‘চেষ্টা করি আমি যেন বরুণ চন্দ না হয়ে যাই’
“আমার নাম রুদ্রশেখর চৌধুরী” বলে যিনি কথা শুরু করলেন, তিনি অভিনেতা বরুণ চন্দ। সংলাপটি তাঁর আগামী ওয়েব সিরিজ় ‘ড্যানি ডিটেকটিভ আইএনসি’র প্রথম দৃশ্যে থাকছে। অঞ্জন দত্ত পরিচালিত এই সিরিজে তিনি ছাড়াও রয়েছেন সুপ্রভাত দাস, অঙ্কিতা চক্রবর্তী, সমদর্শী দত্ত ও সুদীপা বসু। অঞ্জন নিজেও রয়েছেন একটি চরিত্রে। এই সিরিজ় ও তাঁর অন্যান্য কাজ সম্পর্কে কথা বললেন বরুণ। শুনল রেডিওবাংলানেট।
রুদ্রশেখরের চরিত্রটা ঠিক কেমন?
রুদ্রশেখর ডুয়ার্সের এক ব্যবসায়ী। ব্যবসার বাইরেও তার একটা মহৎ আদর্শ ছিল। ডুয়ার্সে সে এক সুন্দর পরিবেশ গড়ে তুলতে চেয়েছিল। চা বাগান, হোম স্টে, এসব নিয়ে স্থানীয়দের কাজের সংস্থানের মাধ্যমে সেখানকার সার্বিক উন্নতি চেয়েছিল। কিন্তু কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রির তোলাবাজদের হাতে সে আটকে পড়ে। রুদ্রর শেষ বয়সটা মানসিক কষ্টে কাটে। তার মেয়ে (অঙ্কিতা) বিলেতে গিয়ে একটি বাঙালি ছেলেকে বিয়ে করে, যে চরিত্রটা সমদর্শী করেছে। সেই জামাইকে রুদ্র খুব ভালবাসে। তার মধ্যে দিয়ে নিজের অল্প বয়সের ছবিই যেন দেখতে পায় রুদ্র। এমনকি একটা সময় মেয়ের থেকেও জামাই তার কাছে বেশি প্রিয় হয়ে ওঠে। চরিত্রটায় নানারকম শেডস আছে, যেটা সাধারণত পার্শ্বচরিত্রের ক্ষেত্রে থাকে না। ছোট একটা চরিত্রকেও অঞ্জন খুব যত্ন নিয়ে লিখেছে। দেড়দিনের কাজ ছিল আমার। খুব আনন্দ করে কাজ করেছি।
অঞ্জনদার সঙ্গে আগেও কাজ করেছেন, আবারও করলেন। কেমন অভিজ্ঞতা হলো?
আমি বরাবরই অঞ্জনের কাজের গুণমুগ্ধ। ওর মধ্যে একটা আকর্ষণী শক্তি আছে এটা বরাবরই দেখেছি। আমার কাজের শুরু সত্যজিৎ রায়ের ছবিতে। তুলনার কোনও প্রশ্নই আসে না। তবু আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় বলব, চিত্রনাট্য পড়ার মধ্যে মানিকদার যে বাঁধুনি থাকতো, ওখানেই চরিত্রটা পরিষ্কার হয়ে যেত, ওঁর পরে সেটা আমি কিছুটা হলেও অঞ্জনের মধ্যে পাই। অঞ্জনের চিত্রনাট্য পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই চরিত্রটার একটা ছবি তৈরি হয়ে যায় যেন।
আরও পড়ুন: শেষের সেদিন, উপস্থিত ছিলেন শুধু মহেশ ও ড্যানি
১৯৭১ সালে আপনার অভিনয় জীবন শুরু। ‘সীমাবদ্ধ’র পর তারপর আর সেভাবে কাজ করলেন না কেন?
সীমাবদ্ধ’র পর কুড়ি বছর আমি কোনও কাজ করিনি। তখন অভিনয় দিয়ে অন্ন সংস্থান হতো বলে আমার মনে হয়নি। তাই অন্য কাজ করেছি। আমি কাউকে ‘না’ বলতে পারতাম না। কোনও চরিত্র অপছন্দ হলে না বলতে পারতাম না। মুখের ওপর চিত্রনাট্য ভালো নয় বললে তখনকার দিনে ইন্ডাস্ট্রিতে টিকে থাকা কঠিন হতো। পরে তো অনেক কাজ করেছি। অঞ্জনের সঙ্গেও টেলিফিল্মের কাজ করেছি। এখনও কোনও ছবিতে ভালো চরিত্র পেলে করি। এখনও বলব, খুব কম পরিচালককে কোনও ব্যাপারে পরামর্শ দিলে তিনি সেটা ভালো মনে নেন। যেমন এক জায়গায় অঞ্জনকে খুব ছোট একটা জিনিস বলেছিলাম, এইটুকু করলে ভালো দেখাবে। ডাইরি নিয়ে একটা দৃশ্য ছিল। অঞ্জন সেটা করেছিল, আর ওর পছন্দও হয়েছিল। এরকম কিছু ব্যাপার যেমন অতনু ঘোষ বা অনিক দত্তকে বলতে পারি। সবাইকে এটা বলা যায় না, সবাই সেটা ভালোভাবে নেনও না। শুভ্রজিৎকেও (মিত্র) বলেছি, ওর ‘অভিযাত্রিক’ ছবিতে একটা ছোট চরিত্রে কাজ করেছি। তবে ছোট্ট চরিত্র হলেও সেখানে একটু অন্যরকম করতে চেয়েছিলাম। সেটা শুভ্রজিৎ করতে দিয়েছিল। কিছু ম্যানারিজ়ম নিজে থেকে যোগ করেছি যেটা চরিত্র বুঝে আমি করে থাকি। চেষ্টা করি আমি যেন বরুণ চন্দ না হয়ে যাই, চরিত্রটা হতে পারি। অর্থাৎ আড়াই মিনিটের চরিত্র হলেও সেখানে আমার যেন কিছু করার থাকে।