চিঠিতে লিখলাম, আমাকে আর অনুষ্ঠান দেবেন না: সুমন
RBN Web Desk: ‘কতটা পথ পেরোলে তবে পথিক বলা যায়, কতটা পথ পেরোলে পাখি জিরোবে তার ডানা।’ এ সহজ প্রশ্নের উত্তর প্রায় সকলেরই জানা কারণ এটি সঙ্গীতশিল্পী কবীর সুমনের একটি বিখ্যাত গান। কিন্তু এ গান তৈরি হলো কীভাবে? সম্প্রতি এক অনলাইন কনসার্টে সুমন নিজেই জানালেন সেই কথা।
একটা সময় তিনি আকাশবাণীর রবীন্দ্রসঙ্গীত ও আধুনিক গানের বি হাইগ্রেড শিল্পী ছিলেন। তাঁর গান সেই সময় রেডিওতে নিয়মিত শোনা যেত। তারপর একটা সময় তিনি নিজের রচনা ও সুর দেওয়া গান গাইতে শুরু করলেন, সেই শুরুর কথাই জানিয়েছেন সুমন।
আরও পড়ুন: শেষ দৃশ্যে ভাঙা হোল্ডার, সত্যজিতের জয়জয়কার
“তখন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সদ্য শেষ হয়েছে। দেড় কোটি বাংলাদেশী মানুষ তখন পশ্চিমবঙ্গে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। এই বাংলার মানুষ কিন্তু তাঁদের জন্য যথাসাধ্য করেছিল। তাঁদের রেশন থেকে চাল ডাল শরণার্থীদের দিয়েছিল। তাতে কেউ আপত্তি করেননি তখন। তাহলে কি তারাও মুক্তিযোদ্ধা নন? ভারতের ভূমিকা সেই যুদ্ধে সাংঘাতিক। হয়তো আমরা ওদের পাশে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করিনি, কিন্তু এখানে থেকে যতটুকু করা সম্ভব আমরা সকলেই করেছিলাম। তখন প্রতিটি ভারতীয় রিফিউজি রিলিফ স্ট্যাম্প কিনেছেন। ওই স্ট্যাম্প কিনতে পোস্টকার্ডের দ্বিগুণ দাম দিতে হতো। সকলেই সেই দাম দিয়েছেন। তাহলে তারা কি সহযোদ্ধা নন?” প্রশ্ন সুমনের।
এই সময়ে বব ডিলানের নানা ধরণের গান শুনে সুমনের মনে প্রশ্ন জাগে। যে সব গান তিনি গাইছেন তা কেন গাইছেন? তাঁর মনে হতে থাকে, রবীন্দ্রনাথের গান তো বর্তমান সময়ের কথা বলছে না। কোনও আধুনিক গানও সে কথা বলছে না। এই করে তিনি একটা সময় গান গাওয়া ছেড়ে দেন। “লোকে রেডিওতে অনুষ্ঠান পাওয়ার জন্য চিঠি দেয়। আমি চিঠিতে লিখলাম, আমাকে আর অনুষ্ঠান দেবেন না। কারণ আমার আর ভালো লাগছিল না। মনে হচ্ছিল যদি আমার নিজের কথা কোনও গানের ভেতর দিয়ে আমি গাইতে পারি তবেই আবার গানে ফিরব,” বললেন সুমন।
এই সময় তিনি শুনলেন ডিলানের ‘ব্লোয়িং ইন দ্য উইন্ড’ গানটা। ‘হাউ মেনি রোডস মাস্ট আ ম্যান ওয়াক ডাউন, বিফোর ইউ কল হিম আ ম্যান’ লাইনগুলো তাঁকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল। ডিলান এই গান ১৯৭১ সালের আগস্টে, নিউ ইয়র্কে ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’-এ গেয়েছিলেন। ডিলানের সঙ্গে বাজিয়েছিলেন জর্জ হ্যারিসন ও কেন রাসেল। এই কনসার্টের আয়োজন করেছিলেন রবি শংকর ও জর্জ।
আরও পড়ুন: শেষের সেদিন, উপস্থিত ছিলেন শুধু মহেশ ও ড্যানি
“গানটা আমাকে মুগ্ধ করেছিল,” বললেন সুমন। “আমি ভাবলাম, গাইতে হলে এইভাবেই গাইতে হবে। কারণ আমরা পারিনি। ডিলান পেরেছেন, পিট সিগার পেরেছেন। একটা গানের মধ্যে দিয়েই সব কথা বলা হয়ে যাচ্ছে। তাকে আর ভাষণ দিতে হচ্ছে না, স্লোগান দিতে হচ্ছে না। আমরা পারছি না কারণ আমরা চেয়েছি গান রেকর্ড করে আমরা নাম করব। কিন্তু তাতে তো গান হবে না। এভাবেই গানের মাধ্যমে আসল কথাটা বলতে হবে। সেখান থেকেই আমি গান লেখা শুরু করি। তবে আকাশবাণী আমার গান আর শোনায় না। কারণ আমার গান রাষ্ট্রস্বার্থ বিরোধী তাই আমার নামের পাশে লাল কালিতে কাটা দেওয়া রয়েছে,” জানালেন সুমন।