক সেন (Kaushik Sen), অম্বরীশ ভট্টাচার্য (Ambarish Bhattacharya), অভিজিৎ গুহ (Abhijeet Guha) ও আয়ুষ দাস (Ayush Das)।
জ্যোতিষশাস্ত্রকে অবলম্বন করে সাধারণ মানুষের চোখে ভগবান হয়ে ওঠা শাস্ত্রীজীর (মিঠুন) সঙ্গে সরাসরি বিরোধ গড়ে ওঠে অ্যাস্ট্রো ফিজ়িসিস্ট সৈকতের (সোহম)। বিজ্ঞান দিয়ে বুজরুকিকে নস্যাৎ করতে চায় সৈকত। কিন্তু এতই কি সহজ হবে সাধারণ মানুষের বিশ্বাসের জায়গায় আঘাত করা? এই নিয়েই গড়ে উঠবে দুই চরিত্রের মধ্যেকার দ্বন্দ্ব। দেবারতি মুখোপাধ্যায়ের কাহিনি অবলম্বনে তৈরি হয়েছে বিষয় ভাবনার দিক দিয়ে অভিনব এই ছবি। গতকাল দক্ষিণ কলকাতার এক ক্যাফেতে ছবির ট্রেলার মুক্তি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিল্পীরা।
“চুমকি আন্টি (দেবশ্রী) ও মিঠুন আঙ্কলের ১৬ বছরের যে জুটি সেটায় একটা লম্বা বিরতি ছিল” বললেন সোহম, “সেটা এতদিন পর আবার বড়পর্দায় ফিরছে। এর চেয়ে বড় আনন্দের খবর আর কী হতে পারে! সেই নিয়ে আমরা সকলেই উৎসাহিত। দর্শকও সমানভাবে আগ্রহী হবেন এবং প্রেক্ষাগৃহে আসবেন এটাই আমাদের একমাত্র চাওয়া।”
আরও পড়ুন: মহানগরীতে আবার ফিরল ‘মহানগর’
ছবিতে রজতাভ রয়েছেন এক জ্যোতিষীর ভূমিকায়। তিনি জানালেন, “একজন মানুষ হয়তো ভাগ্যের হাতে মার খেতে-খেতে নানা অক্ষম উপায় খুঁজতে থাকে সেখান থেকে বেরোবার, কিন্তু বেরোতে পারে না। কপালের ফেরে যদি সেই মানুষটার হাতে ক্ষমতা আসে তখন সে কীভাবে ঘুরে দাঁড়ায় এবং হয়তো একসময় ফ্র্যাঙ্কেনস্টেইন হয়ে ওঠে। এটা সেরকম গল্প। খুব ইন্টারেস্টিং একটা বার্তা দেবে এই ছবি, এটুকুই বলার।”
দেবশ্রী এই ছবিতে রয়েছেন শাস্ত্রীজীর স্ত্রীর ভূমিকায়। “বিট্টুকে (সোহম) তো খুব ছোট থেকে চিনি। এর আগেই বেশ কয়েকটা ছবিকে না বলেছি কারণ চিত্রনাট্য পছন্দ হয়নি। তারপর বিট্টু বলল, তুমি একবার এসে গল্পটা তো শোনো। গেলাম, শুনে সত্যি ভালো লাগল। কিছু জায়গায় ওকে বললাম এই এই বদল করলে চরিত্রটা আরও জোরালো হবে। সেইগুলো ও করেছিল। আর মিঠুনদার সঙ্গে ছবি করা মানে একটা আলাদাই পরিবেশ তৈরি হয়। খুব হইহই করে কাজ করি আমরা। আর দর্শকও আমাদের জুটিটা দেখতে ভালোবাসে,” বললেন দেবশ্রী।
বাংলায় এমন বিষয় নিয়ে আগে ছবি হয়নি, এমনটাই মনে করেন দেবশ্রী। এছাড়াও এই ছবিতে আগেকার বাংলা ছবির একটা আমেজ রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
আরও পড়ুন: অজয়, অক্ষয়দের সঙ্গে এবার সলমনও?
ছবিতে সৌরসেনী রয়েছেন এক সাংবাদিকের ভূমিকায়। বললেন, “ছবিটা বিশ্বাস বনাম বিজ্ঞানের বলা যেতে পারে। সাংবাদিকরা যেমন কঠিন প্রশ্ন করতে কখনও পিছপা হয় না, আমার অভিনীত চরিত্রটাও এখানে তেমনই। আশা করব দর্শকের ছবিটা ভালো লাগবে।”
পথিকৃৎ জানালেন, “এই চিত্রনাট্য নিয়ে আমি অনেকের কাছেই গেছিলাম। শেষে সোহমদা আর রানেদা (নিসপাল সিং) গল্পটার ওপর বিশ্বাস রাখে। এতজন বড়মাপের অভিনেতা রয়েছেন এই ছবিতে, মিঠুনদা ও চুমকিদিকেও এত বছর পর একসঙ্গে কাজ করতে দেখা যাবে। এই সব মিলিয়ে আমার মনে হয় মানুষ ছবিটা দেখতে হলে আসবেন।”
ছবিতে সঙ্গীত ও আবহ পরিচালনা করেছেন ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত। গানগুলি রচনা করেছেন শ্রীজাত। দৃশ্যগ্রহণে রয়েছেন গোপী ভগৎ। সম্পাদনায় আছেন মোহম্মদ কালাম। ছবিতে গান গেয়েছেন সোনু নিগম, অভিজিৎ ভট্টাচার্য, সুরজিৎ চট্টোপাধ্যায়, অনিক ধর, অন্তরা মিত্র ও ঈশান মিত্র।
৮ অক্টোবর মুক্তি পাচ্ছে ‘শাস্ত্রী’।
ছবি: স্বাতী চট্টোপাধ্যায়