লেখক যখন চরিত্র হয়ে ওঠেন, সংবেদনশীল গল্পকথায় ‘মালিনী’
কলকাতা: যে কোনও সৃষ্টিশীল মানুষই আসলে কিছুটা অস্থির স্বভাবের হন। মনের ভেতর লুকিয়ে থাকা নানা সম্ভাবনাকে একের পর এক রূপ দেওয়ার সময়ও শিল্পীর অন্তরমহলে নিরন্তর ভাঙাগড়া চলতে থাকে। লেখকও তার ব্যতিক্রম নন। লেখকের প্রতিটি সৃষ্টির মধ্যে লুকিয়ে থাকে তাঁর অন্তর্নিহিত সত্ত্বা। এমনই এক মানুষ, লেখক স্মরণজিতের কাহিনী নিয়ে অর্পণ বসাক তৈরি করেছেন স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি ‘মালিনী’। অভিনয়ে আছেন সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়, সুপ্রতিম সাহা, ঋ সেন ও আনন্দ চৌধুরী। ১৫ ফেব্রুয়ারি ছবির ট্রেলার প্রকাশ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিল টিম ‘মালিনী’।
স্মরণজিত এক ২৭ বছর বয়সী লেখক। পাঠকমহলে তার যথেষ্ট পরিচিতি। জনপ্রিয় হওয়া সত্ত্বেও একদিন তিনি হারিয়ে যান। চারটি সফল উপন্যাসের পর তার পঞ্চম উপন্যাস লেখার সময়ে কোনও এক অজানা কারণে নিজেকে চারদেয়ালের মধ্যে বন্দী করে ফেলেন লেখক। তারপর একদিন নিখোঁজ হয়ে যান। এর অনেক বছর পরে এক সাংবাদিক স্মরণজিতকে খুঁজে বার করেন। কী হয়েছিল তার? কেন হারিয়ে গিয়েছিলেন তিনি? কে ছিল মালিনী?
আরও পড়ুন: দেশজুড়ে বাংলা ধারাবাহিকের রমরমা
ছবির মূল চরিত্র স্মরণজিতের ভূমিকায় আছেন সুজয়প্রসাদ। “এই প্রজন্মের মানসিক গভীরতা নিয়ে আমার কিছুটা সন্দেহ থাকলেও অর্পণের চিত্রনাট্য আমাকে খুব টেনেছিল,” বললেন সুজয়। “গল্পটার মধ্যে অভিনবত্ব রয়েছে। একজন মানুষের মধ্যে তিনটি স্তর নিয়ে আসা সত্যি কঠিন কাজ। এরকম চরিত্র রোজ আসে না। এটা আমার দ্বিতীয় শর্ট ফিল্ম। এই ধরণের বিষয় নিয়ে বলতে গেলে সঠিক পরিসরের প্রয়োজন। তাই ডিজিটাল (ওটিটি) প্ল্যাটফর্মই এর সঠিক জায়গা। চরিত্রটা করে আমার অসম্ভব ভালো লেগেছে। তবে এটা প্রথা ভাঙা চরিত্র নয়। বরং এটা করতে গিয়ে একটা অন্তর্লীন গভীরতার অন্বেষণ করতে পেরেছি যেটা করার সুযোগ সচরাচর বাংলা ছবিতে আসে না।”
স্মরণজিতের কম বয়সের চরিত্রে রয়েছেন সুপ্রতিম। তিনি জানালেন, “অর্পণ অনেকদিন ধরে এই গল্পটা নিয়ে কাজ করতে চেয়েছিল। এরকম একটা চরিত্র আমাকে দেওয়ার জন্য আমি ওর কাছে কৃতজ্ঞ। স্মরণজিত করার অর্থ একসঙ্গে পাঁচটা চরিত্রে অভিনয় করা। কেন বলছি সেটা ছবিটা দেখলে বোঝা যাবে। এই বয়সে এরকম একটা কাজ করতে পারা সত্যিই কঠিন ছিল।”
ওটিটি প্ল্যাটফর্মে ছবি মুক্তি নিয়ে আশাবাদী অর্পণ। তিনি মনে করেন একটা ছবি বানাতে গেলে তার ভবিষ্যৎ কী হবে সেটা নিয়ে পরিচালককে ভাবতেই হয়। সেক্ষেত্রে ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলো যেভাবে এগিয়ে আসছে তাতে বাংলা ছবির জগতে পরিবর্তন আসতে বাধ্য। ‘মালিনী’ নিয়ে অর্পণ জানালেন, “গল্পটা আমার মনের খুব কাছের। কয়েক মাস আমাকে এটা নিয়ে লড়াই করতে হয়েছে। এটা এমন একটা গল্প যেটা সকলে হয়ত বুঝবেন না, বা বলা ভালো সব দর্শকের কথা ভেবে আমি বানাইনি। বরং এটা সেই কিছু সংখ্যক সংবেদনশীল দর্শকের কথা ভেবেই তৈরি,যারা ছবিটির প্রতি সুবিচার করতে পারবেন।”
ছবিতে ‘ও যে মানে না মানা’ রবীন্দ্রসঙ্গীতটি গেয়েছেন সায়নী পালিত। ছবির চিত্রগ্রহণের দায়িত্বে আছেন অনুভব চট্টোপাধ্যায়।
ডিজ়নি প্লাস হটস্টারে দেখা যাচ্ছে ‘মালিনী’।
ছবি: স্বাতী চট্টোপাধ্যায়