দর্শক কি শুধুই কূটকচালি, বধূ নির্যাতন দেখতে পছন্দ করেন? প্রশ্ন রূপার

RBN Web Desk: বাঙালি দর্শক কি শুধুই কূটকচালি, বধূ নির্যাতন দেখতে পছন্দ করেন? ‘মেয়েবেলা’ ধারাবাহিক ছেড়ে দেওয়ার পর প্রশ্ন তুললেন রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। এই ধারাবাহিকে তাঁর অভিনীত বীথিকা ওরফে বীথি চরিত্রে এখন থেকে অভিনয় করছেন অনুশ্রী দাস। তিনমাসের মধ্যে এমন কী ঘটল যে ‘মেয়েবেলা’ ছেড়ে দিলেন রূপা? 

সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রূপা জানিয়েছেন, বহু দর্শক তাঁকে বলেছেন যে বীথির মতো চরিত্রে তাঁকে মানাচ্ছে না। তাঁকে যে গল্প শুনিয়ে ধারাবাহিকে অভিনয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, কিছুদিনের মধ্যেই সেই কাহিনী বদলে গিয়ে বধূ নির্যাতনের মতো আপত্তিকর বিষয়ের দিকে তা বাঁক নিচ্ছিল বলে অভিযোগ রূপার। দিনের পর দিন বীথি চরিত্রটিকে ক্রমশ নেগেটিভ রূপ দেওয়া হচ্ছিল। তাঁকে যেভাবে চরিত্রটা শোনানো হয়েছিল, ধারাবাহিকে বীথি আর সেরকম ছিল না বলে দাবি রূপার। 

আরও পড়ুন: প্রেক্ষাগৃহে বসে দার্জিলিং ভ্রমণ

একসময়ের ব্যস্ত টেলিভিশন অভিনেত্রী রূপা দেশজোড়া জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন ‘মহাভারত’ ধারাবাহিকে দ্রৌপদীর ভূমিকায় অভিনয় করে। তার আগে ও পরে রূপাকে দেখা গেছে বহু ধারাবাহিকে, টেলিফিল্মে ও ছবিতে। মৃণাল সেন থেকে শুরু করে অপর্ণা সেন, ঋতুপর্ণ ঘোষের মতো পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করেছেন রূপা। কিছু বছর হলো রাজনীতিতে যোগ দিয়ে তিনি অভিনয় জগৎ থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখেছিলেন। সম্প্রতি ‘মেয়েবেলা’ ধারাবাহিক দিয়ে আবার টেলিভিশনে ফিরেছিলেন তিনি। 

আরও পড়ুন: রুক্মিণীতেই ভরসা রাখলেন বিরসা

মেয়েরাই মেয়েদের শত্রু, এই ধারণার বিরুদ্ধে গিয়ে ‘মেয়েবেলা’ গল্প বলবে, এমনটাই দাবি ছিল ধারাবাহিকের। কিন্তু ক্রমশ তাঁকে বধূ নির্যাতনকারী শাশুড়ি বানিয়ে দেওয়া হচ্ছিল বলে দাবি রূপার। তাঁকে এমনও বলা হয়, শহরের ও গ্রামের দর্শকের পছন্দ আলাদা। প্রায় প্রতিদিনই নিজের সংলাপ বা দৃশ্য নিয়ে তাঁর সমস্যা হতো। চ্যানেলের সঙ্গে তিনি বারবার কথা বলতেন চরিত্রটাকে এভাবে না দেখাতে। অথচ ধারাবাহিক কর্তৃপক্ষের বক্তব্য ছিল, গ্রামগঞ্জের দর্শক প্রতিদিন সাংসারিক কূটকচালিই দেখতে চায়। তাই কিছুদিন এভাবে গল্প না টানলে দর্শক ধরে রাখা যাবে না। তাঁরা আশ্বাস দিয়েছিলেন, শীঘ্রই গল্প অন্যদিকে বাঁক নেবে। এরপর যখন তাঁকে পুত্রবধূর গায়ে হাত তোলার দৃশ্য করতে বলা হয়, তখন তিনি ধারাবাহিক ছেড়ে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন বলে জানালেন রূপা।



কোনও শিক্ষিত, রুচিশীল মানুষ এই গল্প মেনে নিতে পারবেন না বলে মনে করেন রূপা। দীর্ঘ ৩৭ বছরের কেরিয়ারে তিনি কখনও কোনও পরিচালক বা প্রযোজকের বিরুদ্ধে কথা বলেননি। কিন্তু এরপরে আর চুপ করে থাকা যায় না বলেই মনে করছেন রূপা। যদিও তিনি জানিয়েছেন, প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে তাঁর কোনও সমস্যা নেই। চ্যানেল কর্তৃপক্ষ যে গল্প শুনিয়ে তাঁকে এই চরিত্রে সই করিয়েছিল, ক্রমশই সেখান থেকে সরে গিয়ে গল্প এখন ভিন্ন রূপ নিয়েছে, যা তাঁর ব্যক্তিগত রুচির পরিপন্থী। যেখানে সোশ্যাল মিডিয়ায় দর্শক লিখছেন তাঁরা এভাবে অভিনেত্রীকে দেখতে চান না, একটি সুস্থ ধারাবাহিক দেখতে চান, তখনও টিআরপির দোহাই দিয়ে কেন এই গল্পকে টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে? প্রশ্ন রূপার। 

আরও পড়ুন: জয়সলমেরে সত্যজিৎ রায়ের মূর্তি, উদ্যোগী রাজস্থান সরকার

এক অধ্যাপকের কন্যা, বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হওয়া মেয়ে বীথি, তাকে নিয়েই ছিল এই ধারাবাহিকের গল্প। তার প্রচুর গুণ আছে। কীভাবে সে ক্রমশ ছেলের বউকে আপন করে নেবে সেই নিয়েই ছিল ‘মেয়েবেলা’। এদিকে ধারাবাহিকে বীথিকে দিয়ে শাশুড়ির গয়না চুরি থেকে শুরু করে ছেলেবউয়ের ঘরের এসি খারাপ করে দেওয়ার মতো কাজ করতে দেখানো হয়েছে। প্রতিদিন এরকম নানা বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মতবিরোধ ঘটতো রূপার। শেষমেশ নিজের মতাদর্শ ও রুচির বিরুদ্ধে গিয়ে এই ধারাবাহিকে তিনি আর কাজ করবেন না বলে সিদ্ধান্ত নেন।

গতকাল থেকে বীথি চরিত্রে অনুশ্রীকে দেখা যাচ্ছে। 




Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *