বাংলাদেশে কাজ করতে আমি আর আগ্রহী নই: অরিন্দম

শ্যুটিংয়ের ব্যস্ততা, অন্যের ছবির বিপণন, বালিঘর নিয়ে অনিশ্চয়তা, আর তার মধ্যেই টেলিভিশনে ফিরে আসা। একান্ত সাক্ষাৎকারে পরিচালক অরিন্দম শীল রেডিওবাংলানেট-কে জানালেন তার বাংলাদেশ নিয়ে আশাভঙ্গের কথা, আর কেনই বা ভূমিকন্যা বদলে দিতে পারে বাংলা টেলিভিশনের চেনা ছক।

এক সপ্তাহ হল ভূমিকন্যা এসেছে ছোট পর্দায়। এখনও পর্যন্ত দর্শকদের প্রতিক্রিয়া কি?

এক কথায় দুর্দান্ত। সবথেকে বড় প্রাপ্তি, যারা টেলিভিশন দেখতেন না, তারাও দেখছেন এবং আলোচনা করছেন এই ধারাবাহিক নিয়ে। অনেকেই নিজে আমাকে বলেছেন যে তারা আবার টেলিভিশন দেখছেন ভূমিকন্যার জন্য।

ভূমিকন্যা দর্শকদের ভালো লাগার পেছনে কারণ কি?

আমরা প্রচুর হোমওয়ার্ক করে তবে হাত দিয়েছি এই ধারাবাহিকে। প্রায় এক বছরের পরিশ্রম আছে এর পেছনে। স্টুডিয়োর বদ্ধ পরিবেশের বাইরে গিয়ে আসল লোকেশনে শ্যুট করেছি আমরা। যেমন কম্বোডিয়ার আঙ্কোর ভাট। বাংলা ধারাবাহিক তো ছেড়েই দাও, কোনও হিন্দী ছবিও গত কয়েক দশকে কম্বোডিয়ায় শ্যুটিং হয়নি। এছাড়াও প্রচুর বহিঃদৃশ্যের কাজ আছে, গল্পে নাটকীয়তা আছে, থ্রিল আছে, অ্যাকশন আছে। গোটা কাজটায় একটা সিনেম্যাটিক লুক আছে। এবং দর্শক আমাদের বলেছেন যে ভূমিকন্যা দেখে বড় পর্দার কাজ মনে হচ্ছে। ছোট পর্দায় যারা কাজ করেন না, যেমন সোহিনী সরকার, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, সুদীপ্তা চক্রবর্তী, কৌশিক সেন, চিরঞ্জীৎ চক্রবর্তী, এদের সবাইকে ড্রইং রুমে বসে দেখতে পাচ্ছেন দর্শক। এই সব মিলিয়েই সবার ভালো লাগছে ভূমিকন্যা। টিআরপি যদি ভালো হয় তাহলে আরও ভালো লাগবে।

খারাপভাবে করা সমালোচনায় রাগ তো হয়ই: সোহিনী

কিন্তু ভূমিকন্যা তো টিআরপি নির্ভর ধারাবাহিক নয়

নিশ্চয়ই। ভূমিকন্যা সীমিত পর্বের ধারাবাহিক এবং সেই জন্যই একে টেলিভিশন সিরিজ় বলছি আমরা, মেগাসিরিয়াল নয়। একটা নির্দিষ্ট পর্বেই শেষ হবে ভূমিকন্যা এবং কিভাবে শেষ হবে সেটাও ভেবে নিয়েছি। কিন্তু ভালো টিআরপি পেলে টেলিভিশনে একটা স্বাদবদল ঘটবে। কাউকে ছোট না করেই বলছি, দর্শক সারাক্ষণ ওই একঘেয়ে শাশুড়ি-বৌমা-ননদের কেচ্ছা, এক-একজনের খানকতক করে বিয়ে, এইসব দেখে বিরক্ত। বর্তমান সময়ের টেলিভিশন কনটেন্ট দেখে আমার মনে হয়েছিল এর থেকে অনেক ভালো কিছু আমাদের প্রাপ্য। সেই জন্যই ভূমিকন্যা করার সিদ্ধান্ত নিই।

এই ধারাবাহিকের কাস্টিং কিভাবে করলে?

তরিতা, অঙ্কুশ, আর চন্দ্রভানুর চরিত্রে যথাক্রমে সোহিনী, অনির্বাণ আর কৌশিককে নেব এটা চিত্রনাট্য লেখার অনেক আগে থেকেই স্থির করেছিলাম। বাকি চরিত্রগুলো তারপর একে একে সাজাই।

Advertisement

পরিচিত শিল্পীর পাশাপাশি অনেক নতুন মুখও আছে এই ধারাবাহিকে

একদম তাই। পার্শ্বচরিত্রে যারা আছে, তারা সবাই থিয়েটারের। দারুণ কাজ করছেন এরা। তাছাড়া অনির্বাণ, কৌশিক, সুদীপ্তাও তো মঞ্চ থেকেই বড় পর্দায় এসেছে। তাই ভূমিকন্যায় অভিনয়ের মান অন্যান্য যে কোনও ধারাবাহিকের থেকে অনেকটাই ভালো।

ছবির কথায় আসি। সম্প্রতি বাংলাদেশে ছবির শ্যুটিং নিয়ে একটা বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। কলকাতার অনেক পরিচালকই আর কোনও ভারত-বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনায় কাজ করতে চাইছেন না। এটা হঠাৎ কেন হল?

যে দেশ শিল্প-সংস্কৃতিতে এত সমৃদ্ধ, সেই দেশই রাজনৈতিকভাবে এতটা পর্যদুস্ত, এটা না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। এটা খুব দুঃখের এবং বলতেও খারাপ লাগছে যে বাংলাদেশের নাম শুনলে এখন আমার জ্বর আসে। সমস্ত ব্যাপারে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, লালফিতের বাঁধন এতটাই বেশি যে ওখানে স্বাধীনভাবে কাজ করা অসম্ভব। আর তার সঙ্গে রয়েছে চরম অপেশাদার মনোভাব। সত্যি কথা বলতে কি, বাংলাদেশ নিয়ে আমি আর আগ্রহী নই।

তিন মূর্তি ও পায়ের তলায় সরষে

তাহলে বালিঘর-এর কি হবে?

প্রযোজক সংস্থা থেকে আমাদের জানানো হয়েছ যে সামনেই বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন। তাই বিদেশী কোনও পরিচালক এখন ওখানে কাজ করতে পারবেন না। সেপ্টেম্বরে বালিঘর-এর শ্যুটিং শুরু হওয়ার কথা ছিল। সেটা আপাতত হচ্ছে না। আমি এখন সত্যিই জানি না এই ছবির ভবিষৎ কি। প্রায় এক বছর পরিশ্রম করেছিলাম আমরা। তবে যে কাজটা অদূর ভবিষ্যতে হওয়ার সম্ভাবনা নেই, তার পেছনে সময় নষ্ট না করে সামনের দিকে তাকাতেই আমি বিশ্বাস করি। ব্যোমকেশ গোত্র আসছে পুজোয়। তাই নিয়ে ব্যস্ততা চলছে এখন।

কিন্তু যৌথ প্রযোজনা হলে বাংলা ছবির বাজারটা তো বাড়ত?

নিঃসন্দেহে। সেটা আমি এখনও বিশ্বাস করি এবং সেই জন্যই ফাখরুল আরেফিন-এর ছবি ভূবন মাঝি রিলিজ় করেছি কলকাতায়। ফাখরুল স্বাধীন পরিচালক। নিজেই প্রযোজনা করেছেন এই ছবি। কিন্তু এখান থেকে আমরা যখনই বাংলাদেশে কোনও ছবির কাজ করতে যাচ্ছি, তখনই নানা বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে আমাদের।

তাশি গাঁওয়ে একদিন

ছবি, ছবির বিপণন, টেলিভিশন, নিজের প্রযোজনা সংস্থা সামলানো, অনেকগুলো কাজে জড়িয়ে তুমি। সময় বার করো কিভাবে?

দেখো, তুমি যে কাজটা করতে চাইছ, সেটা যদি মন দিয়ে, একাগ্রচিত্তে করো, তাহলে কোনও কিছুই অন্তরায় নয়। আমিও আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতই পরিবারকে সময় দিই, বেড়াতে যাই, বন্ধুবান্ধবের সাথে দেখা করি। কিন্তু আমি বাজে সময় কাটাই না। যেটুকু সময় পাই, সেটা সঠিকভাবে ব্যবহার করি।

Amazon Obhijaan

Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Jeena

Workaholic, romantically challenged, and suffering from UTS (unstoppable talking syndrome). The wanton explorer. Maybe a walk on a frozen lake, placing my feet where they have never been before. Nonformal, tounge-in-cheek sometimes.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *