সব আসল, সৃজিতের প্রশ্নে জানালেন সুমন
কলকাতা: তাঁর ‘হাওয়া’ ছবিতে যা দেখানো হয়েছে সব আসল, কোনও ভিএফএক্স ব্যবহৃত হয়নি। সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের এক প্রশ্নের উত্তরে এমনটাই জানালেন ‘হাওয়া’র পরিচালক মেজবাউর রহমান সুমন। গতকাল কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ‘হাওয়া’ ছবির সাংবাদিক সম্মেলনে নিজে থেকেই হাজির হয়েছিলেন সৃজিত।
“এই উপমহাদেশে ছবি বানানোর ক্ষেত্রে যেখানে সবসময় বাজেট একটি মারাত্মক প্রভাব ফেলে সেখানে দাঁড়িয়ে এরকম অসাধারণ ভিজ়্যুয়াল এফেক্ট কীভাবে সম্ভব হলো,” জানতে চেয়েছিলন সৃজিত। প্রশ্ন শুনে হেসে ফেলেন সুমন। তিনি জানান, “এই ছবিতে সেভাবে কোনও ভিএফক্স দেখানো হয়নি। শুধুমাত্র জলের নীচে একটি টুনা মাছ সাঁতার কাটার দৃশ্যটি দেখানোর জন্য আমরা ভিএফএক্স ব্যবহার করেছি। বাকি সব দৃশ্য দেখে ভিএফএক্স মনে হলেও সবই আসল শ্যুট করা হয়েছে। এমনকি একটি দৃশ্যে আসল সাপ এনে তার সঙ্গে রিহার্সল করে তারপর শ্যুট করেছি আমরা।”
ভারতে বন্যপ্রাণী নিয়ে শ্যুটিংয়ের অনুমতি পাওয়া কার্যত অসম্ভব। তাই নির্মাতা ও পরিচালকদের ভিএফএক্সের সাহায্য নেওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় থাকে না।
আরও পড়ুন: নেপথ্যে গাইলেন জলি, স্টেজে দাঁড়িয়ে ঠোঁট মেলালেন রাহুল দেব বর্মণ
কলকাতায় গতকাল শুরু হয়েছে ২৮তম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। প্রথমদিনেই উৎসাহী দর্শকের সমাগম ছিল চোখে পড়ার মতো। অবশ্য এর অনেকটাই ‘হাওয়া’র উদ্দীপনাকে কেন্দ্র করে। গতকাল নন্দন প্রেক্ষাগৃহে বাংলাদেশের বিপুল জনপ্রিয় ছবি ‘হাওয়া’ দেখানো হয়। সাংবাদিকদের সামনে সুমন ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী এবং ছবির একমাত্র অভিনেত্রী নাজিফা তুষি। এছাড়া গতকাল, ১৬ ডিসেম্বর, ছিল বাংলাদেশের বিজয় দিবস। এই দিনেই শহরজুড়ে মুক্তি পেল ছবিটি। স্বভাবতই উচ্ছ্বসিত সকল কলাকুশলীরা।
“বিজয় দিবসে আমাদের ছবি এখানে মুক্তি পেল এর জন্য আমরা ভীষণ আনন্দিত। আসলে বাংলাদেশে বহু ভালো ছবি নির্মাণ করা হয় সেগুলি অন্য কোথাও মুক্তি পায় না। এর কারণে আমাদের কাজগুলি সকলের কাছে পৌঁছয় না। তবু সম্প্রতি কলকাতায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসবে ‘হাওয়া’ যে হাওয়া তুলল তার ফলেই নির্মাতারা এই ছবিটিকে এ শহরে আনতে পারলেন,” বললেন চঞ্চল। ছবির অন্যতম মুখ্য চরিত্র চানমাঝির ভূমিকায় অভিনয় করেছেন তিনি।
আরও পড়ুন: শেষ দৃশ্যে ভাঙা হোল্ডার, সত্যজিতের জয়জয়কার
‘হাওয়া’ বাস্তবেই বাংলাদেশের সিনেমাজগতের হাওয়াবদল ঘটাল বলে মনে করেন চঞ্চল। “অনেক মাছধরার নৌকা—দুর্যোগ বা অন্য কোনও কারণে—মাঝসমুদ্রে গিয়ে আর ফেরে না। সেই কল্পনাকে বেছে নিয়েই এই ছবির চিত্রনাট্য এঁকেছেন সুমন,” বললেন চঞ্চল।
ছবি আঁকতে ভালোবাসেন বাংলাদেশের চারুকলা ভবনের প্রাক্তন ছাত্র সুমন। তবে ছবি বানাতে গেলে যে একটি আদ্যোপান্ত গল্প বলতেই হবে, সেই ধারণায় বিশ্বাসী নন তিনি। তাঁর কথায়, “আমি আমার চিন্তাভাবনাগুলো মেলে ধরেছি। আমি চাই, দর্শক তাঁর নিজের মতো করে ছবিটিকে অনুধাবন করুক।”
আরও পড়ুন: রেগে আগুন কমল মিত্র, সুবিধা হলো সত্যজিতের
প্রায় দু’বছর লেগেছে চিত্রনাট্য সাজাতে। তারপর রিহার্সাল করতেও অনেকদিন সময় লেগেছে বলে জানালেন সুমন। এছাড়া চঞ্চলকে নিয়েও চিন্তা ছিল তাঁর।
“এই ছবিতে চঞ্চলভাই ছাড়া সেই মাপের আর কোনও জনপ্রিয় অভিনেতা নেই। বাকিরা কেউ এর আগে সেভাবে বড়পর্দায় কাজ করেনি। ফলে তাদের যেমন চরিত্রে অভিনয় করতে বলা হবে, সেটা তারা হয়ে উঠতে পারবে। তবে চঞ্চলভাইকে তাঁর ইমেজ ভেঙেচুরে তবে চানমাঝি হয়ে উঠতে হয়েছে,” বললেন সুমন।
চঞ্চলের কথায়, “বাংলাদেশে এ ধরণের ছবি আগে কখনও হয়নি। আমরা টানা ৪৫ দিন মাঝসমুদ্রে থেকে এই ছবি শ্যুট করেছি। এখানেই ছিল আমাদের চ্যালেঞ্জ। হলিউড হলে হয়তো গোটা ছবিটাই একটা ঘরে শ্যুট করত। কিন্তু বাজেট টানাটানির কারণে আমদের মাঝসমুদ্রে শ্যুট করা ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না।”
তবে দীর্ঘদিন রিহার্সল করার কারণে শ্যুটিং করতে গিয়ে তাঁদের বিশেষ সমস্যায় পড়তে হয়নি বলে জানালেন চঞ্চল।
“শেষদিকে আমাদের নৌকা বুলবুল ঝড়ে দুর্যোগের কবলে পড়ে। এমনকি বাড়ি ফিরতে পারব কিনা তার কোনও নিশ্চয়তা ছিল না। ছবির গল্পের মতোই আমাদেরও ওরকম অবস্থা হতে পারত তবু সেটা যে হয়নি তা আমাদের সৌভাগ্য,” বললেন তিনি।
ছবি: গার্গী মজুমদার