রিস্ক তো নিতেই হবে: জয় সেনগুপ্ত
এক শতাব্দী প্রাচীন জমিদার বাড়ির অন্দরমহলের গোপন রহস্যের গল্প উঠে আসবে পরিচালক রন রাজের ‘পরিচয় গুপ্ত’ ছবিতে। সেই ছবিতে এক রূপান্তরকামী পুরুষের চরিত্রে অভিনয় করেছেন জয় সেনগুপ্ত (Joy Sengupta)। বাংলা ছবিতে এমন চরিত্র কমই এসেছে। ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘আরেকটি প্রেমের গল্প’ ও ‘চিত্রাঙ্গদা’র পর কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘নগরকীর্তন’ ছবিতে এমন একটি চরিত্র করেছিলেন ঋদ্ধি সেন। হিন্দি ছবিতে এই ধরনের চরিত্র মাঝেমধ্যে দেখা গেলেও বাংলায় এখনও তা খুব বেশি তৈরি হয় না। বড়পর্দায় তেমন কোনও চরিত্রে অভিনয় করতে দরকার হয় অনেকটা সাহসেরও। যদিও জয়ের কাছে ‘সুবলা’ শুধুমাত্র একটা চরিত্রই। রেডিওবাংলানেট-কে ছবি প্রসঙ্গে জানাতে গিয়ে উঠে এল নানা কথা
প্রশ্ন: ‘পরিচয় গুপ্ত’ ছবিতে তোমার চরিত্রটা কেমন? ছবির ট্রেলার দেখার পর এই প্রশ্নটা নিশ্চয়ই অনেকের মনেই জেগেছে
জয়: এই ছবিতে আমার চরিত্রের নাম সুবলা। ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে সে এই জমিদার বাড়িতে আসে। এখানে এসে জমিদারের ছেলের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হয়। সুবলার বাবা মারা গেলে এই বাড়িতে থেকেই সে মানুষ হয়। ছোট থেকেই তার মধ্যে নারীসুলভ কমনীয়তা দেখা যায়। সে শাড়ি পরে, সিঁদুর পরে, মেয়েদের মতো খেলা করে। আর এই জমিদারের ছেলে অর্থাৎ পরিচয় গুপ্তর প্রতি তার এক গভীর বন্ধুত্ব ও অনুরাগ রয়েছে। তার জন্য সে যা খুশি করতে পারে। পরিচয়ের প্রতি একটা অদ্ভুত কৃতজ্ঞতাবোধ এবং টান রয়েছে ওর মধ্যে।
প্রশ্ন: ছবিতে তোমার লুক সকলকে চমকে দিয়েছে। বাংলা ছবিতে এরকম চরিত্র খুব একটা পাইনি আমরা। ছবির লুক নিয়ে তোমার কী মনে হয়েছিল?
জয়: দেখো আমার কাছে লুকের থেকে চরিত্রটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যত বেশি সেটা ডার্ক হবে, ধূসর হবে, তাতে যত সূক্ষ্মতা থাকবে, ধার থাকবে, চ্যালেঞ্জ থাকবে, আমার কাছে সেটা তত বেশি আকর্ষণীয়। তারপরে আমি তার লুক নিয়ে ভাবব। প্রত্যেক চরিত্রেরই নিজস্ব লুক, স্টাইল, ভঙ্গি এবং ব্যক্তিত্ব থাকবে। সেইভাবেই চরিত্রটাকে বুঝতে হবে। চরিত্র যদি ইন্টারেস্টিং হয় তবে লুক নিয়ে ভাবার প্রয়োজন পড়ে না। কারণ সেটা করার জন্য একটা অন্যরকম আগ্রহ থাকেই। মজাও থাকে।
আরও পড়ুন: সব চরিত্র ক্রিমিনাল
প্রশ্ন: ছবির অন্য দুই অভিনেতা ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত ও ঋত্বিক চক্রবর্তীর সঙ্গে এটাই কি তোমার প্রথম কাজ? কেমন অভিজ্ঞতা হলো ?
জয়: ইন্দ্রনীলের সঙ্গে এর আগে আমি হিন্দিতে কাজ করেছি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তৈরি একটা ছবিতে একসঙ্গে কাজ করেছি আমরা। তবে ঋত্বিকের সঙ্গে এটা আমার প্রথম কাজ। ঋত্বিক আর আমার কেরিয়ার অনেকটা একরকম, কারণ আমরা দুজনেই থিয়েটারের ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেছি। আবার বাংলায় ছবিও করেছি একটু অন্য ধরনের। আমরা কেউই বাঁধাধরা কাজ করিনি। ফলে খুব ভালো একটা বোঝাপড়া তৈরি হয়েছিল ওর সঙ্গে, সেটে কাজ করার সময়, এবং সেটের বাইরেও। ঋত্বিকের কাজ আমার খুব পছন্দেরও।
প্রশ্ন: পরিচালকের এটাই প্রথম ছবি। সেখানে তোমার এরকম একটা চরিত্র, কিছুটা ঝুঁকি নিচ্ছ বলে মনে হয়নি?
জয়: ছবি মানেই তো ঝুঁকি। সবসময় যে নামি পরিচালক হলেই ছবি ভালো হবে এমনটা নয়। আবার নতুন পরিচালক হলেই দুর্বল কাজ হবে সেটাও নয়। এই রিস্কটা তো নিতেই হয়। আমি রিস্ক নিই চরিত্র দেখে আর চিত্রনাট্যে চরিত্রের সুযোগ কতটা সেটা বুঝে। এই ছবিতে আমার চরিত্রটা পছন্দ হয়েছিল সেই কারণেই করতে রাজি হয়েছি।
আরও পড়ুন: রামকমলের ‘লোকাল’-এ সওয়ার ঋতুপর্ণা, পাওলি
প্রশ্ন: ‘পরিচয় গুপ্ত’ মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল পুজোর আগে। সেটা পিছিয়ে ১৫ নভেম্বর হয়ে গেল। শীতের শুরুতে এরকম একটা থ্রিলার ছবি দর্শককে কতটা উৎসাহিত করবে বলে মনে হয়?
জয়: হ্যাঁ, ছবির মুক্তি পিছিয়ে গিয়েছে, কারণ তো সকলেরই জানা। সেই সময় কলকাতার ওপর দিয়ে একটা খুব খারাপ সময়, একটা ঝড় বয়ে যাচ্ছিল। প্রযোজকেরা মনে করেছেন সেই সময়টা ছবি রিলিজ় করে দর্শককে বিনোদনের জন্য আহ্বান জানানো ঠিক হবে না। এবার এই সময় মুক্তি পেলে ছবিটা দর্শকের কেমন লাগবে সেটা তো আগে থেকে বলা মুশকিল। কারণ দর্শক কী ধরনের ছবি দেখতে চাইছে তার ওপর নির্ভর করে তাদের কেমন লাগবে। তবে এই ছবিটার বিষয় একটু অন্যরকম, একটু জটিল। নতুন ধরনের গল্প দেখতে চাইলে এই ছবিটা হয়তো তাদের ভালো লাগবে।
প্রশ্ন: বছরের শুরুতে তোমার ‘সেদিন কুয়াশা ছিল’ মুক্তি পেয়েছিল। এর আগে এসেছে ‘সিটি অফ জ্যাকলস’। এখন নিয়মিত তোমাকে বাংলা ছবিতে দেখা যাচ্ছে। একটা সময় তুমি বেশ কম কাজ করতে। সেটা কি মুম্বইতে থাকার জন্য? কলকাতায় থাকলে তোমার কেরিয়ার অন্যরকম হতে পারতো এমনটা মনে হয় কি কখনও? নাকি নিজের কাজ নিয়ে তুমি খুশি?
জয়: আসলে আমার কাজের পরিধিটা বিভিন্ন মিডিয়ামে। আমি পাঁচটা ভিন্ন মাধ্যমে কাজ করি। ছবি করি হিন্দি, বাংলা, ইংরেজিতে। থিয়েটার করি করি হিন্দি ও ইংরেজিতে। বাংলায় থিয়েটার করার সুযোগ এখনও আসেনি। পেলে নিশ্চয়ই করব। ওটিটিতে কাজ করি তিন ভাষায়। টেলিভিশনে আগে অনেক কাজ করেছি, টেলিফিল্ম করেছি। এছাড়া ভয়েসিং এর কাজ করি, রেডিওতে কাজ করি। এর সঙ্গে পড়াই, ট্রেনিং দিই। কাজেই নানারকম কাজে আমি ব্যস্ত থাকি। দেশের বাইরেও কাজ করি। আমার কাছে ভাষা বা আঞ্চলিকতার থেকেও বেশি জরুরি কাজের এক্সাইটমেন্ট, নানারকম কাজে জড়িয়ে থাকার আনন্দ। আমার কাজ কোনওভাবেই ভৌগোলিক গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ নয়। নানারকম এক্সপেরিমেন্ট করতে থাকি। এভাবেই কাজ করতে ভালবাসি, এভাবেই করতে চেয়েছিলাম। নিজের কেরিয়ার নিয়ে আমি খুশি কারণ আমি নানা মাধ্যমে কাজ করতে চেয়েছি বরাবরই। একই ধরনের কাজ নয়, বরং নানারকম কাজ করায় একটা অন্য আনন্দ আছে। এর সঙ্গে কিছু এমন কাজ অবশ্যই করতে চাই যেটা আমার পরেও মানুষের মনে থেকে যাবে।