পাওয়া গেল মন খুলে হাসির রসদ
ছবি: লাভ ম্যারেজ
পরিচালনা: প্রেমেন্দু বিকাশ চাকী
অভিনয়ে: রঞ্জিত মল্লিক, অপরাজিতা আঢ্য, সোহাগ সেন, অঙ্কুশ হাজরা, ঐন্দ্রিলা সেন, দেবনাথ চট্টোপাধ্যায়
দৈর্ঘ্য: ২ ঘণ্টা ৭ মিনিট
RBN রেটিং ★★★★★★★☆☆☆
‘জীবন গিয়েছে চ’লে আমাদের কুড়ি-কুড়ি বছরের পার/তখন আবার যদি দেখা হয় তোমার আমার!’
ধরুন, আপনার বিয়ে ঠিক হয়েছে। কিন্তু দুই পরিবারকে আলাপ করানোর সময় দেখা গেল পাত্রীর মা এবং পাত্রের বাবা বিশেষভাবে পূর্বপরিচিত। কী হবে তখন? অনেকটা শুরুতে বলা জীবনানন্দ দাসের কবিতার মতোই যদি অবস্থা হয়? সেক্ষেত্রে বিয়েটা কি আদৌ হবে নাকি গল্পের গতি বাঁক নেবে অন্য কোনও টুইস্টে? প্রেমেন্দু বিকাশের নতুন ছবি ‘লাভ ম্যারেজ-‘এ রয়েছে সেই ধরণের ইঙ্গিত। দর্শক ছবি দেখতে যায় বিনোদনের আশায়। বেশিরভাগ দর্শকই সারাদিনের ব্যস্ততা, চিন্তা, শারীরিক ও মানসিক চাপ সবকিছু ভুলে দু’ঘণ্টা নির্ভেজাল আনন্দের রসদ খুঁজতে প্রেক্ষাগৃহে যান। সেই কাজে পরিচালক সফল হলেন কি?
বকাই ওরফে দীপাঞ্জন (অঙ্কুশ) ও শাওন (ঐন্দ্রিলা) একই অফিসে চাকরি করে। গত একবছর ধরে তাদের মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক রয়েছে। এদিকে দীপাঞ্জনের বাবা মহিম (রঞ্জিত) লাভ ম্যারেজের ঘোর বিরোধী। তার কথায়, দু’টাকার ফুচকা খাওয়া প্রেমের কোনও ভবিষ্যত নেই। ‘প্রেমের আনন্দ থাকে শুধু স্বল্পক্ষণ, আর প্রেমের বেদনা থাকে সারাজীবন।’ বাড়িতে ডিমেনশিয়া আক্রান্ত বম্মা (সোহাগ) আর বাবাকে নিয়ে ছোট ফ্ল্যাটে থাকে দীপাঞ্জন। অন্যদিকে মায়ের (অপরাজিতা) সঙ্গে থাকে শাওন। অনেক কষ্টে মামার (দেবনাথ) মধ্যস্থতায় অবশেষে রাজি হলেন দীপাঞ্জনের বাবা। কথায় আছে, একজন পুরুষের হৃদয় জয় করা যায় তার পছন্দের খাবার বানিয়ে। আর এই কথাকেই সঙ্গী করে প্ল্যান করে শাওন। তার মায়ের হাতের কড়াইশুটির কচুরি আর আলুরদম খেয়ে কুপোকাত দীপাঞ্জনের বাবা। তবে বাধ সাধল শাওনের মায়ের উপস্থিতি। তাকে দেখেই উত্তেজিত হয়ে পড়লেন মহিম। চোখের সামনে যিনি দাঁড়িয়ে, তিনি মহিমের প্রাক্তন প্রেমিকা যূথিকা। শাওন ও দীপাঞ্জন কিছু বোঝার আগেই তাদের বিয়ে ভেস্তে গেল।
আরও পড়ুন: জয়সলমেরে সত্যজিৎ রায়ের মূর্তি, উদ্যোগী রাজস্থান সরকার
ঘুরে গেল গল্পের মোড়। যূথিকাকে বাংলা পড়াতেন মহিম। সেই থেকে প্রেম। কিন্তু বয়সের ব্যবধান বেশি হওয়ায় যূথিকার বাবা তার মেয়ের সঙ্গে মহিমের বিয়ে দিতে রাজি হননি। কর্মসূত্রে মহিম শহরের বাইরে যাওয়ার পর সুভাষের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দেন যূথিকার বাবা। সুভাষও ছিল মহিমের ছাত্র। তবে বিয়ের কয়েক বছর পর সংসারের মায়া ত্যাগ করে সন্ন্যাসী হয়ে যায় সুভাষ।
শাওন আর দীপাঞ্জন মিলে শুরু করে নতুন প্ল্যান। তারা চায় মহিম আর যূথিকার মধ্যে সমস্ত রাগ, অভিমান মিটে গেলে নিজেদের বিয়ের রাস্তাটা পরিষ্কার করে নিতে। কিন্তু বিয়ে ব্যাপারটাই যে ভীষণ আনপ্রেডিক্টেবল। এই প্ল্যানিংয়ের চক্করে মহিম আর যূথিকার মধ্যে সব অভিমান মিটে গিয়ে তারা বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। কী হয় এরপর? শেষ পর্যন্ত দীপাঞ্জন আর শাওন স্বামী-স্ত্রী হয় নাকি ভাইবোন?
আদ্যোপান্ত কমেডিতে মোড়া ছবি ‘লাভ ম্যারেজ’। গল্প কোনদিকে এগোবে সেটা ট্রেলার দেখে কিছুটা আন্দাজ করা যায়। বহুদিন পর বাংলা ছবিতে মন খুলে হাসির রসদ পাওয়া গেল। আজকাল সিরিয়াস, থ্রিলার, ডার্ক এসবের মধ্যে ঢুকে নির্ভেজাল হাসির ছবি আর হয়ই না। এই ছবি সেই সাধ অনেকটা মিটিয়েছে। তার জন্য রঞ্জিত ও সোহাগের ধন্যবাদ প্রাপ্য। অনেক বছর পর পর্দায় ফিরলেন রঞ্জিত। তাঁর কমিক টাইমিং এবং সংলাপ বলার ধরণ এই ছবির মূল আকর্ষণ। তাঁকে যোগ্য সংগত করলেন অঙ্কুশ। তাঁর ও ঐন্দ্রিলার ব্যক্তিগত জীবনের সম্পর্ক ফুটে উঠল পর্দায়। অপরাজিতা তাঁর জায়গায় যথাযথ। মামার ভূমিকায় দেবনাথ দারুণ। একটি বিশেষ চরিত্রে সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিনয়ও ভালো লাগে। ছবির গান বেশ ভালো। বিশেষ করে ইমনের গলায় ‘কেমন আছো?’ গানটির ভিতর এক অদ্ভুত মনকেমনের সুর রয়েছে।
নববর্ষের শুরুতেই মানুষকে মন খুলে হাসতে বাধ্য করেছে এই ছবি। সংলাপে রয়েছে হাস্যরসের ভরপুর উপাদান। সহজ, সরল এরকম একটি চিত্রনাট্য উপহার দেওয়ার জন্য পদ্মনাভ দাশগুপ্তকে ধন্যবাদ। বর্ষশেষের সকল গ্লানিকে ভুলে মন খুলে নতুন বছরের শুরুটা মজাদার, হাসিময় করে তুলতে একবার অন্তত দেখাই যায় ‘লাভ ম্যারেজ’।