অর্ধশতক পেরিয়েও ‘রুবি রায়’ এক অনন্ত খোঁজের নাম: ঈশান

১৯৭১ সালে রাহুল দেব বর্মণের সুরের জাদুতে যে চরিত্রের সৃষ্টি হয়েছিল তাকে বাঙালি আজও ভুলতে পারেনি। তাই মাঝেমাঝেই ফিরে দেখার মতো বাংলা গানে নতুনভাবে ‘রুবি রায়’-এর দেখা মেলে। ২০০৯-এ রূপঙ্কর বাগচীর কণ্ঠে নতুন সুরে ফিরে আসার পর আবারও এ বছর ঈশান মজুমদারের হাত ধরে ফিরল সে। এবারও নতুন সুরে ও কথায়। ফিরল সেই বছরে যখন মূল ‘রুবি রায়’ গানটি মুক্তির অর্ধশতক পেরিয়ে গিয়েছে। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে একাধারে অভিনেতা, গায়ক ও কার্টুনিস্ট ঈশান একান্ত আলাপচারিতায় রেডিওবাংলানেট-কে জানালেন তাঁর নতুন গান ও আগামী কাজের কথা। 

রুবি রায়কে আবার ফিরিয়ে আনলে কেন? 

সত্তরের দশকে রাহুল দেব বর্মণের কাছে তাকে পেয়েছিলাম। তারপর রূপঙ্করদার কাছে পেলাম। সময় দ্রুত পাল্টাচ্ছে। তাই আর কেউ হাত বাড়ানোর আগে আমিই ‘রুবি রায়’কে ফিরিয়ে আনলাম বলতে পারো। আসলে ‘রুবি রায়’, ‘বেলা বোস’ বা ‘নীলাঞ্জনা’, বাঙালি এদের ভুলতে পারে না। এতদিন পরেও আমরা এদের মনে রেখেছি। নতুন প্রজন্মকে তো এদের সঙ্গে পরিচয় করাতে হবে। বাঙালি মননের সঙ্গে এই চরিত্রগুলো কতটা জড়িয়ে রয়েছে তার প্রমাণ এদের বারবার ফিরে আসা। আগামী প্রজন্মকে সেটা বুঝিয়ে দেওয়ার দায়িত্বও তো আমাদের হাতেই। 




নতুন ‘রুবি রায়’-এর মধ্যে শ্রোতারা কী পাবেন বলে তোমার মনে হয়?

আমার মনে হয় আজকের দিনে ভালোবাসা জিনিসটাই হারিয়ে যেতে বসেছে। ‘রোদ জ্বলা দুপুরে সুর তুলে নূপুরে’ একজন বাস থেকে নামার সময়েও কেউ তার জন্য অপেক্ষায় থাকতো, এই অকারণ প্রেম আর এখন কোথায়? এখন সব সম্পর্কই বড় বেশি লেনদেনের। ভালোবাসতে গেলেও এখন মানুষ লাভক্ষতির হিসেব করে। তাই আমার গানের কথায় ‘নিয়নের আলো রাস্তায় চুপিসারে একা কবিতায় খুঁজেছি তোমাকে কত যে রুবি রায়, পিয়ানোর পঞ্চমে একাকী মনের কোণে রেখেছি সংগোপনে রুবি রায়’। অর্ধশতক পেরিয়েও এই খোঁজার কোনও শেষ নেই, কারণ ‘রুবি রায়’ এক অনন্ত খোঁজের নাম। এর পিছনে কোনও লাভক্ষতির হিসেব নেই, আছে শুধুই অবুঝ ভালোবাসা। এই সার্চটা শেষ হয়ে গেলে ‘রুবি রায়’-এর রহস্যটাও শেষ হয়ে যাবে। তাই জন্যেই ‘একা তুমি, একা আমি, একা আমার রুবি রায়’। কারণ ‘রুবি রায়’ চিরকাল অধরা থেকে যায়। 

নতুনভাবে গাইলেও তোমার গানে সুর সেই নব্বই বা দু’হাজারের শুরুর ধাঁচের। এটা কি সচেতনভাবেই করা? 

সেটা এই কারণেই যে ‘রুবি রায়’ একটা কাল্ট গান, সেই সাউন্ডস্কেপটা রেখেই আমি সুরটা করতে চেয়েছিলাম। নাহলে গানের মেজাজটা হারিয়ে যেত। আশা রাখব আরও কয়েক দশক পরে যখন আবার কেউ এই চরিত্রটিকে নিয়ে নতুন গানের কথা ভাববে, তখন হয়তো সে আগের তিনটে গানই শুনবে। সেও তখন তার গানে ওই সুরের মেজাজটা ধরে রাখতে চাইবে।

আরও পড়ুন: নব্বইয়ের ‘সত্যান্বেষী’, বাদ পড়লেন ব্যোমকেশ

অন্য কাজের কথায় আসি। কী-কী ছবি আসছে তোমার?

শিলাদিত্যর (মৌলিক) পরিচালনায় ‘রেডিও’তে কাজ করলাম। ওখানে আমি এক বিজ্ঞাপন সংস্থার মালিক। প্রিয়াঙ্কার (সরকার) সঙ্গে আমার একটা সম্পর্ক দেখানো হবে ওখানে। এর বেশি কিছু এখনই বলা যাবে না। এছাড়া ম্যাকবেথ অবলম্বনে রাজর্ষিদার (দে)’মায়া’ রয়েছে। এখানে আমি ব্যাঙ্কোর—ছবিতে যার নাম বাসুদেব—চরিত্রে রয়েছি। এখানে চরিত্রটা যেহেতু বিহারী তাই আমার মুখে কোনও বাংলা সংলাপ নেই। খুব কঠিন একটা চরিত্র। তবে খুব এনজয় করেছি। এছাড়া গৌরব দত্তর পরিচালনায় কিঞ্জল (নন্দ) আর মুমতাজের সঙ্গে হিন্দী ওয়েব ফিল্ম ‘রেড অর্কিড’-এ কাজ করলাম। সানি রায়ের ‘সল্ট’ ছবিতেও আছি ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত ও চন্দন রায় সান্যালের সঙ্গে। 

খুব বেশি মানুষ জানেন না অভিনেতা আর গায়ক ছাড়াও তুমি একজন কার্টুনিস্টও। বাংলা কার্টুন নিয়ে তোমার একটা কাজ আসার কথা, সেটা পাঠকদের হাতে কবে নাগাদ পৌঁছবে?

কার্টুনটা একান্তই আমার নিজস্ব একটা ভালোলাগার জায়গা। নিজের খেয়ালেই বলতে পারো কার্টুনের ওপর একটা বড় গল্প ভেবে এঁকে ফেলেছিলাম। সেটাকে যখন প্রিন্টে আনার কথাবার্তা হলো তখন অবশ্যই ব্যাপারটা নিয়ে গুছিয়ে ভাবনাচিন্তা করার প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। প্রথম যে কার্টুনটা প্রিন্টে আসতে চলেছে, সেটা ২৬ পাতার। এই বছরেই কোনও সময় সেটা আসবে বলে আশা করছি। 



Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Swati

Editor of a popular Bengali web-magazine. Writer, travel freak, nature addict, music lover, foody, crazy about hill stations and a dancer by passion. Burns the midnight oil to pen her prose. Also a poetry enthusiast.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *