হার মানছে করোনা, ভিড় নন্দনে

কলকাতা: দুর্গাপুজো কেটেছে নমো নমো করে। করোনা অতিমারীর দাপটে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আনন্দ করা যায়নি কালীপুজো কিংবা ক্রিসমাসের সন্ধ্যায়। পিছিয়ে গেছে বইমেলাও। এ হেন করোনা মরসুমে সব আশঙ্কার মেঘ উড়িয়ে প্রায় প্রতিদিনই ভিড় উপচে পড়ছে নন্দন চত্বরে। কলকাতা ও শহরতলি থেকে এত সিনেমাপ্রেমী দর্শক আসবেন এতটা সম্ভবত কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের কর্তৃপক্ষ ভাবেনি। তবে সকলেই কি ছবি দেখতে আসছেন? 

আন্দুল থেকে আসা রাজশেখর জানা প্রতিবছর ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে বেশ কিছু ছবি দেখেন। এবারও দুদিন এসে দুটি বিদেশি ছবি দেখেছেন। তিনি জানালেন, “প্রতিবারেই আসি, এবারও কার্ড জোগাড় করেছি। সময়ের অভাবে অনেক ছবি দেখা হলো না। তবে এদিকে রোজই আসতে হয় তাই ফেস্টিভ্যালের সময় মাঝেমধ্যেই চত্বরটা ঘুরে যাই। এই সাজানোগুলো খুব ভালো লাগে। তবে এত ভিড় হবে আন্দাজ করিনি।”

গতকাল বেশ কিছু কলেজপড়ুয়া ছাত্রছাত্রীর দলকে দেখা গেল যারা উৎসবের ছবি দেখতে নয়, বরং স্ট্রিট ফুড, আড্ডা আর সেলফি তোলাতেই বেশি আগ্রহী। 

“আমি প্রতি বছরই আসি। তবে ছবি দেখা হয় না। এই সাজানোটা দেখার জন্যই আসি। এ বছর পুরোনো বাংলা ছবি দেখানো হচ্ছে শুনেছি। সুযোগ পেলে দেখব,” বললেন বেলুড় থেকে আসা মৌ রায়। 

আরও পড়ুন: যা লিখেছিলেন শরদিন্দু

নন্দনের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় জায়গাটা একটু ঘুরে দেখবেন বলে ঢুকেছিলেন বেহালার প্রদীপ বিশ্বাস। তিনি জানালেন, “প্রতিবারই আসি ছবি দেখতে। বহু বিদেশি ছবি দেখেছি ফেস্টিভ্যালে। তবে এবার দেখব না আগেই ঠিক করেছি। আসলে এখনও হলে গিয়ে ছবি দেখার সাহস পাচ্ছি না। যতই একটা চেয়ারের দূরত্ব থাকুক দু’ঘন্টা মাস্ক পরে বসে থাকা মুশকিল।”

এ বছর এরকম ভিড় হবে আশা করেননি অভিনেতা শঙ্কর চক্রবর্তী। চলচ্চিত্র উৎসবে তিনি প্রতিবারই আসেন। “গত বছর সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় চলে গেছেন। তাঁর অনেকগুলো ছবি ফেস্টিভ্যালে দেখানো হচ্ছে। কিছু দেখার ইচ্ছে আছে। আজই একটা ইউক্রেনিয়ান ছবি দেখলাম। এছাড়া পাঁচজন শিল্পীর শতবর্ষ উদযাপন করা হচ্ছে, তাঁদেরও কিছু ছবি দেখানো হচ্ছে। সেগুলোও দেখব সময় পেলে,” বললেন শঙ্কর। 




তবে সকলে কি ইচ্ছে থাকলেই ছবি দেখতে পারছেন? শিয়ালদহ থেকে আসা নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানালেন ইচ্ছে থাকলেও কার্ড জোগাড় করতে না পারার জন্য এবার কোনও ছবি দেখতে পারেননি। অন্যবার টিকিট কেটে ছবি দেখেন, এবারে নিয়ম পাল্টানোয় সমস্যায় পড়েছেন তাঁর মতো অনেকে। 

তবে এত মানুষের আগমনে খুশি উৎসব কমিটির সদস্য পরিচালক হরনাথ চক্রবর্তী। তিনি জানালেন, “এ বছর উৎসব হবে কি না সেই নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ ছিল। আমরা এ, বি, সি তিনরকম সম্ভাবনার জন্য প্রস্তুত ছিলাম। যেমন খুব খারাপ অবস্থা থাকলে হবে না। মোটামুটি আয়ত্বের মধ্যে থাকলে ছোট করে করা হবে। আর সব মিটে গেলে আগের মতো করেই করা হবে। এবারটা ছোট করেই করতে হলো। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে আড়ম্বর কমিয়ে উৎসব পালন করা হচ্ছে। তবে যেটা দেখে ভালো লাগছে মানুষ বাড়ি থেকে বেরিয়ে ছবি দেখতে আসছেন। পুজোর আগে যখন হল খুলল তখন খুব কম মানুষ সাহস করে দেখতে এসেছিলেন। সেই ভয়টা অনেকটা কেটেছে, মানুষ সাহস করে ফেস্টিভ্যালের ছবি দেখছেন এটা খুব ভালো লাগছে।”

ছবি: গার্গী মজুমদার

Amazon Obhijaan



Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *