মঞ্চে ফিরল ‘দেবী চৌধুরানী’
কলকাতা: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘দেবী চৌধুরানী’ (Devi Chaudhurani) ফিরল মঞ্চে। অভিনয় করলেন থিয়েটার ও যাত্রার খ্যাতনামা শিল্পীরা। গতকাল শোভাবাজার নাটমন্দিরে অভিনীত হলো নবরূপে লিখিত নাটকটি। বঙ্কিমচন্দ্রের মূল উপন্যাসের নাট্যরূপ দিয়েছিলেন মহেন্দ্র গুপ্ত। তাঁর মৃত্যুর চল্লিশতম বছরে সেই নাটকের নবরূপায়ন করেছেন নাট্যকার সম্রাট মুখোপাধ্যায়। পরিচালনায় প্রান্তিক চৌধুরী। অভিনয় করলেন যাত্রা জগতের বিখ্যাত জুটি অনল চক্রবর্তী ও কাকলি চৌধুরী। এখানে তাঁরা ভবানী পাঠক ও প্রফুল্লর ভূমিকায় রয়েছেন। এছাড়াও রয়েছেন রাজু বড়ুয়া (রঙ্গরাজ), বিশ্বজিৎ সরকার (সাহেব), সৌমিত্র মিত্র (হরবল্লভ), ন্যান্সি (সাগর) ও সম্রাট বিশ্বাস (ব্রজেশ্বর)।
মূল উপন্যাসে মজনু শাহর উল্লেখ না থাকলেও নাটকে তাঁর কথা উল্লিখিত হয়েছে কারণ ১৮৮৪ সালে লেখা এই উপন্যাসে সারা বাংলা জুড়ে ব্রিটিশ বিরোধী যে আন্দোলনের কথা জানা যায়, তার এক কাণ্ডারী যেমন ছিলেন ভবানী পাঠক, তেমনই অন্যজন ছিলেন মজনু শাহ। নাটকে সুকৌশলে ইতিহাসকে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: শেখর-শার্লকে সাবাশ
নাটকে মূল উপন্যাসের শেষাংশ কিছুটা বদলে ফেলেছেন সম্রাট। বললেন, ” প্রফুল্ল সব শেষে বিপ্লব ছেড়ে স্বামীর ঘর করতে চলে যাচ্ছে এমনটা আর ২০২৪-এর দর্শক মেনে নেবে না। হয়তো খোদ সাহিত্যসম্রাটও এ কথা মেনে নিতেন।”
সেই ভেবেই এ নাটকের শেষে প্রফুল্ল তার দলবল নিয়ে পালিয়ে যায়। এরপর তার আর কোনও হদিস পাওয়া যায়নি। মন থেকে লেখা নয়, ইতিহাস এমনটাই বলে।
কাহিনির সামান্য অদলবদলে রসভঙ্গ তো হয়ই না, বরং দেবী চৌধুরানীর জীবনী নতুন করে রচিত হয় যেন।
যাত্রার মঞ্চে অনল ও কাকলি নায়ক-নায়িকা রূপে পরিচিত হলেও প্রথমবার জুটি ভেঙে গুরু-শিষ্যার ভূমিকায় অভিনয় করলেন তাঁরা। যাত্রা থেকে নাটকের মঞ্চে এসে দুজনেই স্তব্ধ করে দিলেন দর্শককে। সঙ্গে যোগ্য সঙ্গত করেছেন অন্যান্য অভিনেতারাও। বিশেষ করে হরবল্লভের চরিত্রে সৌমিত্রর অভিনয় মনে রাখার মতো। স্মরণীয় অভিনয় করলেন রাজু, বিশ্বজিৎ, সম্রাট, ন্যান্সি সকলেই।
“একদা যাত্রা ও নাটককে এক মঞ্চে বাঁধার স্বপ্ন দেখেছিলেন স্বয়ং শিশির ভাদুড়ী এবং পরবর্তীকালে শম্ভু মিত্র। সেই স্বপ্নের বাস্তবায়নই আমরা করতে চেয়েছি,” বললেন সম্রাট।
নাটকে রয়েছে প্রায় এক ডজন গান। রচনা ও সুর সংযোজন করেছেন নাট্যকার নিজেই। আবহ ও সঙ্গীত আয়োজন করেছেন রাতুল চন্দ রায়। আগাগোড়া নাটকের আবহ গায়ে কাঁটা দেওয়ার মতোই, গানগুলিও অনবদ্য। হাতিবাগান, উত্তর কলকাতা এলাকার রঙ্গমঞ্চগুলি একের পর এক বন্ধের মুখে। সেই সময় শোভাবাজার নাটমন্দিরে এই নাটকের অভিনয় তাৎপর্যপূর্ণ তো বটেই। একসময় নট্ট কোম্পানির নতুন পালা অভিনীত হতো শোভাবাজার নাটমন্দিরেই।
মাত্র ছ’টি মহলার সাহায্যে দর্শকদের সামনে পূর্ণাঙ্গ নাটক হাজির করেছেন শিল্পীরা। গতকালের পর আজ দুপুর তিনটে ও সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টায় একই মঞ্চে অভিনীত হবে নাটকটি। আপাতত আর মঞ্চস্থ করার দিন পাওয়া না গেলেও, দর্শকের উৎসাহ পেলে অদূর ভবিষ্যতে আবারও মঞ্চে দেখা যেতে পারে ‘দেবী চৌধুরানী’।
ছবি: স্বাতী চট্টোপাধ্যায়