‘সবাইকে তো খুশি করে ছবি করা সম্ভব নয়’
বাঙালির বড় আবেগের জায়গা মহালয়া। ১৯৭৬ সালে মহালয়ার সকালে, চিরাচরিত ‘মহিষাসুরমর্দিনী’র পরিবর্তে আকাশবাণী থেকে প্রচারিত হয় নতুন অনুষ্ঠান ‘দেবীং দুর্গতিহারিণীম্’। বীরেন্দ্রকৃষ্ণের বদলে উত্তমকুমারের গলায় চণ্ডীপাঠ শুনে ক্ষোভে ফেটে পড়ে কলকাতা। বিতর্কিত এই অনুষ্ঠান নিয়ে সৌমিক সেন পরিচালিত ‘মহালয়া’ ‘ছবিটি মুক্তি পেয়েছে গত শুক্রবার। সেই ছবি নিয়েও উঠেছে বিতর্ক।একাধিক সফল হিন্দি ছবির লেখক ও ‘গুলাব গ্যাং’ খ্যাত সৌমিক, একান্ত সাক্ষাৎকারে রেডিওবাংলানেট–কে জানালেন তাঁর প্রথম বাংলা ছবি সম্পর্কে নানান কথা। এই ছবি ঘিরে ওঠা বিতর্কেরও জবাব দিলেন তিনি।
শুরু থেকে আপনি মুম্বইতেই কাজ করেছেন, সে ছবি গল্প লেখাই হোক বা পরিচালনা। হঠাৎ বাংলা ছবিতে এলেন কেন?
এই গল্পটা নিয়ে কাজ করব বলে। এটা নিয়ে কেউ আগে কোনও কাজ করেনি, সেটা আমার বেশ অবাক লেগেছিল। আমার মনে হয়েছিল এই ঘটনাটা নিয়ে কাজ করা উচিত, এটা এমন একটা গল্প যেটা অনেকেই জানে না। তাই এটা জানানো দরকার।
এরকম একটা অভিনব বিষয় নিয়ে কি করে ভাবলেন? কোনও গল্প নিয়ে ছবি করার কথা মনে হয়নি?
না, যেহেতু এটা নিয়ে কেউ ভাবেনি তাই আমি ভাবলাম।
তিন মূর্তি ও পায়ের তলায় সরষে
অভিনেতা নির্বাচন করলেন কিভাবে? অনেক খোঁজাখুঁজি করতে হয়েছিল কি?
আমি শুভাশিসদার (মুখোপাধ্যায়) কাজ দেখেছি। উনি কিরকম অভিনেতা আমি জানি। শুভময়কেও (চট্টোপাধ্যায়) আগে থেকেই চিনতাম। আর উত্তমকুমারের চরিত্রের জন্য আমি বরাবর কোনও স্টার অভিনেতাকেই চেয়েছিলাম, চেহারার মিলের ব্যাপারটা নিয়ে ভাবিনি।
উত্তমকুমারের ভূমিকায় যীশু সেনগুপ্তই কি প্রথম পছন্দ ছিলেন?
একদম। যীশুর কথাই প্রথম মাথায় আসে।
তাশি গাঁওয়ে একদিন
মুম্বই আর কলকাতা দু জায়গাতেই কাজ করলেন, তফাত কিছু চোখে পড়ল কি?
কলকাতার সেটের খাবারটা মুম্বই-এর চেয়ে ভালো হয় (হেসে)। তবে মুম্বইতে ছবির বাজেট অনেক বেশি হয় সঙ্গত কারণেই। এছাড়া খুব কিছু তফাত মনে হয়নি আমার। আজকাল তো কলকাতাতেও অনেক হিন্দি ছবির শ্যুটিং হচ্ছে। তাই খুব আলাদা কিছু নেই। বাজেটটাই যা বেশি।
ছবি মুক্তির পর নানারকম কথা শোনা যাচ্ছে যে আসল ঘটনাকে বিকৃত করা হয়েছে। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ও পঙ্কজ মল্লিকের সম্পর্ক এরকম ছিল না, আসল ঘটনাকে অতিরঞ্জিত করা হয়েছে। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কি?
দেখুন, ছবিটা তৈরির আগে আমি অনেকের সঙ্গেই কথা বলেছি। তিনটে পরিবারের সঙ্গে আমি যোগাযোগ করেছিলাম। বীরেন্দ্রকৃষ্ণের পরিবারের কিছু বক্তব্য ছিল, পঙ্কজ মল্লিকের পরিবারেরও ছিল। উত্তমকুমারের পরিবারের সঙ্গেও আমার কথা হয়েছে। যাদের অনুমতি ও স্বত্ব নিয়ে আমি ছবিটা করেছি, তাদের কারোর কোনও আপত্তি ছিল না। এখন সবাইকে খুশি করে তো ছবি করা সম্ভব নয়। কিছু মানুষ যেমন বলছেন এরকম কিছু ঘটেনি, সেরকমই তাদের সঙ্গে কাজ করতেন এমন মানুষরা বলছেন, না এটা ঠিকই আছে। আমি তাদের নাম করতে চাই না। কিন্তু একটা ঘটনা সম্পর্কে নানান লোকের নানারকম মত থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। একটা বন্ধ ঘরে দুটো লোকের মধ্যে কথা হয়েছে, যারা কেউই আজ আর বেঁচে নেই। সেক্ষেত্রে আমি কার কথা শুনব? তাদের পরিবারের লোকজন তো অনুমতি দিয়েছেন। যারা সেখানে ছিলেন না, তারা কিভাবে জানবেন কি ঘটেছিল?
শব্দ যখন ছবি আঁকে
এই বিতর্কটা যে উঠতে পারে সেটা কি আগে আন্দাজ করেছিলেন?
একেবারেই না। আমি তো কাউকে নেগেটিভ হিসেবে দেখাইনি ছবিতে। তাই কারোর আপত্তি থাকবে এটা মনে হয়নি আমার। যেমন সৃজিত মুখোপাধ্যায় যখন ‘অটোগ্রাফ’ বানালেন, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় কিন্তু উত্তমকুমারের জায়গাটা নেওয়ার চেষ্টা করেননি। এটা একটা নতুন চ্যালেঞ্জ ছিল তাঁর কাছে, একটা অন্য ধরণের চরিত্র। সেই চ্যালেঞ্জটা তিনি নিয়েছিলেন। সেটা ভালো হল না খারাপ, সেটা পরের ব্যাপার। একজন শিল্পীকে যদি বলা হয়, এই চরিত্রটা উনি করেছিলেন এটা আপনাকে করতে হবে, সেক্ষেত্রে দুটো জিনিস হতে পারে। এক, তিনি বলবেন আমি করব না, আর দুই, তিনি চ্যালেঞ্জটা গ্রহণ করবেন। এতে তো অশ্রদ্ধার কোনও জায়গা নেই।
প্রসেনজিৎকে শশী সিনহার মত একটা চরিত্রে ভাবলেন কেন? ওনাকে উত্তমের চরিত্রে নেওয়ার কথা মনে হয়নি?
শশী সিনহার চরিত্রটা খুব ইন্টারেস্টিং। তাই আমি শুরু থেকেই চেয়েছিলাম এটা প্রসেনজিৎই করুক। আমি বলেছিলাম, এটা তোমাকেই করতে হবে। উনি রাজি হয়ে গেলেন। উত্তমকুমারের চরিত্রে প্রসেনজিৎকে আমি ভাবিইনি।
পরবর্তী ছবি?
এখনও জানি না। লেখার কাজ চলছে। লেখা হলে তারপর ভাববো। আমি ওরকম তাড়াহুড়ো করে ছবি করতে পারি না। মহালয়া করতে আমার প্রায় তিন-চার বছর লাগল। পরবর্তী ছবি কি হবে সেটা এখনই বলতে পারব না।
ছবি: দ্য ইস্টার্ন ক্রনিকল