কলকাতায় বসে হিন্দি ছবির ভিএফএক্সের কাজ করেছি: সুদীপ

তাঁর ঝুলিতে খুঁজলে সাম্প্রতিককালের প্রায় সব সফল বাংলা ছবির নাম পাওয়া যাবে। কী নেই সেই তালিকায়? ‘অরুন্ধতী’, ‘জাতিস্মর’, ‘চাঁদের পাহাড়’, ‘রাজকাহিনী’, ‘প্রাক্তন’, ‘ব্যোমকেশ পর্ব’, ‘কিডন্যাপ’, ‘গোত্র’, ‘সুলতান’, ‘কন্ঠ’, ‘জ়ুলফিকার’, ‘বাদশাহী আংটি’, ‘দৃষ্টিকোণ’, ‘টেকো’, ‘হামি’, ‘জ্যেষ্ঠপুত্র’ এবং হিন্দি ছবি ‘পিঙ্ক’ও। এই সমস্ত ছবির ভিজ়্যুয়াল এফেক্ট বা ভিএফএক্সের দায়িত্বে ছিলেন সুদীপ সামন্ত। বর্তমানে সুরিন্দর ফিল্মসের সঙ্গে যুক্ত সুদীপ ভিএডএক্সের কাজ শুরু করেন ২০১৪ সালে। সাত বছরে কলকাতার প্রায় সব প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে কাজ করে ফেলেছেন তিনি। রেডিওবাংলানেট-এর সঙ্গে আড্ডায় জানালেন তাঁর কাজের কথা। 

সকলেই তো পরিচালক বা অভিনেতা হতে চায়। সেখানে তোমার কাজটা শুরু হয় শ্যুটিং শেষ হবার পরে। কীভাবে এলে এই কাজে? 

আমার পরিবারের কেউ কোনওদিন এই ইন্ডাস্ট্রিতে ছিল না। তবে আমার ছোট থেকেই এই ব্যাপারটায় শখ ছিল। ফটোশপ শিখেছি প্রায় নিজে নিজেই। সঠিক গাইডেন্স বলতে যা বোঝায় তা কখনও পাইনি। অ্যানিমেশন নিয়ে পড়াশোনা করার পরে প্রিন্ট মিডিয়ায় কাজ করছিলাম। কিন্তু আমার ইচ্ছে ছিল ভিজ়্যুয়াল এফেক্ট নিয়ে কাজ করার। চাকরিটা ছেড়ে দিলাম, তারপর মুম্বইতে ভিএফএক্স আর্টিস্ট হিসেবে কাজ শুরু করলাম। ২০১৩ সালে কলকাতায় ফিরে সেই কাজই এখানে শুরু করলাম। কিছুটা প্রথাগত পড়াশোনা আর বেশিরভাগটাই ঠেকে শেখা। কাজ করা আর শেখা সমানতালে চলছিল। এরপর ভিএফএক্স লাইন প্রোডিউসার হিসেবে কাজ শুরু করি। সঙ্গে পোস্ট-প্রোডাকশনের কাজও চলতে থাকে। কলকাতায় সেই সময় এই কাজটা শুধু আমিই করতাম। প্রথম কাজ সুজিত মণ্ডলের ‘অরুন্ধতী’। বাংলায় বসে মুম্বইয়ের কাজও করেছি। অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরীর ‘পিঙ্ক’-এর  ভিএফএক্স লাইন প্রোডিউসারের কাজ করেছি এখানে বসেই।




বাংলা ছবিতে ভিএফএক্সের সুযোগ কতটা? হিন্দি ও বাংলা ছবির কাজের ক্ষেত্রে কোনও তফাৎ থাকে কি? 

বাংলা ছবিতে ভিএফএক্সের কাজ এখনও অবধি সবচেয়ে বড় প্রজেক্ট করেছি ‘সাগরদ্বীপে যখের ধন’ ছবিতে। আমি ওই ছবিটার পোস্ট-প্রোডাকশন হেড ছিলাম। বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল কাজটা। ছবির পুরো ব্যাকগ্রাউন্ডটাই আমরা তৈরি করেছিলাম। তবে বাংলা ছবিতে ভিএফএক্সের কাজ বলতে আলাদা কিছু নেই। সব ছবিতেই ভিএফএক্সের দরকার পড়ে। শুধু অ্যনিমেশন ছবির ক্ষেত্রেই এর প্রয়োজন পড়ে, এমন নয়। একটা লোক পাহাড় থেকে ঝাঁপ দিচ্ছে, সেই দৃশ্য হোক বা দুটো লোক সাধারণভাবে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কথা বলছে, এই দুই ক্ষেত্রেই ভিএফএক্স দরকার হতে পারে। অতিমানবীয় কিছু হলেই যে ভিএফএক্স লাগবে এমন নয়। দুটো গাড়ির কলিশন হচ্ছে এটা দেখাতে যেমন ভিএফএক্স লাগবেই। বাংলা আর হিন্দির মধ্যে তফাৎ বলতে এটাই যে এখানে ইন্ডাস্ট্রিটা বেশ ছোট। এখানে পাঁচ-ছ’টা প্রোডাকশন হাউস আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে ভালো স্টুডিও হলো এসভিএফএক্স, সুরিন্দরের নিজস্ব হাউস এটা। ওদিকে মুম্বইয়ে কাজের মাত্রাটা অনেক বড়। ওদের বিশাল ইন্ডাস্ট্রি। বাজেটের টানাটানি থাকে না। একটা ছবি করতে গেলে ভিএফএক্স লাগবেই। একটা সাধারণ দৃশ্য শ্যুট করে পর্দায় দেখাতেও ভিএফএক্সের প্রয়োজন হয়। 

আরও পড়ুন: নব্বইয়ের ‘সত্যান্বেষী’, বাদ পড়লেন ব্যোমকেশ

একটা ছবির শ্যুটিং শেষ হয়ে যাওয়ার পরে পোস্ট-প্রোডাকশনের কাজে কতদিন লাগতে পারে? 

সেটা হাতে কতটা সময় পাব তার ওপর নির্ভর করে। ‘সাগরদ্বীপে যখের ধন’ করতে এক বছর সময় লেগেছিল। এটা মুম্বই হলে আরও বেশি সময় লাগত। এখানে সময় কম পাওয়া যায়। ছোট বলেই বাংলা ইন্ডাস্ট্রির দুটো বড় সমস্যা হলো সময় আর বাজেট। বেশিদিন ধরে খুঁটিয়ে কাজ করতে হলে বাজেট বাড়বেই। আগেকার ছবিতে রিয়াল শুট হতো। তখন ভিএফএক্সের দরকার হতো না। এখন যেহেতু প্রযুক্তি এত উন্নত তাই কাজের সুযোগ বেড়েছে। কঠিন দৃশ্যও সহজ হয়ে যাচ্ছে ভিএফএক্সের দৌলতে। 

শুটিংয়ের সময়েও কি ভিএফএক্স আর্টিস্টকে উপস্থিত থাকতে হয়? 

অবশ্যই। শুটের সময় একজন টিম মেম্বার থাকতেই হবে। দেখতে হয় কীভাবে শট নিলে সেটা দেখতে ভালো লাগবে, বা সেটা পরে ঠিক করা যাবে। তবে দেখতে ভালো লাগাটাই এখানে সবথেকে জরুরি। 

আড়ও পড়ুন: বেহিসেবী জীবনযাপন, আজ স্মৃতির অতলে সৌমিত্র

তার মানে ভিএফএক্সের কাজেও নান্দনিকতা থাকার প্রয়োজন আছে 

নিশ্চয়ই। একজন ভিএফএক্স আর্টিস্টের সবচেয়ে আগে যেটা থাকতে হবে সেটা হলো শিল্পবোধ বা আর্টিস্টিক সেন্স। সবথেকে আগে তাকে বুঝতে হবে কোনটা হলে দেখতে ভালো আর স্বাভাবিক লাগবে। আমাদের কাজের শুরুটাই হয় ড্রইং দিয়ে। মানে কাজটা কেমন হলে দেখতে ভালো লাগবে এই বোধটা তৈরী করতে হয় প্রথমদিন থেকেই। আর ছবির ক্ষেত্রে পরিচালকই শেষ কথা। তিনি যেটা চাইবেন সেটাই হবে। কারণ ছবিটা তাঁর। আমি তাকে সাজেশন দিতে পারি, কিন্তু সিদ্ধান্তটা তিনিই নেবেন। তাই পরিচালককেও ব্যাপারটা বুঝতে হবে। বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে যে খুব ভালো ভিএফএক্স বোঝেন তেমন নয়। তবে কেউ-কেউ আছেন যাঁরা সত্যিই ব্যাপারটা বোঝেন।




আগামীদিনে যেসব ছবি রিলিজ় হতে চলেছে, তার মধ্যে তোমার কাজ কোনগুলোয় থাকছে? আর এখন যেভাবে কাজ করছ, সেটায় তুমি খুশি নাকি ভিএফএক্স নিয়ে নতুন ধরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার ইচ্ছে রয়েছে? 

বেশ কয়েকটা ছবি আসছে, সবগুলোর নাম এখনই বলা যাবে না। তবে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের ‘বনি’ মুক্তি পাবে। ছবিটা তৈরি হয়ে পড়ে আছে অনেকদিন। ‘বনি’তে আমি কাজ করেছি। তোমার দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরে বলতে পারি ভিএফএক্স এমন একটা শিল্প বা প্রযুক্তি যেখানে কেউ বলতে পারবে না যে সব কাজ শিখে ফেলেছি। টু-ডি, থ্রি-ডি এরকম বিভিন্নরকম ভাগ রয়েছে। এখনও অজস্র কাজ শেখা বাকি। এতরকমের কাজ থাকে যে কোনও একজনের পক্ষে সব শিখে দেওয়া মুশকিল। আমি নিজেই এক একটা ছবিতে এক একরকম কাজ করেছি। অ্যানিমেশন, কম্পোজ়েটিং, লাইন প্রোডাকশন, পোস্ট-প্রোডাকশন হেড, এরকম বহু কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকি। আগামীদিনে আশা করব আরও নতুন ধরনের কাজ দর্শকদের উপহার দিতে পারব।



Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Swati

Editor of a popular Bengali web-magazine. Writer, travel freak, nature addict, music lover, foody, crazy about hill stations and a dancer by passion. Burns the midnight oil to pen her prose. Also a poetry enthusiast.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *