ডেথ জ়োনের কাছাকাছি গিয়ে কাজ করেছি: চান্দ্রেয়ী
RBN Web Desk: একঘেয়ে সামাজিক ও থ্রিলার কাহিনী থেকে বেরিয়ে এসে ইদানীংকালে বাংলায় নানা পরীক্ষামূলক বিষয় নিয়ে ছবি হচ্ছে । তেমনই একটি ছবি পরিচালক দেবাদিত্য বন্দোপাধ্যায়ের ‘মিশন এভারেস্ট’। ২০১৬ সালের এভারেস্ট অভিযানের ঘটনা অবলম্বনে তৈরি এই ছবিতে পর্বতারোহী সুনিতা হাজরার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন চান্দ্রেয়ী ঘোষ।
একেবারে অন্যধারার ছবির জন্য ডাক পাওয়া প্রসঙ্গে চান্দ্রেয়ী রেডিওবাংলানেট-কে জানালেন, “প্রস্তাবটা পেয়ে প্রথমে যতটা ঘাবড়ে গিয়েছিলাম ঠিক ততটাই এক্সাইটেড ছিলাম। আমি আসলে ভাবছিলাম কীভাবে নিজেকে তৈরি করব, কারণ সুনিতাদির চরিত্রে অভিনয় করা সত্যি খুব কঠিন।”
তবে এই ছবিটি কারও বায়োপিক নয় বলে জানালেন চান্দ্রেয়ী। তাঁর মতে এখানে প্রতিটা চরিত্রই গুরুত্বপূর্ণ। সম্পূর্ণ অচেনা সাতজনের একটা দল এভারেস্ট অভিযানে যায়। সেখানে গিয়ে কী-কী ঘটনা ঘটে সেগুলো নিয়েই তৈরি হয়েছে ‘মিশন এভারেস্ট’।
আরও পড়ুন: বেহিসেবী জীবনযাপন, আজ স্মৃতির অতলে সৌমিত্র
চান্দ্রেয়ী জানালেন, “ছবির প্রস্তাব পাওয়ার পর জিম ইন্সট্রাক্টরকে বলেছিলাম, আমার দু’মাসের মধ্যে অ্যাথলিটদের মতো ফিটনেস চাই। ফিগারটা এক্ষেত্রে জরুরি নয়, তবে সাংঘাতিক ভালো ফিটনেস দরকার ছিল। এরপর ডাক্তার দেখানো, নানারকম ওষুধের সাহায্যে ইমিউনিটি তৈরি করার মতো আরও হাজারটা জিনিস মাথায় রাখতে হয়েছে।”
কেমন ছিল ছবির শুটিং পর্ব?
“আমরা বিশাল উচ্চতায় শুট করেছি,” বললেন চান্দ্রেয়ী। “সুনিতাদির স্বামী সুদেবদা পর্বতারোহণের ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ। এছাড়া দুই পেশাদার পর্বতারোহী ও দুজন অভিজ্ঞ শেরপা রোজ শুটে থাকতেন। যাঁরা সত্যি এই ধরণের অভিযানে যান, তাঁরা ডেথ জ়োনে গিয়ে কাজটা করে। আমরা অতটা না গেলেও, জীবনের ঝুঁকি নিয়েই কাজ করেছি। টানা চোদ্দ ঘণ্টা আমরা শুট করব শুনে ওখানকার লোকজন হেসেছিলেন। ওদের কাছে অসম্ভব ব্যাপার মনে হয়েছিল, তবু আমরা কাজ করে গেছি।”
এতটাই উচ্চতায় গিয়ে ছবির শুটিং হয়েছে যে সেখানে কোনও জনপ্রাণী ছিল না বলে জানালেন চান্দ্রেয়ী। প্রচণ্ড ঠান্ডায় কিছুদিন পর থেকে সকলেরই শরীর খারাপ হতে শুরু করে।
“আমাদের তখন সিদ্ধান্ত নিতে হতো, আমরা শুটিং চালিয়ে যাব, নাকি বন্ধ করে দেব। আমার তখন মাথার ভেতর অবধি তীব্র ব্যাথা, বমি হচ্ছে, মুখ ফুলে গেছে। সকলেই তখন কমবেশি অসুস্থ। এদিকে যদি শুট না করে ফিরে আসি, তাহলে তো কাজটা করতে আবার সেখানেই ফিরতে হবে। সেটা আরও কঠিন চ্যালেঞ্জ হতে পারতো। কারণ আবার লকডাউন হয়ে যাবে কিনা জানা ছিল না। তাই আমরা ওই অবস্থাতেই শুটিং করে গেছি। চল্লিশ দিন মতো আউটডোর ছাড়াও কলকাতায় কিছু দৃশ্যের শুট হয়েছে,” জানালেন চান্দ্রেয়ী।
আরও পড়ুন: রেগে আগুন কমল মিত্র, সুবিধা হলো সত্যজিতের
অভিনয় জগতে বাইশ বছর কাটানোর পরেও চান্দ্রেয়ী একইসঙ্গে ছবি, ওয়েব সিরিজ়, এমনকি যাত্রাতেও সমানতালে অভিনয় করে চলেছেন। এই প্রসঙ্গ উঠতে তিনি নিজেকে ভাগ্যবান বলে বর্ণনা করলেন তিনি। “আমি সত্যিই নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি যে বিভিন্ন ধরণের কাজ করতে পারছি, আর দর্শকও আমার কাজ ভালোবাসছেন। আমাদের পেশাটা খুব অনিশ্চয়তায় ভরা। সেখানে আমি যে এত ধরণের কাজ করার সুযোগ পাচ্ছি, পরিচালকরা ভাবছেন, দর্শকরা গ্রহণ করছেন, এটা আমার কাছে বিরাট প্রাপ্তি। আমি এভাবেই নানারকম কাজ করে যেতে চাই,” বললেন চান্দ্রেয়ী।
আগামীকাল মুক্তি পেতে চলেছে ‘মিশন এভারেস্ট’।