সত্যজিতের ধাঁচটা রেখেই ‘অভিযাত্রিক’-এর পোশাক পরিকল্পনা: অগ্নিমিত্রা

RBN Web Desk: কাজ শুরুর আগে ‘অপু ট্রিলজি’ দেখেছেন একাধিকবার। সত্যজিৎ রায় যেভাবে পোশাক পরিকল্পনা করেছিলেন, সেই ধাঁচটা মাথায় রেখেই এগিয়েছেন তিনি, জানালেন ডিজ়াইনার অগ্নিমিত্রা পাল। পরিচালক শুভ্রজিৎ মিত্রর ছবি ‘অভিযাত্রিক’-এ পোশাক পরিকল্পনা করেছেন অগ্নিমিত্রা। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘অপরাজিত’ উপন্যাসের যে অংশ সত্যজিৎ তাঁর ট্রিলজিতে রাখেননি, তাই নিয়েই শুভ্রজিৎ তৈরী করেছেন এই ছবি। ১৯৫৯-এ ‘অপুর সংসার’ যেখানে শেষ হয়েছিল, ছয় দশক পর ঠিক সেখান থেকেই ফের শুরু হবে অপুর পথচলা। ছবির বিভিন্ন চরিত্রে রয়েছেন অর্জুন চক্রবর্তী, দিতিপ্রিয়া রায়, অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়, সোহাগ সেন, শ্রীলেখা মিত্র, সব্যসাচী চক্রবর্তী ও বরুণ চন্দ। ছবির চিত্রগ্রহণের দায়িত্বে রয়েছেন সুপ্রতিম ভোল।

“শুভ্রজিৎ প্রথম থেকেই জোর দিয়েছিল পোশাকের টেক্সচারের ওপর,” রেডিওবাংলানেট-কে জানালেন অগ্নিমিত্রা। “যেহেতু ছবিটা সাদাকালোয়, তাই রং বোঝানোর কোনও সুযোগ নেই। টেক্সচারটা বোঝাতে হবে, এটা মাথায় রেখেই কাজ করতে হয়েছে। তাই প্রতিটা পোশাক তৈরী করার পর পর সেটা সুপ্রতিমকে দেখিয়ে ছবি তুলে দেখা হয়েছে পর্দায় কেমন দেখতে লাগবে। এমনও হয়েছে পর্দায় হয়তো দেখা গিয়েছে জিনিসটা তেমন ভালো দেখাচ্ছে না। তখন পুরোটাই পাল্টাতে হয়েছে।”

আরও পড়ুন: ফাগুন লেগেছে বনে বনে

ছবিতে গ্রামীণ প্রেক্ষাপটের পাশাপাশি অপু ও কাজলের শহরে আসার গল্পও থাকছে। তাই দুই ভিন্ন প্রেক্ষাপটে দু’রকম পোশাকের পরিকল্পনা করতে হয়েছে অগ্নিমিত্রাকে। “কাজল যখন গ্রামে থাকছে তখন সে ধুতি ফতুয়া পরছে। আবার যখন শহরে আসছে তখন হাফ প্যান্ট, নেভি শার্ট, কোট, এসব পরছে। অপুর পোশাক একটু শহরঘেঁষা। পুরোনো বাংলাশার্টের ব্যবহার করেছি আমরা। বেনুদাকেও (সব্যসাচী) শহরের পোশাকেই দেখা যাবে,” জানালেন তিনি।

‘অপুর সংসার’-এ অপুর স্ত্রী অপর্ণার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন শর্মিলা ঠাকুর। সত্যজিতের হাত ধরেই সেলুলয়েডে হাতেখড়ি শর্মিলার। ‘অভিযাত্রিক’-এ অপর্ণার পোশাকে কোনও নতুনত্ব থাকছে কি? “অপর্ণার ক্ষেত্রে শর্মিলাজীর সাজ আর শাড়িকে মাথায় রেখেই ডিজ়াইনটা করেছি,” জানালেন অগ্নিমিত্রা। “তখনকার ঢাকাই শাড়ির সেই ডিজ়াইন তো এখন আর পাওয়া যায় না। তাই আলাদা করে ঢাকাইয়ের পাড়ে সুতোর এমব্রয়ডারি করে শাড়ির সঙ্গে সেটাকে জুড়েছি, যাতে সেই সময়ের লুকটা আনা যায়। এমন নয় যে ‘অপু ট্রিলজি’তে যা ছিল হুবহু তাই থাকবে এখানে। ওই এসেন্সটা রাখার চেষ্টা করেছি আমরা। এছাড়া সেই সময়টাকে বিভিন্ন সূত্র থেকে জেনে তার ওপর রিসার্চ করেই পোশাক তৈরি করা হয়েছে।” 

আরও পড়ুন: সিনেমার মতোই ছিল যে জীবন

সাদাকালোর যুগকে ডিজিটাল সময়ে তুলে আনতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সুতি ও খাদির ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানালেন তিনি। এছাড়াও জপের মালা, গয়না, তুলসীর মালা, এরকম সূক্ষ্ম ডিটেলিংয়ের মাধ্যমে সেই সময়টাকে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে ছবিতে।

“আসলে পিরিয়ড ছবির জন্য কাজ করা একটা বড় চ্যালেঞ্জ,” বললেন অগ্নিমিত্রা। “তবে চ্যালেঞ্জ থাকেলও এরকম ছবিতে নানা ধরণের রিসার্চ ও পরীক্ষানিরীক্ষারও সুযোগ পাওয়া যায়। বর্তমান সময়ের তো সবটাই জানা থাকে। যে কোনও একটা হালফ্যাশেনর পোশাক ব্যবহার করলেই অনেক সময় কাজ চলে যায়। কিন্তু পিরিয়ড ছবিতে একটা ফেলে আসা সময়কে পুনর্নির্মাণ করার কাজটা একজন ডিজাইনার হিসেবে নতুন উদ্যম এনে দেয়।”

Amazon Obhijaan



Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Swati

Editor of a popular Bengali web-magazine. Writer, travel freak, nature addict, music lover, foody, crazy about hill stations and a dancer by passion. Burns the midnight oil to pen her prose. Also a poetry enthusiast.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *