হাতিয়ার রবীন্দ্রনাথ, আবারও সম্প্রীতির নজির মেহরিনের
RBN Web Desk: ‘আমি তোমার বিরহে রহিব বিলীন, তোমাতে করিব বাস/দীর্ঘ দিবস, দীর্ঘ রজনী, দীর্ঘ বরষ মাস।’ বাঙালি আড্ডায় যে কোনও সময় দু’কলি রবীন্দ্রনাথ গেয়ে উঠতেই পারেন যে কেউ। কিন্তু তাই বলে ভিনদেশী আড্ডার মাঝে কোনও তরুণী যদি সেই গান গেয়ে ওঠেন তাহলে কেমন লাগতে পারে? আবার সেই দেশ যদি পাকিস্তান হয় তাহলে সত্যিই বিস্ময়ের সীমা থাকে না। এই বিস্ময়কর কাজটাই করে ফেলেছেন করাচির পরিচালক মেহরিন জব্বার, তাও আবার দু’বছর আগে।
শুরু করেন ‘রামচাঁদ পাকিস্তানি’ দিয়ে। বাবা জাভেদ জব্বারের কাহিনীতে একটি ডকুছবি তৈরি করেছিলেন মেহরিন। সেই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন এ পারের নন্দিতা দাস। এমনকি দেবজ্যোতি মিশ্র ও শুভা মুদ্গলও সে ছবির সঙ্গীতের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ছবির কাহিনী থেকে কলাকুশলী, সর্বত্রই দুই প্রতিবেশী দেশের ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। ভারত-পাক সম্প্রীতির নজির গড়েছিল ‘রামচাঁদ পাকিস্তানি’। একাধিক বিখ্যাত আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রশংসিত হয়েছিল সেই ছবি।
আরও পড়ুন: শেষ দৃশ্যে ভাঙা হোল্ডার, সত্যজিতের জয়জয়কার
এরপরের ঘটনা ২০১৯ সালের। তাঁর পরিচালিত জনপ্রিয় পাকিস্তানি ধারাবাহিক ‘দিল ক্যায়া করে’তে মেহরিন ব্যবহার করলেন আস্ত একটি রবীন্দ্রসঙ্গীত। পাকিস্তানি একটি মেয়ে, যে কিনা ওই ধারাবাহিকের নায়িকা, সে তার বন্ধুদের সঙ্গে এক ঘরোয়া আড্ডায় ‘আমার পরান যাহা চায়’ গাইছে। ধারাবাহিকের এই পর্বটি পাকিস্তানে সম্প্রচারিত হয় দু’বছর আগে। সম্প্রতি এক বাঙালি তা খুঁজে পেয়ে সেই গানের অংশটুকু টুইট করেন। নিমেষে ভাইরাল হয়ে যায় সেই ভিডিও। একসময় সেই খবর অধুনা ব্রুকলিনস্থিত মেহরিনের কাছেও পৌঁছয়। ধারাবাহিকে গানটি প্লেব্যাক করেছেন মারাঠি গায়িকা শর্বরী দেশপান্ডে।
আদ্যন্ত একটি অন্য ভাষার ধারাবাহিকে বাংলা গান কেন রাখলেন মেহরিন?
‘দিল ক্যায়া করে’র সেই পর্ব সম্প্রচারের প্রায় তিন বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে গানটি ভাইরাল হওয়ায় আপ্লুত মেহরিন জানিয়েছেন যে বহুদিন আগে নিউ ইয়র্কে তিনি শর্বরীর গলায় গানটি শুনেছিলেন। মানে না বুঝলেও কী যেন এক মায়া গানটির সঙ্গে তাঁকে জড়িয়ে দিয়েছিল। পরে তিনি শর্বরীর কাছে গানটির অনুবাদ চেয়ে পাঠান। আর সেই অনুবাদ হাতে পেয়ে চমকে ওঠেন তিনি। এ গানের কথা তো তাঁর ধারাবাহিকে ওই চরিত্রের মনের কথাই বলছে। আর দেরি না করে শর্বরীকে দিয়েই গানটা গাইয়ে ফেলেন মেহরিন।
আরও পড়ুন: ভক্তের স্তুতি ফেরালেন টোটা
তবে শুধু সাংস্কৃতিক উদ্যোগ নিয়ে কি সত্যিই দু’দেশের মধ্যে সম্প্রীতি ফেরানো সম্ভব? মেহরিন মনে করেন পরিস্থিতি বা সুযোগ যতক্ষণ না হচ্ছে, ততদিন দুই দেশের মধ্যে অন্তত সাংস্কৃতিক আদানপ্রদানটা হোক। এতে পারস্পরিক বোঝাপড়া আরও দৃঢ় হবে। ভারতীয় সিনেমা বা সিরিয়াল নিয়ে পাকিস্তানিরা যতটা ওয়াকিবহাল, পাকিস্তান সম্পর্কে ভারতীয়রা ততটা নন। এই ফারাকটা মেটানো দরকার বলে মনে করেন মেহরান।