বিবাহ যখন বিভ্রাট হয়ে যায়

ছবি: বিবাহ অভিযান

পরিচালনা: বিরসা দাশগুপ্ত

অভিনয়ে: অঙ্কুশ হাজরা, নুসরত ফারিয়া, প্রিয়াঙ্কা সরকার, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, সোহিনী সরকার, রুদ্রনীল ঘোষ, অম্বরীশ ভট্টাচার্য

দৈর্ঘ্য: ২ ঘন্টা ১ মিনিট

RBN রেটিং: ২.৫/৫ 

কয়েক বছর হল হিন্দি ছবিতে একটা নতুন ট্রেন্ড এসেছে। একাধিক মুখ্য চরিত্রদের নিয়ে কমেডি এবং শুধুমাত্র কমেডি করাই এসব ছবির উদ্দেশ্য। এরকম অনেক ছবিতেই মজার কারণে শালীনতার সীমা লঙ্ঘন করতেও চিত্রনাট্যকারের বাধে না। ‘মস্তি’, ‘হাউজ়ফুল’, ‘ওয়েলকাম’ এই ধারার ছবি। তবে গত ১০-১৫ বছরে এরকম ছবি তৈরির একটা প্রবণতা মুম্বইতে দেখা গেলেও কলকাতায় সেটা আগে দেখা যায়নি। সুস্থ ও স্বাভাবিক কমেডি ছবি সম্ভবত দর্শক আর উপভোগ করেন না, তা না হলে এক ঝাঁক ভালো অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নিয়ে স্ল্যাপস্টিক কমেডি না বানিয়ে একটি উপাদেয় মজাদার ছবি বানানো যেতেই পারত।




ছবির গল্প দুই বন্ধুকে নিয়ে। স্কুলে বরাবরের ডিবেট চ্যাম্পিয়ন, বিজ্ঞানমনস্ক ও শপিং মলে কর্মরত রজতের (রুদ্রনীল) নিজের উচ্চতা নিয়ে বরাবরই খুতখুঁতানি থাকায়, সারা রাজ্য খুঁজে সে এক লম্বা মেয়েকে বিয়ে করে। রজতের বউ মায়া (সোহিনী) সারাদিন শুধু পুজোআচ্চা আর স্বামীর হাতে পায়ে মাদুলী বেঁধে দিতে ব্যস্ত। এছাড়া মায়ার আরও একটি গুণ আছে। সে সমস্ত চ্যানেলের সবকটা ধারাবাহিক, এমন কি তাদের রিপিট টেলিকাস্টও দেখে এবং এ ব্যাপারে তার শ্বশুর, শাশুড়ি ও ননদও তাকে সমর্থন করে। তিতিবিরক্ত রজত ‘লজিক্যালি’ এসব থেকে বেরোতে চাইলেও স্ত্রীর মনে দুঃখ দিতে পারে না।

ওদিকে রজতের ছোটবেলার বন্ধু অনুপম (অঙ্কুশ) ও রাই (নুসরত) ভালোবেসে বিয়ে করে। কিন্তু নারীবাদী রাইয়ের সর্বক্ষণ পথে নেমে বিদ্রোহ বিপ্লবের কর্মসূচীর জেরে অনুপমের নতুন বিয়ে নিয়ে সমস্ত ফ্যান্টাসি মাঠে মারা যায়। জন্মদিনে চে গেভারার ছবি দেওয়া কেক কাটা থেকে বউয়ের এক কথায় বাবা মাকে ছেড়ে আলাদা থাকা, সবই অনুপমকে করতে হয় একপ্রকার বাধ্য হয়ে। কিন্তু নতুন বাড়িতে এসে অনুপমকে ঘরের যাবতীয় কাজ একা হাতেই করতে হয়।

যে জন থাকে মাঝখানে

বউদের লাগাতার অত্যাচারে দুই বন্ধু ঠিক করে মাদুলী ও বিপ্লবের থেকে মুক্তি পেতে তিনদিনের জন্য অফিসে ও বাড়িতে মিথ্যে বলে দার্জিলিং গিয়ে বিশ্রাম নেবে। গুছিয়ে প্ল্যান করেও কলকাতা থেকে পালাতে গিয়ে নানান অদ্ভুত কান্ড ঘটে ও অবশেষে তারাপীঠের বাসে রজতরা ডাকাত বুলেট সিংয়ের (অনির্বাণ) খপ্পড়ে পড়ে। এরপর কিভাবে তারা বুলেটের হাত থেকে মুক্তি পায়, এই সবকিছু নিয়েই জমজমাট ছবি ‘বিবাহ অভিযান’। 

অভিনয় নিয়ে বিশেষ কিছুই বলার নেই, তার কারণ ছবিতে একজনও খারাপ অভিনেতা নেই। রুদ্রনীল, অনির্বাণ, অঙ্কুশ তিনজনেই নিজেদের চরিত্রকে বিশ্বাসযোগ্যভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। সোহিনীকে অন্য ধরনের চরিত্রে ও প্রিয়াঙ্কাকে গ্রাম্য সাজে নতুনভাবে দেখে ভালো লেগেছে। কট্টর নারীবাদী চরিত্রে নুসরত মানানসই। পুলিশ কমিশনাররূপী অম্বরীশের কমিক টাইমিং যথেষ্ট ভালো। তাঁর “তাহলে আমি কিছুই দেখিনি, আমি কিছুই জানি না” সংলাপটি হঠাৎ করে পুরোনো দিনের কমেডি ছবিকে মনে করিয়ে দেয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিখ্যাত হওয়া স্যান্ডি সাহার অভিনয়ও দর্শককে আনন্দ দেবে। অনির্বাণের গলায় নতুন করে “কিচ্ছু চাইনি আমি” কিংবা “চাঁদ উঠেছে ফুল ফুটেছে” শুনতে মজা লাগে।

তিন মূর্তি ও পায়ের তলায় সরষে

ছবির শীর্ষসঙ্গীতে জিৎ গাঙ্গুলীর সিগনেচার স্টাইল শুনতে মন্দ লাগে না। অন্যদিকে শ্রেয়া ঘোষাল ও জিতের কণ্ঠে পরিচিত ‘ভাদু’ গান নিয়ে আইটেম নাচটি বেশ চমকে দেয়। বলতেই হবে শ্রীজাত এই ধরণের গান লেখাতেও এখন সমান স্বচ্ছন্দ। 

ছবির দৈর্ঘ্য আর একটু কমানো যেত। সব শেষে বলা যায় বাংলা ইন্ডাস্ট্রির বেশ কিছু শক্তিশালী শিল্পীদের উপস্থিতি সত্বেও চিত্রনাট্যের খুঁত ঢাকা যায়নি। তবে এই সব শিল্পীদের কারণেই ছবিটি একবার অন্তত হলে বসে দেখাই যায়। এই সংঘাতের বাজারে যদি ঘন্টা দুয়েকও সব ভুলে একটু হাসা যায়, ক্ষতি কি?

Amazon Obhijaan



Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Swati

Editor of a popular Bengali web-magazine. Writer, travel freak, nature addict, music lover, foody, crazy about hill stations and a dancer by passion. Burns the midnight oil to pen her prose. Also a poetry enthusiast.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *