শতবর্ষে বাগবাজার সার্বজনীন

কলকাতা: এ বছর শততম বর্ষে পদার্পণ করল বাগবাজার সার্বজনীন দুর্গোৎসব। দীর্ঘ একশো বছর ধরে একই ঐতিহ্যের ধারা অব্যাহত রেখেছে কলকাতার এই অন্যতম প্রধান পুজো। নতুন প্রজন্মের কাছেও সাবেকি একচালার ডাকের সাজের প্রতিমার আকর্ষণ কিছু কম নয়।

কেমন ছিল একশো বছর আগের পুজো?

১৯১৯ সালে যখন এই পুজোর সূত্রপাত হয় তখন এর ঠিকানা ছিল ৫৫, বাগবাজার স্ট্রিট। নাম ছিল ‘নেবুবাগান বারোয়ারী দুর্গাপুজো’। ১৯২৪-এ তার স্থান পরিবর্তন হয় বাগবাজার স্ট্রিট ও পশুপতি বোস লেনের মোড়ে। তার পরের বছর পুজো হয় কাঁটাপুকুরে। এভাবে বেশ কয়েকবার বার স্থান পরিবর্তনের পর ১৯৩০ সালে বিখ্যাত আইনজীবী দুর্গাচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে পুজোর শ্রীবৃদ্ধি ঘটে। পুজোর নতুন নাম হয় বাগবাজার সার্বজনীন দুর্গোৎসব ও প্রদর্শনী। সেই সময় কলকাতার মেয়র ছিলেন নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু। তাঁর অনুমতি ও আগ্রহে পুজোটি কর্পোরেশনের মাঠে উঠে আসে এবং স্থায়ী প্রতিষ্ঠা পায়। এই সময় মণ্ডপ প্রাঙ্গনে দেশীয় শিল্পের প্রদর্শনী করা হত। ১৯৩৬ সালে এই পুজোর সভাপতি ছিলেন সুভাষচন্দ্র নিজে।

গান শেষ আর জান শেষ তো একই কথা রাজামশাই

বাগবাজার সার্বজনীনের সাধারণ সম্পাদক গৌতম নিয়োগী রেডিওবাংলানেট-কে জানালেন, “একশো বছর আগে এই পুজো শুরু করার উদ্দেশ্য ছিল সকলের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। জমিদারবাড়ির আঙিনা থেকে তাই বারোয়ারী মণ্ডপে নিয়ে আসা হয় দুর্গাকে। সেই সময় পুজোর সঙ্গে জড়িত ছিলেন নরেন গোঁসাই, কার্তিক মিত্রের মত মানুষরা। স্বাধীনতার আগে জাতীয়তাবাদী আদর্শকে সামনে রেখে এই পুজো শুরু হয়েছিল। বিভিন্ন রকমের নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে পুজো করা হয়ে থকে। তার মধ্যে একটি হলো সিঁদুর খেলা। বহু দূর থেকে মহিলারা আসেন সিঁদুর খেলতে। এছাড়া দশমীর দিনই প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া এখানকার রীতি। কোনও অবস্থাতেই এই নিয়মের পরিবর্তন করা হয় না। প্রতিদিন দেবীকে খিচুড়ি ভোগ দেওয়া হয়। এছাড়া অন্য কোনও রকম ভোগ এখানে হয় না।’

থিম পুজো প্রসঙ্গে গৌতমবাবু জানালেন, “আমাদের পুজোর ইতিহাস এত গৌরবের যে সেই ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতাকে অস্বীকার করার কথা কখনো চিন্তাতেও আসেনি। তাই থিম নিয়ে কোনওরকম চিন্তাভাবনা কোনওদিনই করিনি আমরা। পরবর্তী প্রজন্ম এই ধারাকে বয়ে নিয়ে যাবে কিনা তা সময় বলবে, তবে এ পুজো তো শুধুমাত্র কর্মকর্তা বা সদস্যদের পুজো নয়, এ হলো সমস্ত বাগবাজারের পুজো। তাই যা কিছু করা হয় সকলের মত নিয়েই করা হয়।”

রক্তবরণ মুগ্ধকরণ

গৌতমবাবুর দাবী, “এখনও পর্যন্ত আগামী প্রজন্মের মধ্যে সাবেকিয়ানাকে উপেক্ষা করার কোনও আভাস পাওয়া যায়নি। তাই আশা করা যায় পুজোর আঙ্গিক আগামী দিনেও এমনটাই থাকবে।’

একশো বছরে পদার্পণ উপলক্ষ্যে, সর্বধর্ম সমন্বয় ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তার প্রচারে  একটি প্রভাতফেরীর আয়োজন করে বাগবাজার সার্বজনীন। এছাড়া পুজো ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান যেমন প্রতিবছর হয় তেমনই হবে এবারও।

Amazon Obhijaan



Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *