শিল্পী ও কলাকুশলীদের আড্ডায় উঠে এল ছবির নেপথ্যকথা

RBN Web Desk: যে কোনও ছবি তৈরির নেপথ্যে যে হাজারো প্রস্তুতি ও ভাবনা কাজ করে তার কতকটা যদি ছবির শিল্পীরা বলতে পারেন তাহলে বাকিটুকু বলবেন কলাকুশলীরা। তেমন অভিজ্ঞতাই হলো সম্প্রতি নন্দনে। জানুয়ারি মাসে মুক্তি পেয়েছিল সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের (Srijit Mukherji) ছবি ‘সত্যি বলে সত্যি কিছু নেই’ (Shotyi Bole Shotyi Kichhu Nei)। সেই ছবি নিয়েই এক অভিনব আলোচনার আয়োজন করা হয়েছিল নন্দনে। অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করেছিল ওয়েস্ট বেঙ্গল ফিল্ম জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশন (WBFJA) ও সিনে সেন্ট্রাল। সৃজিত ছাড়াও বক্তা হিসেবে সেদিন মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন অভিনেতা কৌশিক সেন, অর্জুন চক্রবর্তী, অনন্যা চট্টোপাধ্যায়, চিত্রগ্রাহক প্রসেনজিৎ চৌধুরী, শব্দ সংযোজক অনিন্দিত রায়, সম্পাদক সংলাপ ভৌমিক ও সুরকার কৌশিক চক্রবর্তী। আলাপ আলোচনার মাধ্যমে উঠে এলো ছবি সম্পর্কে নানা ভাবনা ও নেপথ্য কথা। সমগ্র অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনায় ছিলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক সম্রাট মুখোপাধ্যায়। 

অর্জুন জানালেন, ছবির জন্য ওয়ার্কশপ করা খুব কাজে লেগেছিল। প্রস্তুতির কাজটা সেখানেই হয়ে গিয়েছিল। চিত্রনাট্য তৈরির কাজ যতই কঠিন হোক না কেন শুটিংয়ের সময় কোনও সমস্যায় পড়তে হয়নি তাঁদের। অনন্যার মতে এই ছবির প্রাসঙ্গিকতা আজও যেমন আছে পরেও তেমনই থাকবে। তাই এই ছবি নিয়ে আলোচনার পরিসর সবসময়ই থেকে যাবে। সঞ্চালনার মাধ্যমে মূল ছবির ইতিহাস ও নানা অজানা কথা জানা গেল সকলের বক্তব্যের ফাঁকে-ফাঁকে। 

আরও পড়ুন: অ্যাঞ্জেলিনাই অনুপ্রেরণা, জানালেন সৃজিত

বলা হয়েছিল তিনটি ক্যামেরায় শুটিং হবে এবং মূল কাজ হবে প্রত্যেকের পারফরম্যান্স ধরা। এমন নয় যে প্রত্যেকে সবসময় সংলাপ বলছেন, কিন্তু এর অনেকটাই একইসঙ্গে ক্যামেরায় ধরতে হবে। এই গোটা ব্যাপারটা বোঝা এবং কাজটা করা বেশ কঠিন ছিল বলে জানালেন প্রসেনজিৎ। জানালেন, সৃজিত পুরো ব্যাপারটা ছবি এঁকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তাঁদের টিমকে। আলো করার জায়গা বেশিরভাগ জায়গাতেই ছিল না এবং স্বাভাবিক আলো নিয়েই তাঁরা কাজ করেছেন বলে জানা গেল। 

এই ছবির মূল বিষয় ক্লসট্রোফোবিয়া বা বদ্ধ জায়গায় থেকে যাওয়ার আতঙ্ক। সংলাপ জানালেন, এই আতঙ্ককে সাদাকালোয় বা ৪:৩ ফ্রেমে খুব ভালো ধরা যায়। কিন্তু সৃজিত ছবিটাকে ভেবেছেন খোলা প্রান্তরে, সমুদ্রের ধারে, মুক্ত আকাশের নিচে। সেখানে কীভাবে এই আতঙ্ককে বোঝানো যাবে সেই নিয়ে তাঁর সন্দেহ ছিল। কিন্তু কাজ করতে-করতে ক্রমেই তিনি উপলব্ধি করেন, বর্তমান দুনিয়ায় মানুষ কোথাওই প্রায় স্বাধীন নয়, কাজ এবং দায়িত্বের ভারে জর্জরিত প্রত্যেকে। মূলত মানুষের মাথার মধ্যে যা কিছু চলে সেখানে পারিপার্শ্বিক কী সেটা খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। তাই দম বন্ধ লাগার অনুভূতি যে কোনও জায়গায় হতে পারে। তাই আলাদাভাবে দেখানোর ফলে মূল ছবির ধারণা কোথাও ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে মনে করেন না তিনি। বরং এই সময়ে দাঁড়িয়ে এই ছবি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক বলে মনে করেন তিনিও। 

আরও পড়ুন: রহস্যে যোগ দিলেন শাশ্বত, সাগ্নিক, গৌরব, বিশ্বনাথ

অনিন্দিত বললেন সৃজিতের ছকভাঙা ধারার ব্যাপারে। কোনও ছবিতে সবসময় যাকে দেখা যায় তার কথাই শোনানো হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে সৃজিত নির্দেশ দিয়েছিলেন এমনটা না করে মাঝে মধ্যে যাকে দেখানো হচ্ছে তার কথাকে গুরুত্ব না দিয়ে অন্য আর একজনের কথা বা অন্য একটি ছবিকে বেশি করে দেখানো হবে। যেটার এক্ষেত্রে অনেক কারণ ছিল। ছবিটা তৈরি হবার পর দেখলে সেই কারণটা স্পষ্ট হয়। 

কৌশিকের কথায় উঠে এল নাটক ও সিনেমা সংক্রান্ত নানা কথা। সৃজিত নিজে বক্তব্য রাখতে উঠে জানালেন তাঁর মতে যে কোনো ছবি সম্পর্কে পরিচালক এবং অভিনেতারা কী ভাবছেন জানা গেলেও কলাকুশলীদের বক্তব্য প্রায় কোনওভাবেই জানা যায় না। যেটা বাংলা ছবির ক্ষেত্রে খুব প্রয়োজনীয় একটা পদক্ষেপ হওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন। একটা ছবি তৈরির নেপথ্যে কারা রয়েছেন তাদের সম্পর্কে জানা বা অন্তত তাদের চেহারাটা চেনা খুব জরুরি। এই ধরনের আলোচনার আরও বেশি করে প্রয়োজন রয়েছে। কারণ ছবি তৈরির সময় কলাকুশলীদের চিন্তাভাবনা কী সেটা নিয়ে কথা হওয়া দরকার। শুধুমাত্র একটা ছবির ব্যবসাই তো তার বিশেষত্ব হতে পারে না। ছবিটা তৈরির সময় তার উদ্দেশ্য এবং সেটা কতটা পূরণ হলো সেটাও দর্শকের জানা দরকার। 

সম্প্রতি ছবিটি প্রেক্ষাগৃহে পঞ্চাশ দিন অতিক্রম করেছে। সেই উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠানে কেক কাটেন সৃজিত ও অন্যান্যরা। 




Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *