যা লিখেছিলেন শরদিন্দু

সিরিজ়: ব্যোমকেশ সিজ়ন ৬ (মগ্নমৈনাক)

পরিচালনা: সৌমিক হালদার

অভিনয়ে: অনির্বাণ ভট্টাচার্য, সুপ্রভাত দাস, ঋদ্ধিমা ঘোষ, দর্শনা বণিক, উজান চট্টোপাধ্যায়, দেবশঙ্কর হালদার, কৃষ্ণেন্দু দেওয়ানজী

দৈর্ঘ্য: ১১৩ মিনিট (তিন পর্বে)

RBN রেটিং: ৩/৫

‘মগ্নমৈনাক’-এর পটভূমি স্বাধীনতার ঠিক পরেই। গল্পে মিশে রয়েছে দেশদ্রোহিতার গন্ধ। ধনী ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ সন্তোষ সমাদ্দারের বাড়িতে থাকে আসে বাপ-মা মরা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মেয়ে হেনা মল্লিক। অথচ সে সন্তোষবাবুর আত্মীয় নয়। পুরনো বন্ধুর অনাথ মেয়ে এই হেনা হঠাৎই একদিন ছাদ থেকে পড়ে মারা যায়। আপাতদৃষ্টিতে অপঘাত বলে মনে হলেও সত্যান্বষী ব্যোমাকেশের চোখে তা একেবারেই স্বাভাবিক নয়। স্রোতের উল্টোদিকে হাঁটা ব্যোমকেশ, বন্ধু অজিতকে নিয়ে রহস্য উদঘাটনের কাজে নেমে পড়ে। তদন্তে জানা যায় সন্তোষবাবুর দুই ছেলে যুগল আর উদয়ের হেনার ওপর নজর ছিল। সন্তোষবাবুর সেক্রেটারি রবি বর্মাও সন্দেহের বাইরে নন। জানা যায় কোটপ্যান্ট পরা এক অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির কথা যার মাউথ অর্গ্যানের সুরে ইঙ্গিতে এলেই হেনা ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায়। শহরের এক হোটেলে একটি গুপ্ত ঘরের খোঁজ মেলে। যার চাবি পাওয়া যায় হেনার কাছে। জমাট বাঁধে রহস্য।




শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘মগ্নমৈনাক’ প্রায় সবারই পড়া। সেই গল্প অবলম্বনেই প্লট সাজিয়েছেন সৌমিক। মূল কহিনীই উঠে এসেছে সৌগত বসুর চিত্রনাট্যে। সেখানে কোনও চমক নেই, সৌগত চেষ্টাও করেননি।

অন্যান্য প্রতিটি সিজ়নের মতোই এবারও ব্যোমকেশের চরিত্রে অনির্বাণ ভালো। একই চরিত্রে বারবার অভিনয় করে তিনি ব্যোমকেশসুলভ কিছু ম্যানারিজ়ম তৈরি করেছেন যা দেখতে মন্দ লাগে না। গোয়েন্দার সহকারী যদি কাহিনীর কথক হন, তাহলে ছবিতে তার খুব একটা কিছু করার থাকে না। অজিতের ভূমিকায় সুপ্রভাতও তাই। তবু তাঁর উপস্থিতিতে কিছুটা গুরুত্ব আনার জন্য তাঁকে কয়েকটি সংলাপ দিয়েছেন চিত্রনাট্যকার। এই চরিত্রে সুপ্রভাতকে তেমন দৃপ্তও মনে হলো না।

তাছাড়া অনির্বাণ ও সুপ্রভাতের কণ্ঠস্বর প্রায় কাছাকাছি হওয়ায় মাঝেমধ্যেই গুলিয়ে যায়।

আরও পড়ুন: আশাবাদী প্রসেনজিৎ

তবে সন্তোষবাবুর স্ত্রী চামেলীদেবীর আশ্রিতা, বাপ-মা মরা ডেঁপো ছেলে নেংটি দত্তর চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করলেন উজান। কয়েকটি দৃশ্যে ব্যোমকেশকেও ছাপিয়ে গেল নেংটির বুদ্ধিমত্তা। বেশি দূর পড়াশোনা না করলেও সম্পর্কের জটিল অঙ্কগুলো তার কাছে দাবার চালের মতোই সহজ, সাবলীল। কার কাছে কতটুকু  আর কী বললে তার কার্যসিদ্ধি হবে, এ ব্যাপারে নেংটির জ্ঞান টনটনে। অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করা নেংটি ‘quit’ আর ‘quiet’ এর ফারাক করতে না পারলেও, হেনাকে ‘follow’ করতে জানে। সেই চরিত্রটিকে জীবন্ত করে তুললেন উজান।

কৌতূহলী রবি বর্মার চরিত্রে কৃষ্ণেন্দু যথাযথ। নেংটির বোন চিংড়ি সহজ সরল না হলেও স্বভাবে সে একেবারেই নেংটির মতো নয়। সন্তোষবাবুর চরিত্রে দেবশঙ্করকে একটু আড়ষ্ট লাগে। পূর্ববঙ্গের মেয়ে হেনার চরিত্রে দর্শনা ছিমছাম, সুন্দর। নেংটির বর্ণনা অনুযায়ী হেনা ‘সেক্সি’ না হলেও দর্শনার শান্ত, গভীর দুটি চোখ পুরুষকূলকে সম্মোহন করার ক্ষমতা রাখে। তৎকালীন সময়ের মেয়ে হয়ে অন্য দেশ থেকে এদেশে আসা হেনা যথেষ্ট সাহসী।

আরও পড়ুন: রেগে আগুন কমল মিত্র, সুবিধা হলো সত্যজিতের

ঋদ্ধিমা বইয়ে পড়া সত্যবতীর মতো কঠিন নয় বরং মিষ্টি। ব্যোমকেশের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার মতো বুদ্ধিমত্তার যথেষ্ট অভাব রয়েছে এই সত্যবতীর চোখেমুখে।

সত্যান্বেষীর চোখে বাড়ির প্রত্যেক সদস্যের সঙ্গে হেনার সম্পর্ক এবং তার ভিত্তিতে আলাদা-আলাদা করে তাকে ছাদ থেকে ফেলে দেওয়ার দৃশ্যে পরিচালক সৌমিক নন, সিনেমাটোগ্রাফার সৌমিকের প্রভাব স্পষ্ট।




ছাদের পাঁচিল ও হেনার উচ্চতা দেখে মনে হয় না ঝুঁকে নিচে দেখতে গেলে সে অসাবধানে পড়ে যেতে পারে। সেই উচ্চতার কারণে পিছন থেকে অতর্কিতে কারোর খুব সহজে হেনাকে ঠেলে ফেলে দেওয়াও সম্ভব নয়। ছাদের পাঁচিল আরও একটু নীচু হলে বিশ্বাসযোগ্য লাগত। শুধু কপালে তিলক থাকলেই তাকে কীর্তনগাইয়ে ভাবা মুশকিল। সুকুমারী পেশাদার কীর্তনগাইয়ে হলেও স্বাধীনতা পরবর্তী সময়কে মাথায় রেখে রূপসজ্জা এবং পোশাক পরিকল্পনা করলে ভালো লাগত।

পর্বের শুরুতেই দর্শকের কাছে হেনাকে রহস্যময় করে তোলার জন্য আবহে ‘আমি তারেই খুঁজে বেড়াই’ যথাযথ মনে হয়নি। কীর্তনগানের পিছনে একতারা শোনা গেলেও, ছবিতে গানের আসরে খোল, বাঁশি বা খঞ্জনীর সঙ্গে একতারার অনুপস্থিতি বাঞ্ছনীয় নয়।

টুকটাক কিছু ভুলত্রুটি বাদ দিলে ‘মগ্নমৈনাক’ অনির্বাণ ও উজানের জন্য একবার অন্তত দেখা যেতেই পারে।

Amazon Obhijaan



Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Ankeeta

Sleep, travel, eat, repeat! Anchor, presenter, news reader, editor by profession. Long drives and exploring life are my favorite options. Stuck between food and fitness. Intoxicated by music. Painting, singing, photography and Rabindranath are my soulmates

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *