আমার মঙ্গোলিয়ান গোঁফ ম্যানেজ করে দিয়েছিলেন মানিকদা: কল্যাণ চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা: সত্যজিৎ রায় ডেকেছেন শুনে বিশ্বাস করেননি তিনি। ভেবেছিলেন মজা করছেন ওঁর প্রোডাকশন ম্যানেজার ভানু ঘোষ। ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’র স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে এমনটাই জানালেন প্রবীণ অভিনেতা কল্যাণ চট্টোপাধ্যায়। জিৎ চক্রবর্তীর পরিচালনায় সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে তাঁর অভিনীত ছবি ‘শেষের গল্প’।
কথা প্রসঙ্গে কল্যাণ রেডিওবাংলানেট-কে জানালেন সত্যজিতের ছবিতে তাঁর কাজ করার অভিজ্ঞতা। “তখন উনি মেনকা সিনেমার পাশে থাকতেন। একদিন ডেকে পাঠালেন। তখন আমরা, মানে আমি, জয়া ভাদুড়ী আর নবীন নিশ্চল আড্ডা দিতাম ত্রিকোণ পার্কের উল্টোদিকে হাটারি রেস্তোঁরায়। নবীনের বাবা তখন কলকাতায় চাকরি করতেন। জয়া ততদিনে সত্যজিতের ছবিতে কাজ করে ফেলেছে। একদিন ভানুদা, যিনি আমাদের বন্ধু ছিলেন, এসে আমাকে বললেন যে মানিকদা ডেকেছেন।”
মাদ্রিদের পথে ভুয়ো খবরের ‘শিরোনাম’
কল্যাণ প্রথমে ভেবেছিলেন ভানুদা মজা করছেন। তারপর ভয়ে ভয়ে গিয়ে সত্যজিতের সামনে দাঁড়ালেন। কেমন ছিল সেই অভিজ্ঞতা?
“মানিকদার চেহারা দেখে এমনিই গলা শুকিয়ে গিয়েছিল,” জানালেন কল্যাণ। “উনি বললেন, ‘শোনো, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের একটা গল্প নিয়ে ছবি করছি, ‘প্রতিদ্বন্দী’। তুমি কি আমার ছবিতে কাজ করবে?’ তাই শুনে তো আমি আরও ঘাবড়ে গেলাম, গলা দিয়ে তখন আর আওয়াজ বেরোচ্ছে না। কোনওরকমে সম্মতিসূচক কিছু একটা বলেছিলাম, সেটাও জড়িয়ে গিয়েছিল জানি। তারপর অবশ্য কাজ করতে গিয়ে সহজ হয়ে গিয়েছিল ব্যাপারটা।”
‘প্রতিদ্বন্দী’ নিয়ে আরও একটা মজার ঘটনা জানালেন কল্যাণ। “তখন আমার মঙ্গোলিয়ানদের মত একটা গোঁফ হত। মাঝখানে গ্রোথ ছিল না কিন্তু দুদিকে বাড়ত। সেটা নিয়ে আমি একটু চিন্তিত ছিলাম। মানিকদাকে বললাম, শুনে উনি বললেন, ‘ও অনন্ত দেখে নেবে ওটা।’ অনন্ত দাস ছিলেন মানিকদার মেকআপ শিল্পী। তারপর ‘প্রতিদ্বন্দী’র চিত্রনাট্য হাতে পেয়ে দেখি উনি সেটাও সংলাপে ঢুকিয়ে দিয়েছেন। ছবিতে একটি দৃশ্য ছিল যেখানে আমি আইব্রাও পেন্সিল দিয়ে গোঁফ আঁকতে আঁকতে ধৃতিমানকে বলছি, ‘গোঁফের এই জায়গাটায় না গ্রোথটা একটু কম, বেখাপ্পা লাগে।’ মানিকদা ব্যাপারটা এমন সহজ করে দিয়েছিলেন যে সেটা আর চোখে লাগল না।”