“এই ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন কোনও কাজ করতে ভয় পাই”
হায়দরাবাদের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া শেষ করে কলকাতার চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ, সবটাই ঘটেছিল বেশ অনেকটা সময় নিয়ে। বেশ কয়েকটি ধারাবাহিকে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করার পর এই মুহূর্তে সান বাংলায় ‘সাথী’ ধারাবাহিকের পরিচালক তিনি। দীর্ঘদিনের চেষ্টা, পরিশ্রমের পর আজ কিছুটা হলেও তিনি নিজের পায়ের তলার মাটি শক্ত করতে। কিন্তু এই সবটা কীভাবে ঘটল? জানালেন রিমো বন্দ্যোপাধ্যায়, শুনল রেডিওবাংলানেট।
ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে পরিচালক, এই জার্নিটা কীভাবে হলো?
আমি বর্ধমানের ছেলে। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে ভালো লাগত না। ছোট থেকেই আমি ছবি পরিচালনা করব বা ছবির সঙ্গে যুক্ত কোনও কাজ করব ভাবতাম। তারপর হায়দরাবাদ থেকেই ছবির জগতে কাজ শুরু করি। বেশ কিছু দক্ষিণী ছবির পোস্টপ্রোডাকশনের সঙ্গে আমি যুক্ত ছিলাম। এরপর পারিবারিক কারণে আমাকে কলকাতা চলে আসতে হয়। এখানে এসে বুঝতে পারি যে এই জমিতে আমাকে আবার নতুন করে সবকিছু শুরু করতে হবে। এক্ষেত্রে আমার জীবনে দুজন মানুষের অবদান আছে। একজন সুরিন্দর ফিল্মসের নিসপাল রানে এবং ওই একই প্রযোজনা সংস্থার পূর্বতন ক্রিয়েটিভ হেড, সৌগত মুখোপাধ্যায়। প্রথমে আমি সুরিন্দর ফিল্মসের পোস্টক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর হিসেবে নিযুক্ত হই। আমি সুরিন্দরে অনেক বছর কাজ করেছি। ‘মীরা’, ‘মন মানে না’, ‘জগন্নাথ’ এইসব ধারাবাহিকে কাজ করেছি। গত লকডাউনে ‘বিক্রম বেতাল’ নামের একটি ২০০ পর্বের ধারাবাহিকও আমি শুট করেছি যেটার এখন পোস্টপ্রোডাকশনে চলছে। আপাতত ‘সাথী’ ধারাবাহিকটি পরিচালনা করছি।
পরিচালক হতে চেয়েছিলে, কিন্তু ছবি পরিচালনা না করে ধারাবাহিকে মন দিলে কেন?
দেখো, আমার ভীষণ ইচ্ছা একটা আদ্যোপান্ত কমার্শিয়াল ছবি বানানোর। একমাত্র আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতেই ছবিকে আর্ট এবং কমার্শিয়াল ফর্মে ভাঙা হয়। আমি নিজে বহুদিন দক্ষিণী ছবির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। ওখানে এধরণের কোনও ভাগ নেই। আমি এমন ছবি বানাবো যেটা কলকাতা এবং সমগ্র পশ্চিমবঙ্গের দর্শক দেখতে পারবে, বুঝতে পারবে। একটা ছবি বানিয়ে যদি সেটা বক্স অফিসে টাকা আনতে না পারে, তাহলে পরের কোন পরীক্ষামূলক কাজে প্রযোজক টাকা লগ্নি করবে কেন? এখানে বেশিরভাগ কমার্শিয়াল ছবি রিমেক হয়। যে মূল ছবিটা দেখে দর্শক খুশি হয়েছে, সেটারই বাংলা রিমেক দর্শক পছন্দ করেন না। একটা মৌলিক গল্প, তার সঙ্গে বাণিজ্যিক ছোঁওয়া এবং সামাজিক কোনও মেসেজ, আমি এমন ছবি বানাতে চাই।
আরও পড়ুন: আবারও ‘বিজয়’ অমিতাভ, এবার শিক্ষক
কিন্তু তুমি যে ধরণের ছবির কথা বলছ সেরকম ছবি তো আজকাল তৈরি হচ্ছে। তাহলে তোমার ছবি পরিচালনায় আসতে দেরি হচ্ছে কেন?
আসলে আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে খুব সহজেই কাউকে বলে দেওয়া যায় ‘এ পারবে না।’ আর বিশেষ করে যদি সে কোনও ধারাবহিক পরিচালনা করে, তাহলে তার দ্বারা ছবি পরিচালনা সম্ভব নয়। কিন্তু কেউ এটা ভাবেনা, একজন সৃষ্টিশীল মানুষের ইউএসপি হলো তাঁর সৃষ্টিসত্ত্বা। সেখানে একজন ধারাবহিক পরিচালনা করলে একরকম ভাবে করবে আবার ছবি পরিচালনা করলে তার দৃষ্টিকোণ আলাদা হবে। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় একজন সুপ্রতিষ্ঠিত চিত্রপরিচালক। তিনিও কিন্তু প্রথমে ধারাবাহিকই পরিচালনা করতেন। তবে আমি সত্যিই কোথাও গিয়ে নতুন কাজ আদৌ গ্রহণ হবে কিনা এই ভয়টা পাই। তারপর দেখব যেটা করছিলাম সেটাও হাত থেকে চলে গেল। তাই নতুন কোনও কাজ করতে ভয় পাই। এত বছর ইন্ডাস্ট্রিতে আছি, তবু কোথাও নিজেকে কোণঠাসা মনে হয়।
ধারাবাহিক পরিচালনার ক্ষেত্রে তোমার পরিচালক সত্ত্বা কতটা বজায় থাকে?
মিথ্যে বলব না, এই মুহুর্তে যেহেতু আমি ‘সাথী’ করছি সেখানে আমাকে নিজের মত কাজ করার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া আছে । তবে আমাদের তো প্রতিদিনের পর্ব শুট করে জমা করার একটা তাড়া থাকে। সেই কারণে সময়ের অভাবে কিছুটা হলেও স্বাধীনতা খর্ব হয়। এমন কিছু দৃশ্য আমি ভেবেছি সিনেম্যাটিক দৃষ্টিভঙ্গিতে শুট করব সেগুলো হয়তো সময়ের অভাবে করা হয়ে ওঠে না। সেখানে কিছুটা মন খারাপ তো হয়ই। তবে এটাও ঠিক, নিজের কাজে আত্মতুষ্টি না আসাই ভালো। যেদিন সেটা চলে আসবে, আরও ভালো কাজ করার খিদেটা চলে যাবে।
এই মুহূর্তে ধারাবাহিক ছাড়াও নতুন কোন কাজ ভাবছ?
‘সিনেনগরী’ বলে একটা অ্যাপ লঞ্চ করার কথা চলছে। এই প্ল্যাটফর্মে এমন কিছু ছবি আমরা আনব যে গল্প আগে কোনওদিন হয়নি। এছাড়া বিভিন্ন প্রযোজনা সংস্থায় নিজের বেশ কিছু লেখা জমা করেছি। এখন সময় কী উত্তর দেবে সেটাই দেখার।