অন্নপূর্ণা হোক বা দশভূজা, ছবি জুড়ে শুধুই অনন্যা

ছবি: অন্নপূর্ণা

পরিচালনা: অংশুমান প্রত্যুষ

অভিনয়ে: অনন্যা চট্টোপাধ্যায়, শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়, দিতিপ্রিয়া রায়, কাঞ্চন মল্লিক, ঋষভ বসু, অর্ণ মুখোপাধ্যায়, অনুষা বিশ্বনাথন 

দৈর্ঘ্য: ২ ঘণ্টা 

RBN রেটিং ★★★★★★☆☆☆☆

মধ্যবয়সি, বাঙালি মহিলা বিদেশে গিয়ে ব্যবসা করছেন। কীসের ব্যবসা? একেবারে ঘরোয়া বাঙালি খাবারের! প্রবাসী বাঙালিরা তো বটেই, বিদেশিরাও চেটেপুটে খাচ্ছেন সে সব। তবে এই কর্মযজ্ঞ চলছে গোপনে, অন্নপূর্ণা (অনন্যা) থুড়ি মায়ের হেঁশেলে।



মেয়ে আনন্দী (দিতিপ্রিয়া) এবং জামাই অতনু (অর্ণ) প্রবাসী, কর্মসূত্রে লন্ডনে থাকেন। তাদের আবদারেই কলকাতার রাজপাট ছেড়ে ভরা বৈশাখে অন্নপূর্ণার বিদেশে আগমন। নিজের হাতে রেঁধেবেড়ে খাওয়াতে ভালবাসেন অন্নপূর্ণা। তাই বিদেশে মেয়ে-জামাইয়ের সংসারে মানিয়ে গুছিয়ে নিচ্ছিলেন তিনি। সকালে জলখাবার বানানো, দোকান-বাজার করা, রাতে আবার হেঁশেল ঠেলা, সবই চলছিল নিজের মতো করে। এমন সময়ে রনির (ঋষভ) সঙ্গে আলাপ হয় অন্নপূর্ণার। কলকাতার ছেলে রনি লন্ডনে ক্যাব চালায়। ছোটখাট কোনও কাজে তার না নেই। তবে রনির বিদেশে আসার কারণ অন্য। বিদেশিনি নিকোলের (আলেকজ়ান্দ্রা টেলর) প্রেমে পড়েই অনাথ ছেলেটার লন্ডনে আসা। তবে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে তবেই নিকোলের পাণিগ্রহণ করবে, সে বিষয়ে একেবারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ রনি। কিন্তু নিকোলের বাবার সামনে দাঁড়াতে পারার মতো তেমন কোনও কাজই করতে পারছে না সে। ওদিকে রনির সহায়-সম্বল, অভিভাবক বলতে আছেন ওই একজন বাঙালি ব্যবসায়ী। নাম বিবি (কাঞ্চন), তার দোকানেই কাজ করে রনি। অন্নপূর্ণার সঙ্গে রনির আলাপ এই বিবির দোকানেই। তারপর স্নেহ, ভালবাসা, মায়া, মমতায় অনাথ রনির মা হয়ে ওঠা এবং পুত্রসম রনির আবদারেই মেয়ে-জামাইয়ের অগোচরে রান্নার ব্যবসা শুরু করা। বলতে গেলে পুত্রসম রনির পাশে দাঁড়াতেই অন্নপূর্ণার ‘দশভূজা’ হয়ে ওঠা। কিন্তু ঘটনাপ্রবাহ যে ভাবে এগোয় তাতে এই কর্মযজ্ঞ বেশিদিন গোপন করা যায় না। স্বাভাবিকভাবেই একদিন তা হাতেনাতে ধরে ফেলে আনন্দী এবং অতনু। শুরু হয় অশান্তি। ব্যবসার সমস্ত কাজ বন্ধ করে রাতারাতি নিজের বাড়িতে অর্থাৎ কলকাতায় ফিরে আসেন অন্নপূর্ণা। 

আরও পড়ুন: ‘আবোল তাবোল’ নিয়ে রহস্য, সমাধান করবেন রাহুল ও ঋতুপর্ণা

কলকাতায় দাস শর্মাদের বনেদি বাড়ি। সারাবছর ওই সাতমহলা বাড়ি একাই পাহারা দেন অন্নপূর্ণা। পুজোপার্বনে আত্মীয়-অতিথিরা আসেন, চলে যান। থেকে যান অন্নপূর্ণা আর তাঁর ছায়াসঙ্গী এক কিশোরী, মুন্নি (অনুষা বিশ্বনাথন)। বাড়ি বিক্রি করে দেওয়ার নানা প্রলোভন আসে। স্বামীর (শান্তিলাল) স্মৃতি জড়িয়ে থাকা ওই বাড়িটি আগলে বেঁচে থাকাতেই অন্নপূর্ণার আনন্দ। এমনকি জামাইয়ের লোলুপ দৃষ্টিও প্রৌঢ়ার সিদ্ধান্ত টলাতে পারে না। মা-মেয়ের সম্পর্কে চিড় ধরলেও পুত্রসম রনি এবং তার প্রেমিকা নিকোলে অন্নপূর্ণাকে বুঝিয়ে আবার ‘মায়ের হেঁশেল’-এ ফিরিয়ে নিয়ে যায়। ততদিনে টেমস্-এর জল কোন খাতে বয়ে গিয়েছে তা দেখার জন্য একবার অন্নপূর্ণা দেখা যেতেই পারে। 

আরও পড়ুন: একেনের সঙ্গে বেনারসে ন’টি রূপে শাশ্বত

শরতের অকালবোধন হোক বা চৈত্র শেষের বাসন্তী পূজা, তা নিয়ে বাঙালির মনে যথেষ্ট আবেগ রয়েছে। ছবির শুরুতেই পরিচালক অংশুমান প্রত্যুষ সেই ‘তুরুপের তাস’টি কাজে লাগিয়েছেন। তার পর কখনও ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে যায়েঙ্গে’ তো কখনও ‘বাগবান’ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি একখানা ‘পদ’ বানিয়েছেন বটে, তবে তা খুব একটা উপাদেয় হয়নি। ছবি জুড়ে যত্রতত্র গান গুঁজে দিলেও তা একেবারেই মনে রাখার মতো নয়। তা হলে অন্নপূর্ণা কেন দেখবেন? শুধুমাত্র অনন্যার জন্য। ধীর, স্থির, শান্ত অথচ গভীর জলাধারের মতো ছবিতে তাঁর অভিনয় দক্ষতার রেশ রেখে গিয়েছেন তিনি। বিপরীতে ঋষভ বেশ ভালো। পর্দায় দিতিপ্রিয়ার সঙ্গে অনন্যার রসায়ন দেখলে একেবারেই মা-মেয়ে মনে হয় না, উল্টে শাশুড়ি-বৌমা হলে যথাযথ লাগে। কথাতেই আছে, জন-জামাই-ভাগ্না কখনও আপন হয় না। অতনুর চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে পরিচালক বোধহয় অর্ণকে প্রতি মুহূর্তে সে কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন। বাংলা ছবিতে বিদেশিনি আলেকজ়ান্দ্রার অভিনয় বেশ ভালো। তাঁর মুখে ভাঙা ভাঙা বাংলা শুনতে মন্দ লাগে না। মুন্নির চরিত্রে অনুষা সাবলীল। কাঞ্চনও যথাযথ। তবে আর একজনের কথা না বললেই নয়। তিনি শান্তিলাল। চিত্রনাট্যে ‘মৃত’ হয়েও গোটা ছবিতে ধ্রুবতারার মতো জ্বলজ্বল করলেন তিনি। শুধু তাই নয়, অন্নপূর্ণার অবচেতন থেকে বেরিয়ে অবলীলায় দর্শকের মনে জায়গাও করে নিলেন।

কিন্তু মুশকিল হল অংশুমানের এই ছবিটির মূল বিষয়বস্তু এক কথায় বর্ণনা করা যায় না। চাইলে এই ছবিকে একা মায়ের লড়াই হিসেবে দেখাতে পারতেন পরিচালক। আবার রনির মতো সাধারন একটি ছেলের উত্তরনের গল্পও হয়ে উঠতে পারত। একসঙ্গে অনেক কিছু হতে গিয়ে শেষে কিছুই হতে না পারার আফসোস থেকে গেল।




Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Ankeeta

Sleep, travel, eat, repeat! Anchor, presenter, news reader, editor by profession. Long drives and exploring life are my favorite options. Stuck between food and fitness. Intoxicated by music. Painting, singing, photography and Rabindranath are my soulmates

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *