ছড়িয়ে পড়া বারুদের গন্ধ

সিরিজ়: একাত্তর

পরিচালনা: তানিম নূর

অভিনয়ে: মোস্তফা মনওয়ার, ইরেশ যাকের, রাফিয়াথ রশিদ মিথিলা, নুসরাত ইমরোজ় তিশা, মোস্তাফিজ়ুর নূর ইমরান, তারিক আনাম খান, শতাব্দী ওয়াদুদ, দীপান্বিতা মার্টিন

দৈর্ঘ্য: ২ ঘন্টা ৩৪ মিনিট (৮ পর্বে)

RBN রেটিং: ৩/৫

সিরিজ়ের নাম শুনলেই যেটা প্রথম মনে আসে, তা হল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ। এই যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে পুরোনো ঢাকার একটা অংশে পুঞ্জীভূত হতে থাকা বারুদের বিষ্ফোরণ ঘটার গল্প বলে ‘একাত্তর’। এই সিরিজ়ের মূলে রয়েছে সেলিম (মোস্তফা)। সে স্বপ্ন দেখে এলাকার দাদা হওয়ার। ঘটনাচক্রে তার জীবন পরিণতি পায় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে। শুধু মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিই নয়, সেলিম ও জয়িতার (নুসরাত) মধ্যেও একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মেদহীন চিত্রনাট্যের প্রতিটি পর্বের শেষে দর্শক ভাবতে থাকেন ‘এর পর কী?’ গোটা সিরিজ় জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে বারুদের গন্ধ।




তবে এত পরিশ্রমের পরেও শেষরক্ষা হয় না। সপ্তম পর্ব অবধি সযত্নে কাহিনী বোনার পর হঠাৎই যেন তাড়াহুড়োর মধ্যে শেষ করে দেওয়া হয় সিরিজ়টি। কাহিনীর পরিণতি বহু দর্শকের মনঃপূত নাও হতে পারে।

সিরিজ় শুরু হয় সেলিমের দাদাগিরি ও এলাকায় ক্ষমতা কায়েম করার লক্ষ্যে আর এক স্বঘোষিত নেতার মধ্যে ছোটখাটো খণ্ডযুদ্ধ দিয়ে। পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমানে বাংলাদেশ) স্বাধীনতা পাওয়ার টালমাটাল পরিস্থিতি নিয়ে একটুও বিচলিত নয় সেলিম। সে তার নিজের জগতে মশগুল। সমান্তরালভাবে চলতে থাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে পশ্চিম পাকিস্তানের ষড়যন্ত্র, চুরি যায় সেই সংক্রান্ত একটা গোপনীয় দলিল। খানসেনার থেকে সেই দলিল লুকিয়ে রাখাই সেলিমের মধ্যে মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার চেতনার বীজ বপণ করে। দ্রুত বদলে যেতে থাকে তার চারপাশের মানুষজন।

আরও পড়ুন: আশার টুইটে ‘আমার করব জয়’-এর বার্তা

কাহিনীতে বেশ কিছু জটিলতা তৈরি হলেও অনেকাংশে তা সহেজই অনুমেয়। অভিনয়ে প্রত্যেকেই যথাযথ। বিশেষ করে মেজর ওয়াসিমের ভূমিকায় ইরেশ যাকেরের অভিনয় মনে রেখে দেওয়ার মতো। এক নিষ্ঠুর পাকিস্তানী সেনা অফিসারের ক্রূরতা তিনি ফুটিয়ে তুললেন তাঁর বাচনভঙ্গী ও হাঁটাচলার মাধ্যমে। ক্যাপ্টেন সিরাজের ভূমিকায় মোস্তাফিজ়ুর ও রুহির ভূমিকায় মিথিলার অভিনয়ও বিশেষ প্রশংসার দাবী রাখে।

‘একাত্তর’-এর কাহিনী বুনেছেন সর্দার সানিয়ৎ হোসেন, শিবব্রত বর্মন ও খইরুল পাপন। সংলাপের ক্ষেত্রে তাঁরা স্মরণে রেখেছেন পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের ভাষার তফাৎ। তবে পশ্চিম পাকিস্তানীদের সংলাপের ক্ষেত্রে উৎকৃষ্ট মানের ঊর্দু প্রশংসনীয় হলেও অনেক সংলাপই ইংরেজিতে। পৃথিবীর কোথাও একই মাতৃভাষার দুজন মানুষ অন্য কোনও ভাষায় কথা বলবেন, এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। প্রয়োজন অনুসারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের বক্তৃতা ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার চুক্তিপত্রে সইয়ের ক্লিপের ব্যবহার কাহিনীকে আরও বাস্তব করে তোলে। বরকত হোসেন পলাশ ও ইশতিয়াক হোসেনের ক্যামেরার কাজ প্রশংসনীয়। কোথাও কোনও অপ্রয়োজনীয় ফ্রেম খরচ করেননি তাঁরা। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের এই সিরিজ়ে শাজ্জা আফ্‌রিন লুব্‌নার পোষাক পরিকল্পনা যথাযথ।

‘একাত্তর’-এর সঙ্গীত পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন রশিদ শরিফ শোয়েব। সিরিজ়ের আবহ ও শীর্ষসঙ্গীত বিশেষ উল্লেখের দাবী রাখে। বাংলাদেশের সবথেকে অশান্ত সময় সুরের মাধ্যমে তুলে ধরতে সক্ষম রশিদ। মৌলিক সুরের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতার মিশেল দর্শকের মনে একটা নস্টালজিয়ার ছাপ রেখে যায়।

Amazon Obhijaan



Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Diptajit

An avid reader and a passionate writer of crime fiction. Poems and verses are his second calling. Diptajit is the editor of a Bengali magazine. Nothing makes him weaker than books, films and food

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *