শরৎচন্দ্র জন্মবার্ষিকী পালিত
কলকাতা : অমর কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ১৪৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শরৎ সমিতির উদ্যোগে কলকাতায় শরৎচন্দ্রের বাসভবনে ও শরৎ স্মৃতি সদনের প্রেক্ষাগৃহে ১১ সেপ্টেম্বর থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর – ৭ দিন ব্যাপী শরৎচন্দ্র জন্মোৎসবের আয়োজন করা হয়। ১১ সেপ্টেম্বর ‘বিতর্ক প্রতিযোগিতা’ এবং ‘প্রশ্নোত্তরে শরৎচন্দ্র’ অনুষ্ঠিত হয়। যোগদান করে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ। বিতর্ক প্রতিযোগিতার বিষয়: শরৎ সাহিত্য বর্তমান যুগেও বার্তাবহ। ১২ সেপ্টেম্বর ‘শরৎ সাহিত্যে নারী’ বিষয়ে আলোচনা ও অভিনয়ে অংশগ্রহণ করেন ড. মীনাক্ষি সিংহ। ১৩ সেপ্টেম্বর ড. রামকুমার মুখোপাধ্যায়ের সভাপতিত্বে সাহিত্য সভা অনুষ্ঠিত হয়। ১৪ সেপ্টেম্বর ‘সঙ্গীতপ্রিয় শরৎচন্দ্র ও নারীর মূল্য’ বিষয়ে অংশগ্রহণ করেন সংস্কৃতি মন – এর শিল্পীবৃন্দ। ১৫ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন ধারার গান পরিবেশন করেন সুরজিৎ সেন।
প্রতি বছরের মত এবছরও ১৬ সেপ্টেম্বর শরৎ স্মৃতি সদন প্রেক্ষাগৃহে ‘শরৎ পুরস্কার’ প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে উদ্বোধন সঙ্গীত পরিবেশন করেন ছায়ানট (কলকাতা) – এর শিল্পীবৃন্দ। সোমঋতা মল্লিকের পরিচালনায় ‘বরিষ ধরা মাঝে শান্তির বারি’, ‘সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে’ এবং ‘শুভ্র সমুজ্জ্বল হে চির নির্মল’ পরিবেশন করেন শিল্পীরা। শরৎ সমিতির সভাপতি ড. রামকুমার মুখোপাধ্যায় শরৎ সমিতি গড়ে তোলার ইতিহাস এবং বর্তমান কার্যক্রম সম্পর্কে আলোকপাত করেন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অভিভাবকত্বে, মূলতঃ নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু এবং শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের উদ্যোগেই শরৎ সমিতি গড়ে ওঠে। কলকাতায় ২৪ নম্বর অশ্বিনী দত্ত রোডে অবস্থিত শরৎচন্দ্র বাসভবনই শরৎ সমিতির বর্তমান ঠিকানা। শরৎচন্দ্রের জন্মের শতবর্ষে শরৎ সমিতি তাঁর নামাঙ্কিত একটি পুরস্কার প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়। সেটি ‘শরৎ পুরস্কার’ নামে প্রচলিত হয়। ১৯৯৫ সালে শরৎচন্দ্রের গ্রন্থ ভাষান্তরের জন্য অনুবাদ পুরস্কারের সূচনা হয়। তার পাঁচ বছর পর ২০০০ সালে শরৎচন্দ্রের জীবন ও সাহিত্য নিয়ে চিন্তামূলক কাজের জন্য শরৎচর্চা ও গবেষণা পুরস্কার প্রবর্তন করা হয়। পুরস্কার তিনটি ভারতীয় সাহিত্য-সংস্কৃতি জগতে বিশেষ সমাদর লাভ করেছে। এই বছর বাংলা ভাষায় রচিত সাহিত্যকৃতি বিবেচনা করে শরৎ পুরস্কার বিচারক কমিটি শরৎ পুরস্কারের জন্য শ্রী ভগীরথ মিশ্র, শরৎচর্চা পুরস্কারের জন্য ড. ড. মীনাক্ষি সিংহ ও অনুবাদ পুরস্কারের জন্য শ্রী তেনসুবম কুঞ্জেশোর সিংহকে নির্বাচন করেন। তিন গুণীজনের উপস্থিতি অনুষ্ঠানকে বিশেষভাবে সমৃদ্ধ করে।
উক্ত অনুষ্ঠানে শরৎ-সাহিত্য এবং পুরস্কার প্রাপকদের সাহিত্য কর্ম নিয়ে বিশদে আলোচনা করেন অধ্যাপিকা শ্রাবণী পাল। ১৭ সেপ্টেম্বর শরৎচন্দ্রের বাসভবনে শরৎচন্দ্রের আবক্ষ মূর্তিতে মাল্যদান করা হয়, পরে ত্রিকোণ পার্কে অবস্থিত আবক্ষ মূর্তিতে মাল্যদান। সন্ধ্যায় শরৎ সমিতি প্রযোজিত শরৎচন্দ্রের অসাধারণ এক ব্যতিক্রমী গল্প ‘সতী’ অবলম্বনে শ্রুতিনাটক অনুষ্ঠিত হয়। নাট্যরূপ ও পরিচালনায় ছিলেন ড.পূরবী দত্ত। অংশগ্রহণ করেছিলেন শরৎ সমিতির সভ্য ও সভ্যা বৃন্দ। শরৎ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. শ্যামল কুমার বসুর সুদক্ষ পরিচালনায় অত্যন্ত সুষ্ঠভাবে এই সাতদিন ধরে শরৎ জন্মোৎসব পালন করা হয়।