“বাংলা ছবিতে অ্যাকশন দেখতে কখওনই খুব পেশাদার লাগে না”
বাংলার নতুন অভিনেতাদের মধ্যে আলাদাভাবে নজর যায় তাঁর দিকে, কারণ তাঁর অভিনয় দক্ষতা। রোমান্টিক ছবি দিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে পা রাখলেও এবার অ্যাকশন ছবির মূল চরিত্রে থাকছেন অনিন্দ্য সেনগুপ্ত (Anindya Sengupta)। সৌভিক দে’র ‘ব্রহ্মার্জুন’ ছবিতে প্রথমবার পুরোপুরি অ্যাকশনভিত্তিক চরিত্রে রয়েছেন তিনি। নতুন ছবি, নিজের কেরিয়ার, নানা বিষয়ে রেডিওবাংলানেট-এর সঙ্গে আড্ডা দিলেন অনিন্দ্য
‘ব্রহ্মার্জুন’ তোমার প্রথম অ্যাকশন ছবি। কতটা প্রস্তুতি নিতে হয়েছিল অর্জুনের চরিত্রের জন্য?
অনিন্দ্য: আগে যে একেবারেই অ্যাকশন করিনি তেমন নয়। তবে হ্যাঁ, যে অর্থে একটা ছবিকে অ্যাকশন ফিল্ম বলা হয়, সেই অর্থে অবশ্যই এটা অ্যাকশন ছবি। এর আগে এরকম ছবিতে কাজ করিনি আমি এটা ঠিকই। তবে আমি নিয়মিত শরীরচর্চা করি, খেলাধুলা করি, নাচ ভালোবাসি। তাই আমি বরাবরই অ্যাকশন করতে চেয়েছি। তবে বলে রাখা দরকার, অ্যাকশন দৃশ্যে কোরিওগ্রাফি একটা বড় ব্যাপার। বাংলা ছবির ক্ষেত্রে সবথেকে বড় মুশকিল এটাই যে নাচ হোক বা অ্যাকশন, এখানে রিহার্সলের জন্য সময় দেওয়া হয় না। সিনের আগে কোরিওগ্রাফার এসে দেখাবেন সেটা শিখে আমাকে শুট করতে হবে। আগে থেকে প্রস্তুতির কোনও সুযোগই থাকে না। সেই জন্য বাংলা ছবিতে অ্যাকশন দেখতে কখওনই খুব পেশাদার লাগে না। মুম্বইয়ে কোনও নাচ বা অ্যাকশন দৃশ্যের জন্য একমাস পর্যন্ত রিহার্সালের সময় পায়। আমরা সেটা পাই না। আমার তো মনে হয় সেই কারণেই বাংলায় অ্যাকশন ছবি কমে যাচ্ছে কারণ আমরা ওইটুকু সময় রিহার্সাল দিয়ে যা দেখাতে পারব তার চেয়ে অনেক উঁচুদরের অ্যাকশন দর্শক মোবাইলে প্রতিদিন দেখছে। বা দক্ষিণের ছবিতে যেভাবে অ্যাকশন হচ্ছে, বা সেই দৃশ্যগুলো তোলা হচ্ছে, সেটা এখানে ভাবাই যাবে না।
তুমি তো সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ছবিতে দারুণ নেচেছিলে, তোমার প্রথম ছবির প্রথম দৃশ্য। সেখানে প্রস্তুতির সময় পেয়েছিলে?
অনিন্দ্য: হ্যাঁ সৃজিতদার ‘X= প্রেম’ ছবিতে আমাকে ট্যাঙ্গো নাচতে হয়েছিল তাও আবার ধুতি পরে। ওটা আমার ছবিতে প্রথম অ্যাপিয়ারেন্স। যদিও আমার নাচের ট্রেনিং আছে তবু ট্যাঙ্গো খুব কঠিন একটা নাচের ফর্ম। তার ওপর সেই নাচটা আমাকে করতে হচ্ছে ধুতি পরে! পুরো ব্যাপারটা শিখে প্র্যাকটিস করে নামাতে আমাকে সময় দেওয়া হয়েছিল মাত্র পৌনে দু’ঘণ্টা। ভিকি কৌশল ওঁর তওবা-তওবা নাচের জন্য চারদিন রিহার্সাল করেছিল, শুটিং হয়েছিল দু’দিন ধরে। আশা করি বোঝা যাচ্ছে আমি কী বলতে চাইছি।

শুটিংয়ে, রোহনের সঙ্গে
কেমন লাগল অ্যাকশন দৃশ্যে অভিনয় করতে? রোহনের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?
অনিন্দ্য: আমি অ্যাকশন করতে খুব ভালোবাসি। তাই খুব এনজয় করেছি পুরো ব্যাপারটা। রোহন জাতীয় স্তরে কমব্যাট ফোর্সে বাংলার প্রতিনিধিত্ব করেছে। ও ক্যাপ্টেন ছিল। রোহনের সঙ্গে ‘হস্টেল ডেজ়’ এ কাজের সময় থেকে আলাপ। আমরা খুব ভালো বন্ধু হয়ে যাই ওই সময় থেকেই। তাই সেই সম্পর্কের কেমিস্ট্রিটা এখানে ছিলই। দুজনকে যখন অ্যাকশন করতে হয়েছে, একে অপরের বিরুদ্ধে হোক বা একসঙ্গে হোক, সেখানে একটা কমফোর্ট জ়োন ছিলই। তবে ওই, আর একটু যদি রিহার্সালের সুযোগ পেতাম, বেশি না দু’ঘন্টা বাড়তিও যদি পেতাম তাহলে হয়তো আর একটু বেশি ভালো অ্যাকশন দৃশ্য করতে পারতাম আমরা।
ছবির ট্রেলার দেখে যেটা মনে হয়, রণবীর সিং-অর্জুন কপূরের হিন্দি ছবি ‘গুন্ডে’র সঙ্গে মিল রয়েছে। তাই কি?
অনিন্দ্য: একেবারেই ঠিক ধরেছ। হ্যাঁ, গল্পের ধরনে ‘গুন্ডে’র সঙ্গে মিল আছে। তবে গল্প এক নয়, অবশ্যই মৌলিক। তবে ধরনটা ওইরকম। দুটো অনাথ বাচ্চা কীভাবে বেআইনি জিনিস পাচারের ভেতর ঢুকছে, তারপর ধীরে-ধীরে তারা সেই এলাকায় নিজেদের ক্ষমতা বিস্তার করছে এটা নিয়েই অ্যাকশন ড্রামা। তাই সব মিলিয়ে ছবিটায় অনেক কিছু আছে এটুকু বলতে পারি। আমার নিজের এই ধরনের ছবি দেখতে দারুণ লাগে। আশা করব আমাদের কাজ দর্শকের ভালো লাগবে।
আরও পড়ুন: বড়পর্দা থেকে নাটকের মঞ্চে ‘সপ্তপদী’
এই ছবিতে তোমার অভিনীত চরিত্র অন্য ছবির থেকে আলাদা। শারীরিক অভিনয় সেখানে কম থাকে। সেটা কতটা সহজ বা কঠিন মনে হয়েছে?
অনিন্দ্য: দেখো, পারফরমেন্সের দিক দিয়ে দেখলে আমার কাছে যে কোনও ছবিই সমান গুরুত্বপূর্ণ। অভিনয়ের ধারা আলাদা হতে পারে। কিন্তু কঠিন সবক’টাই। কারণ এরকম একটা ছবিতে নিজেকে খাপ খাওয়ানো এবং পারফর্ম করাও যথেষ্ট কঠিন। এই ধরনের ছবিতে কিছু দৃশ্যের মধ্যে দিয়ে এই যে হিরো হয়ে ওঠা, এটা আমার খুব পছন্দের।
অভিনেতা অনিন্দ্য নাকি নায়ক অনিন্দ্য, নিজেকে কোন জায়গায় দেখতে চাও?
অনিন্দ্য: আমি অভিনয় করে নায়ক হয়ে উঠতে চাই। আসলে দুটোই হতে চাই। দুটোর প্রতিই আগ্রহ আছে আমার। কিন্তু খুব তাড়া নেই। আমি চাই দর্শক আমার অভিনয় দেখুক, অ্যাকশন দেখুক। দেখে মনে রাখুন। এইগুলোর মধ্যে দিয়ে আমি নিজের পছন্দের জায়গাটা পেতে চাই। এক্ষুণি খুব জোরে দৌড়ে ওই জায়গায় পৌঁছনোর তাড়া আমার নেই। বড় বাড়ি বা বড় গাড়ি সকলেই পেতে চায়। আমিও চাই। কিন্তু সেটা আমার কাজের মধ্যে দিয়ে আসুক। যাতে সেই পাওয়াটা সত্যিই মনে রাখার মতো হয়।
আরও পড়ুন: বাঙালিয়ানা ফিরিয়ে আনবে ‘রাস’, প্রকাশ্যে লুক
সৌভিকের সঙ্গে এটা তোমার প্রথম কাজ। অ্যাকশন ছবিতে কাজের ক্ষেত্রে পরিচালকের থেকে কতটা সাহায্য পেয়েছ?
অনিন্দ্য: ও আমাকে এই চরিত্রে ভেবেছে তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। এছাড়া সৌভিক আমাদের কাজের ক্ষেত্রে অনেকটা স্বাধীনতা দিয়েছে। কোনও একটা দৃশ্য পড়ে আমার যেরকম মনে হয়েছে ওকে বলেছি ও সেটা আমাকে করতে দিয়েছে। তার মানে ধরে নেওয়া যায় ওর সেটা অপছন্দ হয়নি। তাই সেদিক দিয়ে ওর সঙ্গে কাজ করে বেশ ভালো লেগেছে।
‘ব্রহ্মার্জুন’-এ হিন্দি ছবির সিনিয়র অভিনেতারা রয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?
অনিন্দ্য: জ়ারিনা ওয়াহাবের সঙ্গে আমার কোনও দৃশ্য নেই। কারণ আমার আর রোহনের চরিত্র, দুজনেই অনাথ। আমরা ছোট থাকতেই আমাদের মা মারা যাচ্ছে, এরকম একটা ব্যাপার। মুম্বইয়ের সিনিয়র অভিনেতা মুস্তাক খানের সঙ্গে আমার দৃশ্য আছে। উনি আর সুদীপদা (মুখোপাধ্যায়) একসঙ্গে সিন করেছেন সেটা সত্যিই দেখার মতো। মুম্বই হোক বা বাংলা এরা এতটাই সিনিয়র আর স্কিলড যে কিছু বলতে হয় না। ভীষণরকম তৈরি হয়ে এরা সকলেই সেটে আসেন। তারপর যেটা করেন সেটা দেখার মতো হয়।
আরও পড়ুন: কেমন আছে মুকুলের বাড়ি? ছবি তুলে আনলেন রিঙ্গো
২৩ মে ছবির মুক্তি, নতুন ধরনের ছবি ও চরিত্র নিয়ে কতটা আশা বা ভয় করছে এই মুহূর্তে? বাংলায় এই ধরনের ছবির ভবিষ্যত নিয়ে তোমার কী মনে হয়?
অনিন্দ্য: ভয় বা আশা কোনওটা নিয়েই খুব কিছু ভাবছি না। কারণ যা হওয়ার এতদিনে হয়ে গেছে। আমাদের কাজটুকু আমরা করেছি। এরপর পোস্ট-প্রোডাকশন বা এডিটিং, এগুলো সব সৌভিক করেছে। সবটা যদি ঠিক থাকে আমার মনে হয় মানুষ ঠিকই দেখবেন। এই ধরনের ছবি কম হয় বলেই দর্শক দেখেন না। ছবি তৈরি হলে নিশ্চয়ই দেখবেন। আর বাজেট এখানে একটা বরাবরের সমস্যা। সেটা ছিল, এবং থাকবেও। তাই বলিউডের কোনও ছবি, ধরা যাক ‘ছাওয়া’, সেরকম কোনও বিশাল গল্প আমরা ভাবব কেন? আমাদের বাজেটে যেটা আসে বা যতটুকু আসে, ততটুকু ভেবে নিয়ে এগোনোই বুদ্ধিমানের কাজ হবে বলে আমার মনে হয়।
ছবি: প্রতিবেদক
